লন্ডনের এই বাড়িতেই থাকত জেহাদি জন। ছবি: এএফপি।
ভাল ফুটবল খেলত ছেলেটা। ভক্ত ছিল বিটল্সের গানের। কুয়েতি বংশোদ্ভূত মহম্মদ এমওয়াজির সেই সহজ সরল চেহারাটা বেশ মনে আছে লন্ডনের সেন্ট মেরি ম্যাগডালেন চার্চ অব ইংল্যান্ড স্কুলের প্রাক্তনীদের। সেই ছেলেই যে দু’দশক পরে তামাম বিশ্বে ত্রাস তৈরি করতে পারে তা এখনও অবিশ্বাস্য ঠেকছে জেহাদি জনের একদা সহপাঠীদের কাছে। এক সময়ের বন্ধুরা বলছেন, “আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এমওয়াজি আর এই জেহাদি জন এক মানুষ নয়!”
সম্প্রতি ব্রিটেনের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে একই সুরে কথা বলেছেন এমওয়াজির বাবা। তাঁর দাবি, তাঁর ছেলেই যে পরবর্তী কালে জেহাদি জন হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ কারও কাছে নেই। অনেক ভুল তথ্য আর কানাঘুষো চলছে বটে, তবে সে সবের কোনও সত্যতা নেই। তাঁর কথায়, “আমি কুয়েতের বাসিন্দা অনেক আত্মীয়কেও জানিয়েছি, এ সব খবরের কোনও সত্যতা নেই।” সামাজিক সম্মানহানি এবং প্রমাণ ছাড়াই এমওয়াজিকে জেহাদি বলে খবর প্রকাশ করায় আইনি লড়াইয়ে নামছেন তিনি। তাঁর আইনজীবী সালেম আল-হাশআস জানান, যাঁরা কোনও প্রমাণ ছাড়াই এমওয়াজিকে জেহাদি বলে দাবি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করা হবে। যদিও সংবাদমাধ্যম এখনও বলছে, সেই বিটল্স-প্রেমী খুদেরই রূপান্তর হয়েছে জেহাদি জনে। যে অবলীলায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক নিরপরাধ মানুষের মাথা কেটেছে। তদন্তের স্বার্থে যদিও মুখে কুলুপ এঁটেছে বিশ্বের তাবড় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। তবে এ নিয়ে বিশেষ মুখ খুলছেন না লন্ডনের উপকণ্ঠের বাসিন্দা এমওয়াজির পরিবারের লোকজনও। এমওয়াজিকে ‘জেহাদি জন’ বলে দাবি করে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে লন্ডনের বাড়িতে ফিরেছেন এমওয়াজির ভাইবোনেরা। তাঁরা এক দিকে যেমন বলছেন, ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কোন রাস্তা বাছবে তাতে তো পরিবারের দায় নেই! অন্য দিকে এ-ও বলছেন, কোনও প্রমাণ ছাড়াই কাউকে কী ভাবে জেহাদি তকমা দেওয়া যায়?
এককালের সহপাঠীরা অবশ্য বলছেন, স্কুলে থাকতে থাকতেই আমূল পরিবর্তন এসেছিল এমওয়াজির মানসিকতায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, এমওয়াজির এক সহপাঠীর কথায়, “ছ’বছর বয়সে ফুটবল মাঠে মাথায় মারাত্মক চোট পেয়ে ছ’সপ্তাহ শয্যাশায়ী ছিল এমওয়াজি। তার পর থেকেই পাল্টে গিয়েছিল ছেলেটা।” তাঁর দাবি, ওই ঘটনার পর রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না এমওয়াজির। বার বার মারপিটে জড়িয়ে পড়ত। ভিন্ন জাতি বা ধর্মাবলম্বী সহপাঠীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করত। স্কুলের এক প্রাক্তন শিক্ষক জানিয়েছেন, মনোবিদদের পরামর্শ নিয়ে সেরেও উঠেছিল সে। ওই শিক্ষকের কথায়, “খুব সুন্দর ছেলে ছিল এমওয়াজি। নিজের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়াও করেছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করার পর হাতে গোনা কয়েক জনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। তার পরের কথা আর জানে না কেউ। ২০১৪ সালের গোড়ায় পশ্চিম এশিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠীর মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তেই সামনে আসে জেহাদি জনের কথা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, শিরশ্ছেদে সিদ্ধহস্ত এই জেহাদি বিটল্স এর গায়কের নামে নিজের নামকরণ করেছে জন। আরও তিন সহ-জঙ্গির নামকরণ করেছে বিটল্সের তিন গায়কের নামে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জর্জ হ্যারিসনের নামে নামকরণ করা জনের এক সহ-জঙ্গিকে শনাক্তও করেছেন তাঁরা।
এমওয়াজির পরিবার অভিযোগের প্রমাণ চাইলেও গোয়েন্দা সূত্র থেকেও জানা যাচ্ছে, এই দু’জন আসলে একই ব্যক্তি। যে অবলীলায় ‘গিভ পিস আ চান্স’ বা ‘অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড উইল লিভ অ্যাজ ওয়ান...’ এর মতো গান গেয়ে জনপ্রিয় হওয়া জন লেননের নামে পরিচিত হয়েই মাথা কাটেছে সাধারণ মানুষের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy