Trump vs Taliban

পাঠানভূমি থেকে ‘ঘর ওয়াপসি’ আমেরিকান অস্ত্রের? ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি পাত্তাই দিচ্ছে না তালিবান

কুর্সিতে বসেই আফগানিস্তানে ফেলে আসা ৭০০ কোটি ডলারের হাতিয়ার ফেরত চাইলেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অস্ত্র ফেরত দিতে নারাজ তালিবান সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:২৩
Share:
০১ ২০
Donald Trump new US President demands to return all American weapons from Afghanistan rejected by Taliban

ফের ‘ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ আফগানিস্তান? সেখানকার তালিবান শাসকদের সঙ্গে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চলেছে ওয়াশিংটন? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিতে না নিতেই মিলল সেই ইঙ্গিত। কারণ, কুর্সিতে বসেই হিন্দুকুশের কোলের দেশটিতে ফেলে আসা হাতিয়ার ফেরত চেয়েছেন তিনি।

০২ ২০
Donald Trump new US President demands to return all American weapons from Afghanistan rejected by Taliban

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন কাবুলের তালিবান নেতৃত্ব। শুধু তা-ই নয়, অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃশত্রুর মোকাবিলায় আরও বেশি হাতিয়ারের প্রয়োজন বলে স্পষ্ট করেছেন তাঁরা। পরিস্থিতি দেখে আমু দরিয়ার তীর থেকে আমেরিকান অস্ত্রের ‘ঘর ওয়াপসি’কে একরকম দিবাস্বপ্ন বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement
০৩ ২০
Donald Trump new US President demands to return all American weapons from Afghanistan rejected by Taliban

চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) ২০ জানুয়ারি প্রথামাফিক ওয়াশিংটন ডিসিতে শপথ নেন ট্রাম্প। এর পর প্রেসিডেন্টের প্রধান কার্যালয় ওভাল অফিসে চলে যান তিনি। সেখানে সই করেন প্রায় ১০০টি আদেশনামায়। এর পরই আফগানিস্তানকে হাতিয়ার ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে একরকম হুমকি দেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।

০৪ ২০

ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘কাবুলকে আমরা প্রতি বছর লক্ষ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য দিচ্ছি। তা হলে আফগানিস্তানকে যাবতীয় আমেরিকান সমরাস্ত্র ফেরত দিতে হবে। নইলে আমরা এই আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দেব।’’ বিশ্লেষকদের দাবি, এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট সেই দেশে ফেলে আসা আমেরিকার ফৌজি কপ্টার, আগ্নেয়াস্ত্র এবং সাঁজোয়া গাড়ি ফেরত চেয়েছেন।

০৫ ২০

অন্য দিকে এই ইস্যুতে মুখে খুলেছেন তালিবান নেতৃত্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাবুলের এক শীর্ষকর্তা বলেছেন, ‘‘আমেরিকাকে অস্ত্র ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ঘরের মাটিতে ইসলামিক স্টেট-খোরাসানের বিরুদ্ধে আমাদের নিরন্তর লড়াই করে যেতে হচ্ছে। এর জন্য আরও বেশি হাতিয়ার এবং গোলা-বারুদ প্রয়োজন।’’

০৬ ২০

তবে দ্বিতীয় বারের ট্রাম্প জমানায় আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিতে ইচ্ছুক আফগান সরকার। বর্তমানে কাবুলের প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। ওয়াশিংটন ওই অর্থের লেনদেন বন্ধ রেখেছে। ফলে হিন্দুকুশের কোলের দেশটির একরকম দেউলিয়া দশা! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ব্যাপারে নরম মনোভাব দেখাক, চাইছেন তালিবানের শীর্ষ নেতৃত্ব।

০৭ ২০

দ্বিতীয়ত, এখনও বিশ্বের বড় সংখ্যক দেশের থেকে কোনও রাজনৈতিক স্বীকৃতি পায়নি তালিবান শাসিত কাবুল। ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রবল সমস্যার মুখে পড়ছেন তাঁরা। বাধা রয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও। চলতি বছরে (পড়ুন ২০২৫) এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতা পেতে ইচ্ছুক তালিবান। আর তাই সরকারি ভাবে ট্রাম্পের মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি কাবুল।

০৮ ২০

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বুকে সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী হামলা চালায় কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা। যাত্রিবাহী বিমান অপহরণ করে নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের (ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার) টুইন টাওয়ারে ধাক্কা মারেন তাঁরা। চোখের নিমেষে ধুলোয় মিশে যায় দুই গগনচুম্বী অট্টালিকা। এ ছাড়া অপহৃত বিমানে হামলা হয়েছিল আমেরিকার সেনা সদর দফতর পেন্টাগনেও।

০৯ ২০

৯/১১-র জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান প্রায় তিন হাজার নিরীহ নাগরিক। তদন্তে জানা যায়, এর নেপথ্যে রয়েছেন আল কায়দার চাঁই ওসামা বিন-লাদেন। আফগানিস্তানের তালিবান সরকার আশ্রয় দিয়েছে তাঁকে। ওয়াশিংটন দ্রুত লাদেনকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু কাবুলের শাসকেরা তা মানতে রাজি না হওয়ায় যুদ্ধ ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ।

১০ ২০

২০০১ সালে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের থেকে ‘স্থায়ী স্বাধীনতা’র লক্ষ্যে লড়াইয়ে নামে আমেরিকার যৌথবাহিনী। পেন্টাগন এর নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন ইন্ডুয়েরিং ফ্রিডম’। প্রাথমিক ভাবে হিন্দুকুশের কোলের দেশটিতে বড় সাফল্য পায় ওয়াশিংটনের সেনা। সেখান থেকে তালিবানকে উৎখাত করে নিজেদের পছন্দের শাসকদের বসাতে সক্ষম হয় আন্টলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’।

১১ ২০

কাবুলে তালিবানিরাজের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই যে লাদেনের খোঁজ আমেরিকান ফৌজ পেয়েছিল, এমনটা নয়। এর জন্য আরও ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। অবশেষে ২০১১ সালে আল কায়দার শীর্ষনেতার হদিস পায় যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’ (সিআইএ)।

১২ ২০

ওই সময়ে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে লুকিয়েছিলেন লাদেন। তাঁকে নিকেশ করতে ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’ শুরু করে আমেরিকান বিশেষ বাহিনী ‘নেভি সিল’। আল কায়দার চাঁইয়ের গুপ্ত ঘাঁটিতে ঢুকে তাঁকে নিকেশ করেন তাঁরা। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক হুসেন ওবামা।

১৩ ২০

লাদেনকে খতম করার পর আরও ১০ বছর আফগানিস্তানের মাটিতে ছিল আমেরিকার সেনা। তাঁদের সঙ্গে লাগাতার গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যায় স্বাধীনচেতা আফগান এবং তালিবানি যোদ্ধারা। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় তালিবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে ওয়াশিংটন। সেখানেই আমু দরিয়ার তীর থেকে ফৌজ সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

১৪ ২০

দোহা শান্তি চুক্তির সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। সেটা ছিল তাঁর প্রথম জমানা। যদিও চুক্তি কার্যকর হয় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে। ২০২১ সালে কাবুল থেকে সমস্ত সেনা সরিয়ে নেয় পেন্টাগন। ওই বছরই দ্বিতীয় বারের জন্য আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরে তালিবান।

১৫ ২০

আমু দরিয়ার তীর থেকে ফৌজ প্রত্যাহারের সময়ে সেখানে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ফেলে আসে আমেরিকা। কুর্সিতে বসেই সেগুলি হস্তগত করে তালিবান। বিষয়টি নিয়ে তখনই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ।

১৬ ২০

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে আসা হাতিয়ার এবং সামরিক সরঞ্জামের বাজারমূল্য প্রায় ৭০০ কোটি ডলার বলে দাবি করেছে ব্লুমবার্গ। তবে এই নিয়ে পেন্টাগনের তরফে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। মূল অস্ত্রের মধ্যে বড় সংখ্যায় রয়েছে অ্যাসল্ট রাইফেল ও তার কার্তুজ, রকেট লঞ্চার, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, গ্রেনেড এবং মর্টার।

১৭ ২০

কাবুলের ক্ষমতা তালিবানের হাতে চলে যাওয়াকে মোটেই ভাল চোখে দেখেনি ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএস-কে) নামের জঙ্গি গোষ্ঠী। ফলে সেনা প্রত্যাহারের সময় থেকে সুযোগ পেলেই তালিবানের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তাঁরা। এই অবস্থায় পাল্টা প্রত্যাঘাত শানাতে হচ্ছে আফগান শাসকদেরও।

১৮ ২০

গত বছরের (২০২৪) ডিসেম্বর থেকে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে তালিবান। কাবুলের শাসকেরা দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসাবে ‘ডুরান্ড লাইন’কে মান্যতা দিতে নারাজ। তাঁদের বিরুদ্ধে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে খোলাখুলি সমর্থনের অভিযোগও তুলেছে ইসলামাবাদ।

১৯ ২০

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালান রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। পাল্টা সীমান্তে একাধিক পোস্ট পাক সেনার থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে টিটিপি। ডুরান্ড লাইনে যোদ্ধার সংখ্যা বাড়িয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। এই পরিস্থিতিতে হিন্দুকুশের কোলের দেশটি আমেরিকাকে হাতিয়ার ফিরিয়ে দেবে, মানতে রাজি নন বিশ্বের তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

২০ ২০

বিশেষজ্ঞদের দাবি, তালিবান অস্ত্র না-ফেরালে কাবুলের উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞার চাপ বাড়াতে পারেন ট্রাম্প। কিন্তু সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে আফগান শাসকদের সম্পর্ক মজবুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালিবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছে নয়াদিল্লিও। আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্টের আমলে হিন্দুকুশের কোলের দেশটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হয়, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement