গাড়িতে সিবিআই দফতরে ঢুকছেন সন্দীপ। ছবি: সারমিন বেগম।
মঙ্গলবার সকালেও ফের সিবিআই দফতরে হাজিরা দিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। রোজকার মতোই ঢোকার মুখে এড়িয়ে গেলেন সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণ। এই নিয়ে পঞ্চম বার কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের তলবে সিজিও কমপ্লেক্সে গেলেন তিনি। গত চার দিন ধরে সন্দীপকে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর কোন দিকে এগোচ্ছে তদন্ত? নানা মহলে ক্রমশ ঘনিয়ে উঠছে জল্পনা।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে সিজিওএ কমপ্লেক্সে ঢুকলেন আরজি করের বিতর্কিত প্রাক্তন অধ্যক্ষ। আজকেও দিনভর চলতে পারে জেরা। প্রসঙ্গত, সোমবার সকালেও সিবিআই দফতরে হাজিরা দিয়েছেন সন্দীপ। বেরিয়েছেন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা নাগাদ। তবে কেন বার বার সন্দীপকে তলব করা হচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল নানা মহলে। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে প্রথম বার তলব করে সিবিআই। সে দিন হাজিরা দেননি সন্দীপ। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁর মক্কেল। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আবেদনও জানিয়েছিলেন। এর পর ওই দিনই রাস্তা থেকে সিবিআইয়ের গাড়িতে ওঠেন সন্দীপ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। তার পর থেকে প্রতি দিনই তাঁকে তলব করা হয়েছে। রবিবারও প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সন্দীপকে। গভীর রাতে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। রবিবার রাতে তাঁর বাড়ির সামনে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে জড়ো হয়েছিলেন বহু মানুষ। সন্দীপের বাড়ি ঘেরাও করে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এর পর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আবার সিবিআই দফতরে পৌঁছন সন্দীপ।
সোমবার সন্দীপকে ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকেরা। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোন তিনি। সিবিআই-এর তদন্তকারীদের সূত্র বলছে, ৯ অগস্ট সকালে আরজি করে মৃত ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পরে তিনি কী কী নির্দেশ দেন এবং পদক্ষেপ করেন— সে প্রসঙ্গে সন্দীপের বয়ানে নানা অসঙ্গতি চোখে পড়েছে। তদন্ত চলাকালীনই কেন সেমিনার কক্ষের লাগোয়া অংশ ভেঙে মেরামতির কাজ শুরু হল— সে বিষয়েও সিবিআইয়ের নাপসন্দ সন্দীপের জবাব। উঠছে কর্তব্যে গাফিলতি এবং ঘটনা ‘আড়াল করার চেষ্টা’র অভিযোগও।
প্রথম থেকেই সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আরজি করে অত্যন্ত ‘প্রভাবশালী’ ছিলেন তিনি। মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে সেখানে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে চিকিৎসক থেকে পড়ুয়া— সকলের অন্যতম দাবি ছিল সন্দীপের অপসারণ কিংবা পদত্যাগ। আন্দোলনের চাপে পড়ে সোমবার, ১২ অগস্ট পদত্যাগ করেন সন্দীপ। স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমাও দেন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দীপকে কলকাতার অন্য একটি সরকারি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেখান থেকেও তাঁর অপসারণের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এর মাঝে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় সন্দীপকে লম্বা ছুটিতে যেতে। সেই থেকে ছুটিতেই ছিলেন সন্দীপ।
হাই কোর্টের নির্দেশেই আরজি করের ঘটনার তদন্তভার কাঁধে তুলে নেয় সিবিআই। ইতিমধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসক, পড়ুয়া এবং একাধিক আধিকারিককে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। রেকর্ড করা হয়েছে প্রত্যেকের বয়ান।