India and Afghan Taliban first high level talks may create huge pressure upon Pakistan dgtl
India-Taliban Meeting
ভারতের এক চালেই কিস্তিমাত! নয়াদিল্লির ‘তালিবান-নীতি’তে ভয়ে কাঁটা পাকিস্তান
তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করছে ভারত। এতে আতঙ্ক বাড়ছে পাকিস্তানের।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
‘কাবুলিওয়ালাদের দেশে’র সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করছে ভারত। পাল্টা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারও। কাবুল ও নয়াদিল্লির এই মাখামাখিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না চিরশত্রু পাকিস্তান। অন্য দিকে একে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা ওপড়ানো’ নীতি বলেই উল্লেখ করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০২১৮
চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) ৮ জানুয়ারি, তালিবানের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দুবাইতে মিলিত হন তাঁরা। সেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
০৩১৮
২০২১ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালিবান। তার পর থেকে এত দিন পর্যন্ত ভারতের তরফে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা কাবুলের শাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এই প্রথম সচিব পর্যায়ের কোনও আধিকারিক তালিবান-মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন। নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্য বলে মনে করছেন দুনিয়ার তাবড় বিশ্লেষকেরা।
০৪১৮
তালিবানের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী মুত্তাকির সঙ্গে মিস্রীর বৈঠকের পর বিবৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লি। সেখানে বলা হয়েছে, এটা শুধুমাত্র একটি সৌজন্যমূলক বৈঠক ছিল না। আফগানিস্তানের মাটি থেকে ভারতের ‘নিরাপত্তা বিঘ্নিত’ হওয়ার কতটা আশঙ্কা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত-বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি যাতে সেখানে মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেই বিষয়ে তালিবানের আশ্বাস মিলেছে।
০৫১৮
অন্য দিকে এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে কাবুলের বিদেশ মন্ত্রকও। তালিবানের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আজকের দিনের আফগানিস্তান কারওর জন্যই হুমকি নয়।’’ সূত্রের খবর, ইরানের চাবাহার বন্দর দিয়ে কাবুলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালানোর ব্যাপারেও দুবাইয়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এতে আফগানিস্তানের কাছে ইসলামাবাদের গুরুত্ব অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৬১৮
হিন্দুকুশ পর্বতের কোলের দেশ আফগানিস্তান সম্পূর্ণ ভাবে জমি দিয়ে ঘেরা। এর উত্তরের অংশটি মধ্য এশিয়া নামে পরিচিত। এই অবস্থান কাবুলের আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের প্রধান প্রতিবদ্ধকতা। শুধু তা-ই নয়, দেশটির দক্ষিণ পূর্ব অংশে পাকিস্তান থাকায় আফগানদের সঙ্গে কোনও দিনই সে ভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি ভারত। মিস্রী-মুত্তাকি বৈঠকের পর সেই জট কিছুটা কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
০৭১৮
প্রসঙ্গত, ইরানের দক্ষিণে চাবাহার বন্দরটি তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। বর্তমানে মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে পণ্য পরিবহণ করতে এর ব্যাপক ব্যবহার করছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার সঙ্গে ৭,২০০ মিটার লম্বা আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোরের সঙ্গেও এই বন্দরটি সংযুক্ত রয়েছে। তালিবান এই সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারলে আফগানিস্তানের আর্থিক অবস্থার যে অনেকটাই উন্নতি হবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
০৮১৮
দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের উপর রয়েছে আমেরিকার একাধিক নিষেধাজ্ঞা। তবে চাবাহারের ক্ষেত্রে ভারতকে পুরো মাত্রায় ছাড় দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন। চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি কুর্সিতে বসার আগে তালিবানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর ব্যবহার নিয়ে নয়াদিল্লির আলোচনাকে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০৯১৮
তালিবান দ্বিতীয় বারের জন্য আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার আগে সেখানে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে জড়িয়ে ছিল ভারত। সূত্রের খবর, সেগুলি দ্রুত নয়াদিল্লি শুরু করুক বলে চাইছে কাবুল। দুবাইয়ের বৈঠকে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র মারফত খবর মিলেছে।
১০১৮
তালিবান শাসনে ‘কাবুলিওয়ালার দেশে’ মানবিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করেনি নয়াদিল্লি। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছে কাবুল। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আমু দরিয়ার তীরে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম, ৩০০ টন ওষুধ, ভূমিকম্পে ২৭ টন ত্রাণ, ৪০ হাজার লিটার কীটনাশক, ১০ কোটি পোলিও ডোজ, ১৫ লক্ষ কোভিড ভ্যাকসিন এবং ৫০০ ইউনিট শীতবস্ত্র পাঠিয়েছে ভারত। এ ছাড়া ড্রাগের নেশা ছা়ড়ানোর ওষুধ এবং স্টেশনারি সামগ্রীও ‘কাবুলিওয়ালার দেশে’ পাঠিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।
১১১৮
আরও দু’টি ক্ষেত্রে আফগানিস্তান এবং ভারতের কাছাকাছি আসার খবর পাওয়া গিয়েছে। গত দু’বছর ধরে আফগান শরণার্থীদের দেশছাড়া করা শুরু করেছে পাক সরকার। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য নয়াদিল্লি যাবতীয় সাহায্য করবে বলে খবর প্রকাশ্যে এসেছে। বিষয়টি সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
১২১৮
তালিবান সরকার মহিলা ক্রিকেটের ঘোর বিরোধী। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া-সহ বেশ কয়েকটি দেশ এ ব্যাপারে আফগান সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে। শুধু তা-ই নয়, আফগানিস্তানের পুরুষ দলের সঙ্গেও ম্যাচ খেলতে অস্বীকার করেছে তারা। ফলে ক্রিকেট বিশ্বে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়েছে ‘কাবুলিওয়ালার দেশ’। এই অবস্থায় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে নয়াদিল্লি।
১৩১৮
গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) নভেম্বরে তালিবানের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক। এর কিছু দিনের মধ্যে পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার মুখে পড়ে প্রাণ হারান বেশ কয়েক জন পাক সেনা। গোটা ঘটনার নেপথ্যে নয়াদিল্লির হাত রয়েছে বলে সুর চড়ায় ইসলামাবাদ।
১৪১৮
পাক ফৌজিদের উপর টিটিপির হামলার পরই কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের নিরাপদ আশ্রয়ে টিটিপি রয়েছে বলে অভিযোগ করে ইসলামাবাদ। গত ডিসেম্বরে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির গুপ্ত ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে বিমানহানা চালায় পাক বায়ুসেনা।
১৫১৮
পাকিস্তানের এয়ারস্ট্রাইকে পাকতিকা প্রদেশে প্রাণ হারান অন্তত ৪৬ জন। তাঁদের অধিকাংশেই নারী এবং শিশু বলে জানিয়ে পাল্টা প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দেয় তালিবান। দু’-তিন দিনের মধ্যে ১৫ হাজার যোদ্ধাকে আন্তর্জাতিক সীমান্তে পাঠায় কাবুল।
১৬১৮
এ বছরের জানুয়ারির গোড়ায় পাক সীমান্তের বেশ কয়েকটি সেনাচৌকি দখলের ছবি প্রকাশ করে টিটিপি। ইসালামাবাদের অবশ্য দাবি, ওই চৌকিগুলি আগেই খালি করা হয়েছিল।
১৭১৮
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত নির্ধারিত রয়েছে ডুরান্ড লাইনের মাধ্যমে। এই সীমান্ত রেখাকে কোন দিনই মান্যতা দেয়নি তালিবান। বর্তমানে সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
১৮১৮
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই পরিস্থিতিতে তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হলে আখেরে লাভ হবে ভারতের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগানদের ব্যবহার করার সুযোগ পাবে নয়াদিল্লি। আর দেশের পশ্চিম প্রান্তে সীমান্ত সংঘাতে ব্যস্ত থাকলে কাশ্মীর বা পঞ্জাবে উল্লেখযোগ্য হারে কমবে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের আনাগোনা।