Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আলানকে মনে করাচ্ছে বাবাকে জড়ানো অ্যাঞ্জি 

কাদা মাখা জলে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন বাবা-মেয়ে। চার দিকে জংলা ঘাস। মাথা দু’টো জড়ানো কালো টি-শার্টে। সম্ভবত সেটা দিয়ে বাবাই ওই ভাবে আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করে ছিলেন ২৩ মাসের শিশুকন্যাকে।

মর্মান্তিক: অস্কার আলবার্তো মার্তিনেজ়কে জড়িয়ে ধরে রয়েছে তাঁর ২৩ মাসের শিশুকন্যা অ্যাঞ্জি (ইনসেটে অ্যাঞ্জির সঙ্গে আলবার্তো)। মেক্সিকো সীমান্তের কাছাকাছি রিয়ো গ্রান্দে নদীর কাছে থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছে দেহ দু’টি। রয়টার্স

মর্মান্তিক: অস্কার আলবার্তো মার্তিনেজ়কে জড়িয়ে ধরে রয়েছে তাঁর ২৩ মাসের শিশুকন্যা অ্যাঞ্জি (ইনসেটে অ্যাঞ্জির সঙ্গে আলবার্তো)। মেক্সিকো সীমান্তের কাছাকাছি রিয়ো গ্রান্দে নদীর কাছে থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছে দেহ দু’টি। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০৩:৫৫
Share: Save:

চার বছর আগেকার একটা ছবি মনে করাচ্ছে এখনকার ছবিটা।

কাদা মাখা জলে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন বাবা-মেয়ে। চার দিকে জংলা ঘাস। মাথা দু’টো জড়ানো কালো টি-শার্টে। সম্ভবত সেটা দিয়ে বাবাই ওই ভাবে আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করে ছিলেন ২৩ মাসের শিশুকন্যাকে। লাল প্যান্ট আর কালো জুতো পরা মেয়েটির ছোট্ট ডান হাত বাবার কাঁধে জড়ানো। মৃত্যু তাদের আলাদা করতে পারেনি। মেক্সিকো সীমান্তে রিয়ো গ্রান্দে নদীর কাছে সোমবার উদ্ধার হয় দেহ দু’টি।

পিছিয়ে যেতে হবে চার বছর। ২০১৫ সালের তুরস্কের সৈকত। বালির উপর উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে তিন বছরের সিরীয় শিশু, আলান কুর্দি। আশ্রয়ের খোঁজে এসে জীবন থেমে গিয়েছিল তারও। সেই ছবি ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় নেতারা অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিলেন।

ভাবনা চলছে। বদলায়নি বাস্তব। তার প্রমাণ দিল বাবা অস্কার আলবার্তো মার্তিনেজ়কে জড়িয়ে থাকা ২৩ মাসের অ্যাঞ্জি ভালেরিয়া এম। আলানের মুখটুকু দেখা গিয়েছিল। অ্যাঞ্জিদের মুখ দেখা যাচ্ছে না ছবিতে। এল সালভাডর থেকে আমেরিকায় আশ্রয় খুঁজতে এসেছিলেন। সীমান্ত পেরোতে গিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে জীবন। বেঁচে আছেন অ্যাঞ্জির মা, তানিয়া। গত রবিবার থেকে মাটামোরোসের শরণার্থী শিবিরেই ছিল পরিবারটি। মেক্সিকোর এক দৈনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রিয়ো গ্রান্দে নদী পেরোতে গিয়ে অস্কার স্ত্রীকেও আনার চেষ্টা করছিলেন। অ্যাঞ্জি বাবাকে সাঁতরে যেতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে। বাবা তাকে জড়িয়ে ধরেন, কিন্তু হঠাৎ ধেয়ে আসা স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাঁদের। জুলিয়া লু দুক নামে যে চিত্রগ্রাহক ছবিটি তুলেছেন, তিনিই গোটা ঘটনাটি লিখেছেন মেক্সিকোর দৈনিকে। চোখের সামনে স্বামী-মেয়েকে তলিয়ে যেতে দেখেন তানিয়া। মেক্সিকোয় দু’মাস ছিলেন। ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের জ্বালাধরা গরম। শেষে আর সহ্য করতে না পেরে নদী পেরোনোর সিদ্ধান্ত নেন অস্কার। তাঁরা মেক্সিকোয় ‘মানবিক ভিসা’ পেয়েছিলেন বলে জানান তানিয়া। শুল্ক এবং সীমান্ত সুরক্ষা অফিসারেরা জানিয়েছেন, মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর বন্দরের প্রবেশপথগুলিতে শরণার্থীদের বিপুল ভিড় হচ্ছে বহু দিন ধরেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন অভিবাসন নীতি যত কড়া হচ্ছে, মরিয়া শরণার্থীরা তত ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক জায়গা দিয়ে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করছেন। ১৪ জুন ৬ বছরের ভারতীয় শিশুকন্যা সীমান্ত পেরোতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে প্রাণ হারিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তে মৃত্যু আরও বাড়বে। আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েও সাড়া পাচ্ছেন না বহু মানুষ। তাই যে করে হোক, ঢুকে পড়তে চাইছেন তাঁরা।

অস্কার আর তার মেয়ের দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে এল সালভাডর প্রশাসন এবং সেখানকার বিদেশমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা হিল নাগরিকদের বলেছেন, ‘‘দেশে থাকুন। সরকারের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করুন। দেশের আর্থিক অবস্থা খারাপ ঠিকই, কিন্তু ছেড়ে যাবেন না। এ ভাবে জীবনের ঝুঁকি নেবেন না।’’ এল সালভাডরের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্টের নায়িব বুকেলে জানিয়েছেন, অস্কারের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে প্রশাসন।

শরণার্থী বাবা-মেয়ের মৃত্যুতে মার্কিন রাজনীতিতে শোরগোল শুরু হয়েছে। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস টুইটে বলেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর হিংসা থেকে বাঁচতে এই সব পরিবার পালিয়ে আসছে। তারা যখন আসছে, কী হচ্ছে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, যেখান থেকে এসেছো, ফিরে যাও। এটা অমানবিক। শিশুরা মারা যাচ্ছে। এই সব ঘটনায় আমাদের মানসিক তিক্ততা বাড়ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy