Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫
Health

অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে জিতবেই দক্ষিণ আফ্রিকা

দু’বছর আগে খরা-বিধ্বস্ত কেপটাউনকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখেছিলাম নিজের চোখে।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

সৌভিক সামন্ত
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ০২:৩১
Share: Save:

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম কোভিড-সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৫ মার্চ, দেশের দক্ষিণ-পূর্বে কোয়াজুলু নাতাল প্রদেশে। ইটালি থেকে এসেছিলেন সেই ব্যক্তি। এর পরে বিদেশ থেকে আসা মানুষজনের মাধ্যমে এই সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়। প্রথম থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার এই সংক্রমণের মোকাবিলাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। এই দেশে যক্ষ্মা এবং এইচআইভি রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে কোভিড-১৯ এখানে অতিমারির আকার নিতে দেরি করবে না, তা সরকার জানত। তার উপরে এই দেশের চিকিৎসা-পরিকাঠামো আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোর মতো উন্নত নয়। ফলে এক সঙ্গে বহু রোগীকে পরিষেবা দেওয়াও সম্ভব হবে না। তাই বিন্দুমাত্র দেরি না-করে প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাপোসা ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেন।

যখন লকডাউন ঘোষণা করা হল, তখন আমার স্ত্রী ৩৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। এই বিদেশ-বিভুঁইতে এই পরিস্থিতিতে কী পরিষেবা পাব, সেই ভেবে আমরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি। যে হাসপাতালে আমাদের সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা, সেখানে আমরা মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দেখেছিলাম, হাসপাতালে ঢোকার মুখেই কোভিড-১৯ এর বেশ বড় আকারের পরীক্ষাকেন্দ্র ও ইমার্জেন্সি বিভাগ খোলা হয়েছে। বলতে বাধা নেই, সেই সময়ে রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল ও ডাক্তারদের কক্ষগুলির স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার পদ্ধতি দেখে যথেষ্ট আস্বস্ত হই। প্রতিবার হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে প্রত্যেকের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে, সাম্প্রতিক অতীতের ভ্রমণ ইতিহাস, কোভিড-১৯-এর উপসর্গ আছে কিনা, ঠিকানা, ফোন নম্বর সব কিছু জেনে নিয়ে ও নথিবদ্ধ করে তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হত। হাসপাতালের ভেতরে প্রতি মুহূর্তে মেঝে, দেওয়াল, রেলিং, লিফট ইত্যাদি পরিষ্কার করার কাজ চলছে। প্রতি ১০ মিটার অন্তর দেওয়ালে বা লিফটের পাশে একটা করে স্পর্শবিহীন স্যানিটাইজারের পাত্র রাখা আছে। ডাক্তারের কাছ থেকে নির্দেশ ছিল নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগে হাসপাতালে পৌঁছে পার্কিং লটে নিজের গাড়ির মধ্যেই অপেক্ষা করতে হবে। ডাক্তার ফোন করে ডাকলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা ডাক্তারের কক্ষে ঢুকতে হবে, কোথাও অহেতুক অপেক্ষা বা ঘোরাঘুরি করা যাবে না। অবশ্যই মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি রোগী দেখার পরে ডাক্তার নিজের পিপিই বাতিল করতেন এবং পুরো কক্ষটি জীবাণু-মুক্ত করতেন।

লকডাউনের মধ্যেই ২৮ এপ্রিল আমার স্ত্রীর প্রসবের দিন ঠিক হল। প্রসূতিবিভাগে কড়াকড়ি ছিল অনেক বেশি। সন্তানের জন্মের সময়ে আমি হাসপাতালে থাকার অনুমতি পেলেও পরের তিন দিন স্ত্রী সদ্যোজাতকে নিয়ে একাই হাসপাতালে কাটিয়েছে। কেউ, এমনকি আমিও, দেখা করার অনুমতি পাইনি। তবে স্ত্রীর অভিজ্ঞতায়, হাসপাতাল কর্মীদের কাছ থেকে সে যে সহায়তা পেয়েছে, তাতে তার একবারের জন্যও মনে হয়নি যে একটা সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে সে একা আছে। গত তিন মাস ধরে স্ত্রী ও ছেলেকে ডাক্তার দেখানো, টিকাকরণ ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে বা অন্যান্য স্বাস্থকেন্দ্রে নিয়মিত যাতায়াত করছি এবং সর্বত্রই একই রকম পরিষেবা ও স্বাস্থবিধির পালন লক্ষ্য করছি। আফ্রিকার একটি দেশে এ রকম আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য-পরিষেবা পাব, সত্যিই আশা করিনি।

তবে গোষ্ঠী সংক্রমণ অব্যাহত। আজই দেখলাম, সংক্রমণের নিরিখে পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর একটা কারণ অবশ্যই যে, এখন এই দেশে শীতকাল চলছে এবং শীতেই এখানে বৃষ্টি হয়। এই আবহাওয়ায় ফ্লু-জাতীয় ব্যাধি বেড়ে যায়। ফলে বুঝতে পারছি আগামী বেশ কয়েক মাস এই ভাইরাসের সাঙ্গেই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে।

দু’বছর আগে খরা-বিধ্বস্ত কেপটাউনকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখেছিলাম নিজের চোখে। আশা করি, সেই লড়াকু মনোভাব বজায় রেখে এই আজকের অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধেও যুদ্ধে জয়লাভ করবে এই দেশ।

লেখক কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক

অন্য বিষয়গুলি:

Health coronavirus South Africa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy