The Rich heritage of Thanthania Kalibari and Legacy of RamkrishnaDev dgtl
Rich Heritage of Thanthania Kalibari
কলকাতার সূচনারও অনেক আগে ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, পুজো দিয়েছিলেন পরমহংসদেবও
জনশ্রুতি অনুসারে, ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী ওই সিদ্ধেশ্বরী কালীমূর্তি গড়েন। লোকবসতি সে অর্থে তখন নেই বললেই চলে। অখণ্ড নির্জনতায় মাঝেমধ্যেই শোনা যেত কালী মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি। ঠনঠন... ঠনঠন... সেই থেকেই এলাকার নাম হয়ে যায় ঠনঠনিয়া। লোকমুখে শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের এই নাম ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। জাগ্রত এই মন্দির ভক্তদের কাছে ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি নামে পরিচিত।
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১২
সে অনেক কাল আগের কথা। কলকাতা তখনও গড়ে ওঠেনি। সুতানুটি-গোবিন্দপুরের বেশির ভাগ অঞ্চলই তখন জল-জঙ্গলে ভর্তি। সেই সময়ে এক দিন আচমকা নির্জন বনের ভিতরে শক্তি-সাধনার উদ্দেশ্যে হাজির হলেন এক ভবঘুরে তন্ত্রসাধক। এই শাক্ত ব্রহ্মচারীর নাম ছিল উদয়নারায়ণ। ঘন জঙ্গলের ভিতর নিজের হাতেই মাটি দিয়ে তিনি গড়ে নিলেন এক কালীমূর্তি।
০২১২
১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে শঙ্কর ঘোষ নামে এক ব্যক্তি এখনকার কালী মন্দির ও পুষ্পেশ্বর শিবের আটচালা মন্দির নির্মাণ করে নিত্যপূজার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন। তাঁর বংশধরেরাই এখনও এই মন্দিরের সেবায়েত।
০৩১২
জনশ্রুতি অনুসারে, ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী ওই সিদ্ধেশ্বরী কালীমূর্তি গড়েন। লোকবসতি সে অর্থে তখন নেই বললেই চলে। অখণ্ড নির্জনতায় মাঝেমধ্যেই শোনা যেত কালী মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি। ঠনঠন... ঠনঠন... সেই থেকেই এলাকার নাম হয়ে যায় ঠনঠনিয়া। লোকমুখে শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের এই নাম ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। জাগ্রত এই মন্দির ভক্তদের কাছে ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি নামে পরিচিত।
০৪১২
এখানে মায়ের মূর্তি মাটির। প্রতি বছর তার সংস্কার করা হয়। ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণীর পুজো, কার্তিক অমাবস্যায় আদিকালীর পুজো ও মাঘ মাসে রটন্তী কালীর পুজো হয়।
০৫১২
এই মন্দিরের দেবীমূর্তি ধাতুর নয়; এমনকি পাথরেরও নয়। ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরীর কায়া তৈরি হয় মাটি দিয়েই। প্রতি বছর নতুন করে তৈরি হয় সেই বিগ্রহ। দেবীর গায়ে সোনার বদলে রুপোর গয়নাই বেশি চোখে পড়ে। মা সিদ্ধেশ্বরী চতুর্ভুজা, ঘোর কৃষ্ণবর্ণা। দেবীর বাম দিকের দুই হাতে শোভা পায় খড়্গ আর নরকপাল, ডান দিকের দুই হাতে অভয় আর বরদা মুদ্রা
০৬১২
দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী কালী মন্দিরের মতো উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়ায় মা সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতি। তিনি যখন প্রথম জীবনে ঝামাপুকুরে বাস করতেন, তখন মাঝেমধ্যেই এই মন্দিরে এসে মাকে গান শোনাতেন। পরবর্তীকালে দক্ষিণেশ্বরে থিতু হলেও সময়বিশেষে এই মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে যেতেন মাকে নিবেদন করেন।
০৭১২
কথিত, শিষ্য কেশবচন্দ্র সেন এক বার ঘোরতর অসুখে পড়লে তাঁর আরোগ্য কামনায় মা সিদ্ধেশ্বরীকে চিনি আর ডাব দিয়ে পুজো দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণদেব। তার পরেই সুস্থ হয়ে ওঠেন কেশবচন্দ্র। সেই বিশ্বাসে আজও দেবীকে ডাব-চিনির ভোগ ভক্তেরা।
০৮১২
ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে ৩৬৫ দিনই আমিষ ভোগের রীতি। তবে ফলহারিণী পুজোর দিন আর দীপান্বিতা অমাবস্যায় নিরামিষ ভোগই দেওয়া হয় মাকে। মনস্কামনা পূরণে সেই দিনগুলিতে সকাল থেকেই মন্দিরপ্রাঙ্গণে উপচে পড়ে ভিড়।
০৯১২
কলকাতা শহর জুড়ে অজস্র কালীমন্দির রয়েছে। তবে এই ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি ভক্তদের মধ্যে আজও ভীষণ জনপ্রিয়। রোজই অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয় এখানে।
১০১২
সাধারণত সকাল ৯টা থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে ভক্তদের জন্য। কোনও প্রবেশমূল্য নেই। তবে দর্শনের আদর্শ সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত। ছবি তোলা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ এখানে। নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
১১১২
১৮০৩ সালে গিরিশ ঘোষ এই বিরাটাকায় মন্দিরটি দেবী কালীর উৎসর্গে নির্মাণ করেছিলেন। মন্দির দর্শনের ভাল সময় হল শনিবার এবং মঙ্গলবার। যেতে পারেন অমাবস্যার রাতেও। মাকে নিবেদন করতে পারেন ডাব বা নারকেল। দেবী কালীর মহিমামুখরিত এই মন্দির দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল দীপাবলির রাত।
১২১২
খুব কম ভক্ত আছেন যাঁরা এই জাগ্রত মা কালীকে দর্শন করেননি। প্রতি শনি, মঙ্গলবার ও অমাবস্যার দিনে মন্দিরে খুব ভিড় হয়। তবে যখনই যান, এক অদ্ভুত প্রশান্তি মাখা এই মন্দির জুড়ে।