জল, স্থল কিংবা মহাশূন্য— কাজ যেখানে যেমনই হোক না কেন, ‘ওভারটাইম’ বা অতিরিক্ত কাজের জন্য বেশি পারিশ্রমিক দেওয়ার নিয়ম নেই। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এমন নিয়মের জন্য মূল বেতনের বাইরে হাতখরচ বাবদ দিনপ্রতি মাত্র ৩৪৭ টাকা (ভারতীয় মুদ্রায়) পেতে পারেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী নভশ্চর বুচ উইলমোর।
আট দিনের সফরে মহাকাশে গিয়ে ন’মাসের জন্য সেখানে আটকে পড়েন সুনীতারা। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ঝুঁকি এবং নানা প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই জনমানসে ধারণা তৈরি হয় যে, এই পরিশ্রম, অধ্যাবসায়ের জন্য নাসার তরফে সুনীতাদের মোটা অঙ্কের টাকা কিংবা উপঢৌকন দেওয়া হবে। তবে তেমন সম্ভাবনায় জল ঢেলেছেন নাসার অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশচারী কোডি কোলম্যান।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির নিয়মের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, “নাসা তাদের মহাকাশচারীদের কাজকে পৃথিবীর অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো করেই দেখে থাকে। তাই যতই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে, একাকী তাঁদের কাজ করতে হোক না কেন, আলাদা কোনও অর্থ তাঁদের দেওয়া হয় না।” কোডি জানিয়েছেন, আকস্মিক দুর্ঘটনার জন্য অভিযান দীর্ঘায়িত হলে নভশ্চরদের বেতনের পাশাপাশি একটি দৈনিক ভাতা দেওয়া হয়, যার পরিমাণ খুবই নগণ্য, দিনপ্রতি মাত্র চার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৪৭ টাকা)। উদাহরণ হিসাবে কোডি জানিয়েছেন, ২০১০-১১ সালে ১৫৯ দিনের এক অভিযানে তিনি বেতন ছাড়াও প্রায় ৬৩৬ ডলার (৫৫ হাজার টাকারও বেশি) অতিরিক্ত ভাতা পেয়েছিলেন। সেই হিসাবে দেখতে গেলে ২৮৭ দিনেরও বেশি সময় মহাকাশে কাটানোর জন্য অতিরিক্ত মাত্র ১১৪৮ ডলার (১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি) পাবেন সুনীতারা।
সাধারণত কত বেতন পান মার্কিন মহাকাশচারীরা? সুনীতা এবং বুচ মার্কিন বেতনক্রমের জিএস-১৫ বেতন স্তরে রয়েছেন, যা জিএস সিস্টেমের নিরিখে সরকারি কর্মীদের জন্য সর্বোচ্চ স্তর। এই স্তরের কর্মীদের বার্ষিক বেতন সর্বাধিক ১৬২,৬৭২ ডলার পর্যন্ত হতে পারে, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। ফলে প্রায় ১০ মাস মহাকাশে থাকার জন্য সুনীতারা পেতে পারেন ১২২,০০৪ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
সুনীতাদের ফেরাতে রবিবার সকালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছোয় স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। নাসার বিবৃতি বলছে, স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে আমেরিকার ফ্লরিডার উপকূলে নামতে পারেন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। ভারতের ঘড়িতে তখন বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে। তবে পরিস্থিতি বাদ সাধলে ফের বদলে যেতে পারে সুনীতাদের ফেরার দিনক্ষণ।