গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাত পোহালেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। জল্পনা শুরু হয়েছে জয়-পরাজয় নিয়ে। অধিকাংশ সমীক্ষায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে। এতটাই এগিয়ে যে ২০০৮ সালের পর আর কোনও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এতটা শক্তিশালী দেখায়নি। সমীক্ষাকে পাত্তা না দিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এখনও হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন, তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। ভোটের ফল তাঁর বিপক্ষে গেলে আইনি রাস্তাতেও হাঁটার জন্য আগেভাগে আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আবার ওই সব সমীক্ষাকেও ‘ভুয়ো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের এই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট পরবর্তী দাঙ্গার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।
এর পাশাপাশি জোর কদমে চলছে জোর কদমে প্রচার। রবিবারও মিচিগান, আইওয়া, নর্থ ক্যারোলিনার মতো ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’গুলিতে নির্বাচনী সভা করেছেন ট্রাম্প। জর্জিয়া ও ফ্লোরিডাতেও প্রচারের কর্মসূচি রয়েছে। প্রতিপক্ষ বাইডেন রয়েছেন পেনসিলভেনিয়াতে। যে পিটসবার্গ থেকে গত বছরের এপ্রিলে প্রচার শুরু করেছিলেন, সেখানেও জনসংযোগের কর্মসূচি রয়েছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর। রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট দু’পক্ষেরই ভারতীয় বংশোদ্ভূতরাও জয় নির্ধারক বড় রাজ্যগুলিতে জোর প্রচার চালিয়েছেন রবিবার।
জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে রয়টার্সের করা সমীক্ষায় বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা ৫১ শতাংশ, ট্রাম্পের ৪২ শতাংশ।‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সমীক্ষাতেও উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনার মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে এগিয়ে থাকছেন বাইডেন। অন্যান্য সমীক্ষাতেও পাল্লা ভারী বাইডেনেরই। যদিও পপুলার ভোট তথা জাতীয় নির্বাচনের ভিত্তিতে করা এই সব সমীক্ষা সব সময় শেষ কথা বলে না। এই সমস্ত সমীক্ষায় এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে হেরে গিয়েছেন, এমন নজির অনেক রয়েছে আমেরিকায়। কিন্তু এবার বাইডেন এতটাই এগিয়ে রয়েছেন যে অশনি সঙ্কেত দেখছে রিপাবলিকান শিবির।
আরও পড়ুন: করোনার বিরুদ্ধে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ মুম্বইয়ে? আভাস দিল সমীক্ষা
তা বলে ফাঁকা ময়দান ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন ট্রাম্প। ‘অঘটন’-এর আশায় যেমন রয়েছেন ট্রাম্প, তেমনই হেরে গেলে পরবর্তী পদক্ষেপও আগেই ছকে রেখেছেন ট্রাম্প। আমেরিকায় ভোটদানের দু’টি পদ্ধতি রয়েছে— ইমেল ভোটিং এবং সরাসরি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া। করোনা সংক্রমণের জন্য এ বছর এই ই-মেল ( আর্লি ভোটিং) ভোটিং বেশি হয়েছে। এই ইমেল-এ দেওয়া ভোটের গণনা হবে পরে। আগে থেকেই এই ভোটিংয়ে কারচুপির আশঙ্কা করে এবং গণনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ‘‘এটা ভয়ঙ্কর পদ্ধতি যে ভোটের পর ব্যালট সংগ্রহ করা হবে। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।’’ অর্থাৎ ট্রাম্প যে সহজে হার মেনে নেবেন না, তা তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: অভিনন্দন বর্তমান নিয়ে মন্তব্য, বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের মামলা করছে পাকিস্তান
আমেরিকায় গণনা হয় ভোটের দিনই। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে মধ্যরাত বা পরের দিন পর্যন্ত হয়ে যায়। এই পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কে জিতল, আমেরিকানরা সাধারণত ভোটের দিন রাতেই সেটা জেনে যান। কারণ সংবাদ মাধ্যমগুলি গণনার আংশিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ফল ঘোষণা করতে থাকে। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ফলাফল নয়।’’
ভোটপর্বে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু ঘিরে আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল জাতি হিংসা। ভোটের ফল ঘোষণার পরে বা আগে থেকেই ফের তেমন সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তার কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে আমেরিকানদের আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সংখ্যাবৃদ্ধি থেকে। আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হলে পুলিশ সেই ব্যক্তির যাবতীয় পূর্ব ইতিহাস (ব্যাকগ্রাউন্ড চেক) খতিয়ে দেখে তার পর ছাড়পত্র দেয়। এফবিআই-এর হিসেবে এ বছরের মার্চ এবং জুনে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এই ব্যাকগ্রাউন্ট চেক। ভোট পরবর্তী অস্থিরতার ইঙ্গিত দিয়েছেন ফেসবুক কর্তা জাকারবার্গও।
২০১৬ সালের হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৬, হিলারির ঝুলিতে পড়েছিল ২৩২ ভোট। অথচ মোট ভোটের ৪৮.২ শতাংশ পেয়ছিলেন হিলারি, ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৬.১ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত এ বারও পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে ঘোরাতে পারেন কিনা ট্রাম্প, তার উত্তর জানা যাবে আমেরিকার সময় ৩ নভেম্বর রাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy