বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বার বার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে ঝান্ডাহীন আন্দোলনের কথা শোনা গিয়েছে। এ বার তিনি আরও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন একই কথা। বললেন, ‘‘নির্যাতিতার বাবাকে মিছিলে হাঁটতে হবে না। তিনি শুধু এক বার ডাক দিন, যে নবান্ন অভিযান হবে। তার পর বাকিটা আমরা করে নেব।’’
আরজি করের ঘটনায় শাসকদলের ভূমিকার সমালোচনা করে সোমবার শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বলছে, রাত মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়। এই লজ্জা রাখার কোনও জায়গা আছে? যেখানে সংসদে, বিধানসভায় মহিলাদের আসন সংরক্ষণ বিল পাশ হচ্ছে, নারী সশক্তিকরণের কথা বলা হচ্ছে, রাজ্যগুলিতে নারীকেন্দ্রিক জনকল্যাণমূলক নানা কর্মসূচি নিচ্ছে কেন্দ্র, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় মহিলাদের বাড়ির মালিকানা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই রাজ্য সরকার বলছে মহিলাদের রাতে ডিউটি করার প্রয়োজন নেই? মহিলাদের যে রাতে নিরাপত্তা নেই, সেটা সরকার নিজেই বলছে নবান্ন থেকে? এর পরে হয়তো বলবে দিনের বেলাতেও মহিলারা বাড়ি থেকে বেরোবেন না!’’ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সরাসরি আক্রমণ করেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতার মতে, পশ্চিমবঙ্গে নারী স্বাধীনতা, নারী সুরক্ষা, নারীর অধিকার, নারীর নিরাপত্তা— সবই বিপন্ন। এই পরিস্থিতির জন্য বারবার মুখ্যমন্ত্রীকেই দুষছেন তিনি।
সোমবার শুভেন্দু আরও বলেছেন, ‘‘বিজেপি, সিপিএম ইত্যাদি প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই কিছু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই আমরা এই পদক্ষেপ করতে পারছি না। নির্যাতিতার বাবা এক বার নবান্ন অভিযানের ডাক দিন, সবাই বেরোবে। তাঁকে আসতে হবে না, তিনি বয়স্ক মানুষ, শোকাতুর অবস্থায় রয়েছেন। জাতীয় পতাকা নিয়ে এক বার শুধু ডাকটা দিন তিনি। বাকিটা আমরা করে দেব জাতীয় পতাকা নিয়ে।’’
শুভেন্দুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘জাতীয় পতাকা যে কেউ বহন করতে পারে। তবে জাতীয় পতাকা নিয়ে কোনও দুষ্কৃতীদের তোল্লাই দেওয়াটা কোনও সচেতন রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। এই জাতীয় পতাকা নিয়েই তো শুভেন্দুবাবুরা তাঁদের দুষ্কৃতীদের আরজি কর হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। জাতীয় পতাকার এভাবে অবমাননা করা যায় না। শুভেন্দুবাবুরা কি সেটা ভুলে গিয়েছেন? আমি শুভেন্দুকে প্রশ্ন করতে চাই, জাতীয় পতাকার এ ভাবে অবমাননা করার অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে?’’ জয়প্রকাশ আরও বলেছেন, ‘‘নির্যাতিতার বাবা কী করবেন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কে দলমত নির্বিশেষে আন্দোলন করবেন, সেটাও তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু শুভেন্দুর মতো নেতারা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। তাঁরা আন্দোলনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।’’
প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিনে নানান কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। তবে শুভেন্দুকে এই সব কর্মসূচিতে সে ভাবে যোগদান করতে দেখা যায়নি। তিনি বিধানসভা চত্বরেই বিধায়কদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কাল থেকে বিজেপির আরও নানা কর্মসূচি রয়েছে। তার আগেই এ বার দলভিত্তিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে সকলে মিলে রাস্তায় নামার ডাক দিলেন শুভেন্দু।