US top secret military documents is allegedly leaked to China by two active and one former soldiers dgtl
US Military Secrets Stolen
শুল্কযুদ্ধের মধ্যেই মার্কিন ফৌজের দফতরে সিঁদ! ট্রাম্পের নাকের নীচ থেকে গোপন তথ্য চুরি করল চিন
শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাফালাফির মধ্যেই এ বার আমেরিকার সেনাবাহিনীর ‘অতি গোপনীয়’ তথ্য চুরি করল বেজিং। এই ঘটনায় চিনা বংশোদ্ভূত দু’জন সৈনিক এবং একজন প্রাক্তন সেনাকর্মীকে গ্রেফতার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুঁদে গোয়েন্দারা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫ ১৪:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গালে বিরাশি শিক্কার চিনা থাপ্পড়! শুল্কযুদ্ধে তাঁর ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে সিঁদ কাটল ড্রাগন। শুধু তা-ই নয়, আমেরিকান ফৌজের ‘অতি গোপনীয়’ তথ্য ইতিমধ্যেই নাকি হাতিয়ে নিয়েছে বেজিং। ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ায় দুই দেশের বিবাদ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
০২২১
চলতি বছরের ৬ মার্চ মার্কিন ফৌজের ‘অতি গোপনীয়’ তথ্য চুরি এবং তা চিনে পাচারের অভিযোগে দু’জন সৈনিককে গ্রেফতার করে আমেরিকার গোয়েন্দারা। একই অভিযোগে গরাদের পিছনে ঠাঁই হয়েছে এক সাবেক সৈনিকেরও। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস’-এ ধৃতদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা এবং গুপ্তচরবৃত্তির জন্য একাধিক ধারায় দায়ের হয়েছে মামলা।
০৩২১
ধৃত দুই মার্কিন সৈনিকের নাম জ়িয়ান ঝাও এবং লি তিয়ান। ওয়াশিংটন রাজ্যের লুইস-ম্যাককর্ড যুগ্ম ঘাঁটিতে মোতায়েন ছিলেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে ১৭ নম্বর ফিল্ড আর্টিলারি ব্রিগেডে ব্যাটারি সাপ্লাইয়ের দায়িত্ব ছিল সার্জেন্ট পদমর্যাদার ঝাওয়ের উপর। অন্য দিকে স্বাস্থ্য সেবার প্রশাসক হিসাবে কাজ করতেন ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট লি।
০৪২১
এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া তৃতীয় ব্যক্তির নাম রুওয়ু ডুয়ান। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। অভিযুক্ত ব্যক্তি আমেরিকার ওরেগন রাজ্যের হিলস্বরোর বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। তথ্য পাচারের ক্ষেত্রে ডুয়ান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ধৃতরা প্রত্যেকেই চিনা বংশোদ্ভূত।
০৫২১
পশ্চিম ওয়াশিংটনের মার্কিন জেলা আদালতে দায়ের করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, অভিযুক্তদের মাধ্যমে ‘গোপনীয়’ এবং ‘অতি গোপনীয়’, দু’ধরনের তথ্য হাতিয়েছে চিনা গুপ্তচর সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম সম্পর্কিত সংবেদনশীল মার্কিন সামরিক তথ্য। এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং সামরিক যানবাহন সংক্রান্ত একাধিক গোপন নথিও ড্রাগনকে পাচার করা হয়েছে।
০৬২১
মার্কিন জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, চিনা গুপ্তচর সংস্থাকে মোট ২০টি হার্ড ড্রাইভ সরবরাহ করেন সার্জেন্ট ঝাও। এর অধিকাংশের উপরে ‘গোপন’ শব্দটি লেখা ছিল। ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত তথ্য বিক্রির ছক ছিল তাঁর। এ ছাড়া মোটা টাকার বিনিময়ে এনক্রিপ্ট করা আমেরিকার সামরিক কম্পিউটার পাচারের পরিকল্পনাও করছিলেন তিনি।
০৭২১
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, চিনের চাংচুন থেকে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বেরের মধ্যে বেজিংয়ের গুপ্তচরেরা সংবেদনশীল মার্কিন সামরিক তথ্য পাচারের জন্য সার্জেন্ট ঝাওকে অন্তত ১৫ হাজার ডলার দিয়েছিলেন।
০৮২১
অন্য দিকে ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট লি এবং সাবেক সৈনিক ডুয়ানের বিরুদ্ধে রয়েছে ‘স্ট্রাইকার’ সাঁজোয়া গাড়ি সংক্রান্ত তথ্য চুরি এবং তা পাচারের অভিযোগ। চিনা গুপ্তচরদের কাছে সেগুলি বিক্রির আগে সংবেদনশীল যাবতীয় তথ্যের ছবি তুলে তা গুগ্ল ড্রাইভে সংরক্ষণ করেন তাঁরা। গুগ্ল ড্রাইভের লিঙ্কও বেজিঙে পাঠানো হয়েছে বলে অনুমান মার্কিন গোয়েন্দাদের।
০৯২১
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ২০১৭ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর চিনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন ডুয়ান। তিনি সব সময়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন। তথ্য বিক্রির জন্য বেজিঙের থেকে কয়েক হাজার ডলার নিতেন এই সাবেক সৈনিক। ‘পেপল’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন চলত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
১০২১
মার্কিন জেলা আদালতে অভিযুক্তদের কঠোর সাজার দাবি জানিয়েছেন আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা জে বন্ডি। এজলাসে তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করাই ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। চিনের মতো ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষের শক্তিবৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছেন তাঁরা।’’
১১২১
মার্কিন ফৌজের সংবেদনশীল তথ্য চুরি এবং মোটা টাকার বিনিময়ে তা চিনকে বিক্রির বিষয়টি প্রথমে আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগ ‘ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’ বা এফবিআইয়ের নজরে আসে। ফলে কালবিলম্ব না করে তিন জনকে গ্রেফতার করে তারা। ট্রাম্পের দ্বিতীয় জমানায় এই গোয়েন্দা বিভাগ চালানোর দায়িত্ব রয়েছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কাশ পটেলের কাঁধে।
১২২১
সূত্রের খবর, এর আগেও চিনা এজেন্টদের নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনকে সতর্ক করেছিল এফবিআই। কাশ জানিয়েছেন, বিদেশি গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে তাঁর দফতর। ফলে আগামী দিনে বেজিঙের একগুচ্ছ এজেন্ট আমেরিকায় ধরা পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৩২১
অন্য দিকে আমেরিকার সেনাবাহিনী এবং লুইস-ম্যাককর্ড যুগ্ম ঘাঁটির ফৌজি জেনারেলরা তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই ঘাঁটির যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাহিনীর একাধিক শীর্ষকর্তার এফবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৪২১
মার্কিন বাহিনীতে বেজিঙের এজেন্ট ঢুকে পড়ার অভিযোগ আজকের নয়। সম্প্রতি সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ১২ জন চিনা নাগরিককে অভিযুক্ত করে আমেরিকার আদালত। সামরিক তথ্য হাতাতে ফৌজি কম্পিউটার হ্যাক করেন তাঁরা। ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দুই নৌসৈনিকের বিরুদ্ধে সংবেদনশীল সামরিক তথ্য বিদেশে পাচারের অভিযোগ ওঠে। ফলে তাঁদেরও গ্রেফতার করেন আমেরিকার গোয়েন্দারা।
১৫২১
ধৃত মার্কিন নৌসৈনিকদের মধ্যে এক জনের বিরুদ্ধে জাপানে আমেরিকার রাডার সিস্টেমের নীল নকশা পাঠানোর অভিযোগ ছিল। গত বছরের এপ্রিল মাসে সমাজমাধ্যমে ফৌজি তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে ন্যাশনাল গার্ডসে কর্মরত এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে চলছে দেশদ্রোহিতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার মোকদ্দমা।
১৬২১
এ বছরের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন ট্রাম্প। কুর্সিতে বসেই চিনা পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে আমেরিকার বেশ কিছু খাদ্যপণ্য এবং বস্ত্রের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে বেজিং। এর জেরে দু’দেশের বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
১৭২১
গত ৪ মার্চ মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে এ বছরের ২ এপ্রিল থেকে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) চালু হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর এ-হেন আগ্রাসী মনোভাবে রীতিমতো ফুঁসে ওঠে ড্রাগনভূমির শি জিনপিং সরকার।
১৮২১
এই শুল্কযুদ্ধের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মাদকদ্রব্য ফেন্টানাইলকে ঘিরে বিতর্ক। ওয়াশিংটনের বক্তব্য, সীমান্ত দিয়ে ফেন্টানাইল পাচার বন্ধ করতেই শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেজিংকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চিনে তৈরি বহু অবৈধ ওষুধ মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করলেও বেজিং কোনও পদক্ষেপ করেনি। ড্রাগন যত দিন না এই বিষয়ে ব্যবস্থা না নেবে, তত দিন পর্যন্ত চালু থাকবে অতিরিক্ত শুল্ক।
১৯২১
যদিও ফেন্টানাইল প্রসঙ্গে ট্রাম্পের চিনের উপর দায় চাপানোয় আপত্তি রয়েছে বেজিংয়ের। চিনা বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট করে দিয়েছে নিজেদের অবস্থান। তাদের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের ফেন্টানাইল সংক্রান্ত সমস্যার জন্য দায়ী আমেরিকাই। এর দায় অন্য কোনও দেশের উপর চাপানো যায় না বলে জানিয়েছে ড্রাগন সরকার।
২০২১
এই আবহে ওয়াশিংটনের চিনা দূতাবাসের করা একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ট্রাম্প ‘পারস্পরিক শুল্ক’ চালু করার দিনক্ষণ ঘোষণা করতেই ওই পোস্ট করেন তাঁরা। হুমকির সুরে চিনা দূতাবাস লিখেছে, “আমেরিকা যদি যুদ্ধই চায়, তা শুল্কযুদ্ধ হোক, বা বাণিজ্য যুদ্ধ কিংবা অন্য কোনও যুদ্ধ হোক, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে তৈরি আছি।”
২১২১
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমরাও তৈরি রয়েছি। যারা শান্তি চায়, তাদের যুদ্ধের জন্যও তৈরি থাকতে হয়।” তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই চিনা এজেন্টদের গ্রেফতারি দুই মহাশক্তিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।