Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
US Presidential Election 2020

বাইডেনের বাজিমাত, নাকি আবার ট্রাম্পেট

গত কাল ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা পার করতেই ভোট দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল আমেরিকায়।

প্রতিদ্বন্দ্বী: ভোট দেখতে ডেলাওয়্যার ছাড়লেন জো বাইডেনও (বাঁ দিকে)। প্রচার-অফিসে হাজির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে। নিজেদের ভোটটা অবশ্য আগাম দিয়ে রেখেছেন দু’জনেই (ডান দিকে)। এএফপি

প্রতিদ্বন্দ্বী: ভোট দেখতে ডেলাওয়্যার ছাড়লেন জো বাইডেনও (বাঁ দিকে)। প্রচার-অফিসে হাজির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে। নিজেদের ভোটটা অবশ্য আগাম দিয়ে রেখেছেন দু’জনেই (ডান দিকে)। এএফপি

সুপ্রতিম সান্যাল
ওয়াশিংটন ডিসি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪০
Share: Save:

উজ্জ্বল রোদ, তাপমাত্রা মনোরম দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মৃদুমন্দ হাওয়া। পৃথিবীর প্রাচীনতম আধুনিক গণতন্ত্রের রাজধানীর ভোটদাতারা সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে পড়েছেন ভোটের লাইনে।

গত কাল ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা পার করতেই ভোট দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল আমেরিকায়। হ্যাঁ, এ দেশে মাঝরাতেই ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যেতে পারেন ভোটদাতারা। তবে সারা দেশে নয়, শুধু উত্তর-পূর্বের ছোট্ট প্রদেশ নিউ হ্যামশায়ারেই এ রকম উদ্ভট সময় থেকে ভোট দেওয়া যায়। বাকি সব প্রদেশে ভোট সাধারণত শুরু হল ভোর ছ’টায়। চলবে সেই রাত ন’টা (ভারতীয় সময় বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা) পর্যন্ত। সারা দিন ধরে বুথে-বুথে ভিড় জমাবেন নানা বয়সের, নানা লিঙ্গের, নানা বর্ণের, নানা ধর্মের মানুষ।

না, ভুল বললাম। এ বার তো ভিড় জমানোর উপায় নেই। তাণ্ডব চালাচ্ছে অতিমারি। যাঁরা সকাল-সকাল ভোট দিয়ে এসেছেন, তাঁদের কাছে শুনলাম, দূরত্ব-বিধি মোটামুটি মানা হচ্ছে প্রতিটি বুথে। মাস্কও আছে ভোটদাতাদের মুখে। বেশির ভাগ প্রদেশেই ভোটাদাতাদের মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো কিছু দিন আগে পর্যন্ত বলেছেন, মাস্ক পরার কোনও দরকার নেই। অনেক জায়গায় শুনলাম দূরত্ব-বিধি ঠিক মতো মানা হয়নি। টিভিতে দেখলাম, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু মুখে মাস্ক নেই।

আরও পড়ুন: ভোটগ্রহণ শুরু আমেরিকায়, হোয়াইট হাউসের দৌড়ে ট্রাম্প-বাইডেন

আমাদের এই ওয়াশিংটন ডিসির ছবিটা আলাদা, তার একটা কারণ হয়তো, এটি ‘ব্লু স্টেট’, অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি। এবং ডেমোক্র্যাটেরা ট্রাম্প-পন্থী রিপাবলিকানদের মতো ‘অসমসাহসী’ নন। তাঁরা ‘করোনা’ নামক বিপদ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই এখানকার ভোটদাতারা ভিড় এবং সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হয় ইতিমধ্যেই দলে দলে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। এই আর্লি ভোটিং এ বারের নির্বাচন ইতিমধ্যেই নজির গড়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি-সহ বিভিন্ন প্রদেশে প্রায় অর্ধেক ভোটদাতা ইতিমধ্যেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন। আর যাঁরা দিনের দিনই ভোট দেবেন বলে মনস্থ করেছেন, তাঁরা মুখে মাস্ক এঁটে, কোভিড-বিধি মেনেই পোলিং স্টেশনে যাচ্ছেন।

ডিসি-র মতোই আর একটি ‘ব্লু স্টেট’ নিউ জার্সি। অসংখ্য ভারতীয়ের বাস সেখানে, যাঁদের মধ্যে আবার একটা বড় অংশ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত।
তাঁদের কাছ থেকেই শুনলাম, গত কয়েক দিন ধরে যে দৃশ্য সেখানে চোখে পড়ছে তা যথেষ্ট অপরিচিত। এবং অবশ্যই উদ্বেগজনক। হুড-খোলা জিপে ট্রাম্পের ছবি দেওযা পতাকা হাতে কট্টর দক্ষিণপন্থীরা বেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শহরতলির বিভিন্ন এলাকা। যার ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, ভোটের দিন বা তার পরে অশান্তি হবে না তো!

আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন দিতে চূড়ান্ত পর্যালোচনা শুরু করল ব্রিটেন

এই আশঙ্কা থেকেই গত কাল থেকে বিভিন্ন বিপণি ও রেস্তরাঁর কাচের জানলা-দরজা ঢেকে দেওয়া হয়েছে কাঠের শক্তপোক্ত বোর্ড দিয়ে। যাতে তাণ্ডবকারীরা কাচ ভেঙে ভিতরে ঢুকে লুঠপাঠ চালাতে না-পারে। ডিসি, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, এমনকি ক্যালিফর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে বিখ্যাত রোডিয়ো ড্রাইভ— সর্বত্রই ছবিটা এক। খেয়াল করবেন, প্রত্যেকটিই কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ভোটের ফল আশানরূপ না-হলে ট্রাম্পপন্থীরা ছেড়ে কথা বলবেন না, এই আশঙ্কা থেকেই কি এ রকম অভূতপূর্প সুরক্ষার ব্যবস্থা করছেন দোকান-মালিকেরা?

আরও শুনলাম, নিউ জার্সিতে কিছু লোক সামরিক ছদ্মবেশ নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গার্ডেন স্টেট পার্কওয়ে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল। কোথাও আবার এক দলের সমর্থকেরা এসউইভি ও পিক-আপ ট্রাকে এসে অন্য দলের সমর্থকদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, এমনও শোনা গেল। ছাড় পাচ্ছে না সাধারণ মধ্যবিত্তের পাড়াও। সেখানে প্রার্থীর ছবি দেওয়া পোস্টার গুলি চালিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। অশান্তি হতে পারে এই আঁচ করেই সম্ভবত আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি রাখা বন্ধ করে রেখেছিল ওয়ালমার্ট-সহ বিভিন্ন বিপণি। তবে গত পরশু থেকে ফের বন্দুক বিক্রি শুরু করে দিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কের পরিবেশ, যাতে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও। শেষ লগ্নের প্রচারসভাতেও তিনি উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েই ভোট টানার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।

অতিমারি নিয়ে ভয় তো ছিলই। তার পরে এই আতঙ্কের আবহাওয়া যেন এ বারের ভোট-মঙ্গলবারের ছবিটাই পাল্টে দিল। বুশ-গোর, বুশ-কেরি, ওবামা-ম্যাককেন, ওবামা-রোমনি, এমনকি ২০১৬-র ট্রাম্প-ক্লিন্টন, এর আগে যে ক’টা নির্বাচনী টক্কর দেখেছি, সেখানে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিশেষে ভোটদাতাদের মধ্যে একটা উৎফুল্ল ভাব লক্ষ করেছি। সবাই যথেষ্ট উৎসাহ নিয়ে, খুশি মনে ভোট দিতে বেরিয়েছেন। এ বার ছবিটা পুরোদস্তুর আলাদা।

ডিসিতে ভোট চলবে রাত ৮টা (ভারতীয় সময় বুধবার সকাল সাড়ে ৬টা) পর্যন্ত। আশা করছি, আমার মতো যে নাগরিকেরা দায়িত্ব পালন করতে ভোট-কেন্দ্রের দিকে পা বাড়াবেন, তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না। তার পরে অপেক্ষা জানার, আমেরিকার মানুষ ইতিহাস গড়ল, না কি আবার ‘আমেরিকাকে মহান বানানো’র কাজেই মন দিল!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy