Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে রিপোর্ট

আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে জমতে থাকা মৃতদেহের স্তূপ। এক বা দু’হাজার নয়, নিহতের সংখ্যাটা এক লক্ষেরও বেশি। শ্রীলঙ্কায় ছাব্বিশ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে কী ভয়ঙ্কর ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, আজ তা একটি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

জেনিভায় রিপোর্ট পেশ করছেন জেইদ রাদ আল-হুসেন। ছবি: এএফপি।

জেনিভায় রিপোর্ট পেশ করছেন জেইদ রাদ আল-হুসেন। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
রাষ্ট্রপুঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৩
Share: Save:

আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে জমতে থাকা মৃতদেহের স্তূপ। এক বা দু’হাজার নয়, নিহতের সংখ্যাটা এক লক্ষেরও বেশি। শ্রীলঙ্কায় ছাব্বিশ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে কী ভয়ঙ্কর ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, আজ তা একটি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত কমিশনার জেইদ রাদ আল-হুসেন আজ জেনিভায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করে ২৭০ পাতার ওই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। রিপোর্টে মূলত জোর দেওয়া হয়েছে ২০০২ থেকে ২০১১ সাল, এই সময়সীমার ওপর। রাষ্ট্রপুঞ্জের সুপারিশ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য একটি মিশ্র আদালত গঠন করুক শ্রীলঙ্কা। যাতে বিচারক, আইনজীবী ও তদন্তকারী হিসেবে থাকবেন বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও তদন্তকারীরা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি না থাকলে এত বড় মাপের যুদ্ধপরাধের সুবিচার হওয়া সম্ভব নয়।’’

তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সুপারিশ মানতে নারাজ শ্রীলঙ্কা। এক বিবৃতি দিয়ে আজ শ্রীলঙ্কা সরকার জানিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের এই রিপোর্ট মেনে নতুন ভাবে তদন্ত শুরু করা হবে। এবং যুদ্ধপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে বিশেষ আদালতে তার বিচারও হবে। তবে সেই আদালতে কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। সরকারি বিবৃতি পেশ করার সময় ক্যাবিনেটের মুখপাত্র রজিত সেনারত্নে বলেন, ‘‘তদন্তে যদি দেখা যায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবার গুরুতর যুদ্ধপরাধে জড়িত, তাঁদেরও কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। বিশেষ আদালতে তাঁদেরও বিচার করা হবে।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৬ বছর ধরে গৃহযুদ্ধের নামে শ্রীলঙ্কায় যে ভাবে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাতে সরাসরি একে গণহত্যা না বললেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত নিদর্শন হিসেবে দেখা যেতেই পারে। বিশেষত এলটিটিই নিধনের শেষ কয়েকটা বছর সব চেয়ে উদ্বেগের বলেও জানাচ্ছে সেই রিপোর্ট। যে সব বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হল, l ২০০২ থেকে ২০১১ সাল, এই সময়সীমায় ৪০ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু l কয়েক দশক ধরে হাজার হাজার মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা l গৃহযুদ্ধের শেষের দিকে এলটিটিই জঙ্গি ও সাধারণ মানুষের ওপর অমানবিক, নির্মম অত্যাচার l এলটিটিই জঙ্গি সন্দেহে আটকদের ওপর ভয়ঙ্কর যৌন নির্যাতন; শুধু মহিলা বন্দিই নয়, পুরুষ বন্দিদের ওপরেও লাগাতার যৌন নির্যাতন, ইত্যাদি। শুধু সামরিক বাহিনীই নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে আঙুল তোলা হয়েছে এলটিটিই-র দিকেও। বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে সারা দেশে শারীরিক নিগ্রহ, অত্যাচার, ধর্ষণের মতো ঘটনায় এলটিটিই-ও জড়িত ছিল। জঙ্গি সংগঠনটির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, নারী ও শিশুদের জোর করে ধরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত তারা।

আন্তর্জাতিক আদালতে শ্রীলঙ্কার যুদ্ধপরাধের বিচার চেয়ে আজই তামিলনাড়ু বিধানসভায় এক প্রস্তাব পেশ হয়। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে মোদী সরকারকে অনুরোধ করা হবে তারা যাতে বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখে। এ দিকে গতকালই তিন দিনের সফরে ভারতে এসেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতি করার লক্ষ্যে একটি রূপরেখা সেই বৈঠকে স্থির হয়েছে। ফলে ঘরে-বাইরে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখাই এখন মোদী সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE