ভাটিকান সিটিতেও এ বার ‘গ্লাসনস্ত’!
‘গ্লাসনস্তে’র জোরালো হাওয়া বইতে শুরু করেছে রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যে!
গত তিন সপ্তাহের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর রোমান ক্যাথলিক বিশপরা সর্বসম্মতিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনও ডিভোর্সি ক্যাথলিক গির্জায় ঢুকতে চাইলে, তাঁকে আর ‘বিশেষ অনুমতি’ নিতে হবে না। পথ আটকানো হবে না সেই ক্যাথলিকেরও, ডিভোর্সের আইনি নথিপত্র হাতে না থাকা সত্ত্বেও যিনি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছেন। এর অর্থ, ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিকের এক বারই বিয়ে করা উচিত আর সেই দাম্পত্যকে আজীবন টেনে নিয়ে যাওয়া উচিত বলে আর মনে করছেন না ক্যাথলিক বিশপরা।
‘গ্লাসনস্ত’ নয়?
বিশপরা সর্বসম্মতিতে এ-ও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাঁরা সম লিঙ্গে বিয়ে করেছেন, তাঁদেরও যথাযথ মর্যাদা দেওয়া উচিত। এর অর্থ, ক্যাথলিকদের সম লিঙ্গে বিয়ে বা ‘গে ম্যারেজ’কেও এ বার মান্যতা দিলেন বিশপরা।
‘গ্লাসনস্ত’ কি কম কিছু?
তবে সম লিঙ্গে বিবাহিত ক্যাথলিকরা এ বার গির্জায় ঢুকতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে কোনও সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি ক্যাথলিক বিশপরা।
ক্যাথলিক বিশপদের ওই সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে নতুন ডকুমেন্ট বানানো হয়েছে। আর, সুপারিশ হিসাবে সেই ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের কাছে।
কিছু দিন ধরে ইঙ্গিত মিলছে, পোপ ফ্রান্সিসের জমানায় রক্ষণশীলতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে ক্যাথলিক গির্জাগুলি। ‘নতুন হাওয়া’য় ক্যাথলিক গির্জাগুলির অনেক পুরনো নিষেধাজ্ঞাই উঠে যাচ্ছে। শিথিল হচ্ছে কড়া নিয়মকানুনের বজ্রকঠিন ফাঁস। ক্যাথলিক বিশপদের নতুন ডকুমেন্ট সেই হাওয়াকে আরও জোরালো করে তুলল।
ইতিমধ্যেই পোপ ফ্রান্সিসকে ক্যাথলিকদের একাংশ ‘ভ্যাটিকানের গর্বাচভ’ বলতে শুরু করেছেন। আশির দশকের শেষাশেষি যখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মিখাইল গর্বাচভ, তখনই মস্কোয় রোমান ক্যাথলিক গির্জার দরজা আমজনতার জন্য খুলতে শুরু করেছিল। রুশ ‘গ্লাসনস্তে’র সেই শুরু।
ঘটনাচক্রে, প্রায় সাড়ে তিন দশক পর ভ্যাটিকানেও ‘গ্লাসনস্তে’র হাওয়া বইতে শুরু করল সেই রোমান ক্যাথলিক বিশপদের দৌলতেই!
তবে ভাটিকান ভাল করেই জানে, ক্যাথলিকরা অনেক বেশি স্পর্শকাতর। তাই বিশপদের নতুন ডকুমেন্টে ‘পরিবর্তন’-এর সুপারিশগুলিও খুব সতর্কতার সঙ্গে করা হয়েছে। শব্দ চয়ন করা হয়েছে মেপে মেপে। যাতে রক্ষণশীল ও উদারপন্থী, এই দুই মতাদর্শের ক্যাথলিকরাই সন্তুষ্ট থাকেন। যেন দু’পক্ষই ভাবেন, জয়টা আদতে তাঁদেরই হয়েছে।
আদ্যোপান্ত ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ ওই ডকুমেন্টে সম্ভবত, সেই জন্যই সম লিঙ্গে বিবাহিত ক্যাথলিকদের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হলেও, তাঁদের গির্জায় ঢোকার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে, স্পষ্ট করে সে কথাও কিন্তু, লেখা হয়নি। এতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। কারণ, রক্ষণশীলরা সম লিঙ্গে বিবাহিত ক্যাথলিকদের মর্যাদা দিতে চান না। আর উদারপন্থীরা চান, সম লিঙ্গে বিবাহিত ক্যাথলিকদের ওপর থেকে উঠে যাক গির্জায় ঢোকার নিষেধাজ্ঞা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy