মারিয়ান বাখমায়ার। — ফাইল চিত্র।
মারিয়ান বাখমায়ার। কলকাতার আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর আলোচনায় এই একটি নাম। সেই মা, যিনি তাঁর শিশুকন্যার ধর্ষক ও খুনিকে আদালতে দাঁড়িয়ে গুলি করে খুন করেছিলেন।
সালটা ১৯৮০। পশ্চিম জার্মানির এক ছোট শহর সারস্টেড। সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকত বছর সাতেকের অ্যানা বাখমায়ার। হঠাৎই একদিন নিখোঁজ হয়ে যায় সে। খোঁজাখুঁজির পর মেলে মৃতদেহ। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাকে।
গ্রেফতার হয় ক্লাউস গ্রাবোস্কি নামে এক ব্যক্তি। ৩৫ বছর বয়সি ক্লাউস আগেও একাধিকবার শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন। পেশায় কসাই ক্লাউসকে ধরিয়ে দেন তাঁর স্ত্রীই। জেরার মুখে ক্লাউসের স্বীকারোক্তি ছিল, ‘অ্যানাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাড়িতে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করেছি। তার পর শ্বাসরোধ করে খুন করি।’ ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় জার্মানি।’ শুরু হয় বিচার।
১৯৮১ সালের ৬ মার্চ। শুনানির তৃতীয় দিন। আদালত চত্বরে ভিড়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত। হঠাৎই মৃতা শিশুর মা মারিয়ান এক বন্দুক বের করে ক্লউসকে লক্ষ্য করে সাতটি গুলি করেন। লুটিয়ে প়ড়ে তার কন্যাকে ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত।
আটক করা হয় মারিয়ানকে। জেরায় তিনি জানান, মেয়ের ধর্ষক ও খুনিকে নিকেশের পরিকল্পনা করেই এসেছিলেন তিনি। ঘটনার দিন ০.২২ ক্যালিবারের একটি বেরেটা পিস্তল নিয়ে আদালতে ঢোকেন মারিয়ান। শুনানি শুরু হতেই সুযোগ বুঝে ‘খুনি’ ক্লাউসকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ক্লাউসের। খুনের দায়ে ১৯৮৩ সালে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন অ্যানার মা। ছ’বছরের জেল হয় তাঁর। ছাড়া পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই প্রাণঘাতি ক্যানসার কেড়ে নেয় মারিয়ানের জীবন। কন্যা অ্যানের পাশেই সমাধিস্থ করা হয় মাকে।
সম্প্রতি কলকাতার হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরেই সাড়া পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। সেই মুহূর্তেই আলোচনায় ফিরেছে সুদূর জার্মানির মারিয়ানের কথা, নিজের মেয়েকে বিচার পাইয়ে দিতে যিনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন।