ছবি: সংগৃহীত
‘গ্রেট বেরিয়ার রিফ’ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে বিরোধ বেধেছে অস্ট্রেলিয়ার। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল ক্ষেত্র এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের অন্যতম ঐতিহ্যস্থল। কিন্তু সেই তালিকায় এ বার ‘গ্রেট বেরিয়ার রিফ’-কে ‘বিপন্ন’ চিহ্নিত করতে চায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এর পিছনে চিনের রাজনীতি রয়েছে, এমন ইঙ্গিতও করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশমন্ত্রী।
আগামী মাসে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৪তম অধিবেশন বসবে চিনে। তার আগে সোমবার এ বিষয়ে একটি খসড়া রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই সংস্থা। তাদের যুক্তি, অস্ট্রেলিয়া কার্বন গ্যাস নিঃসরণ কমানো, উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে এই প্রবাল ক্ষেত্রকে রক্ষার বিষয়ে আদৌ যত্নশীল নয়। ব্লিচিংয়ের ফলে বিশাল এলাকা সবুজ হারিয়ে বিবর্ণ, সাদা হয়ে গিয়েছে। এটা বেশি হয়েছে ২০১৬-১৭ সালের ‘এল নিনো’-র সময়। সমুদ্রে জলের উষ্ণতা বাড়লে প্রবালের গা থেকে শৈবাল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, মৃত্যু হয় সেগুলির। রিফ তার বর্ণময়তা হারিয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।
অস্ট্রলিয়ার ক্ষেত্রে প্রবাল-অর্থনীতি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ২৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রবাল ক্ষেত্রের উপরে সে দেশের কসমেটিক, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও ওষুধ তৈরির শিল্প নানা ভাবে নির্ভরশীল। এই রিফের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বহু মানুষ আসেন ফি বছর। যার সুবাদে কোভিড অতিমারির আগে পর্যন্ত বছরে ৪৮০ কোটি ডলার রাজস্ব আসত অস্ট্রেলিয়ার তহবিলে। যে কারণে সম্প্রতি জি-৭ বৈঠকেও ২০৫০-এর মধ্যে নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চর্চা হলেও এ বিষয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া এড়িয়ে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি শুধু বলেছেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ট্রেলিয়া ওই লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়। তবে দেশের পণ্য-নির্ভর অর্থনীতির ক্ষতি না-করে। কত দিনে এটা করা যাবে এটা যেমন প্রশ্ন, তেমনই কী ভাবে সেটা করা সম্ভব, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।”
মরিসন সরকার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ওই প্রস্তাবের যথা সম্ভব বিরোধিতা করছে। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশমন্ত্রী সাসেন লাই বলেছেন, “বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল ক্ষেত্রটি বাঁচাতে আমরা যে ইতিমধ্যেই কয়েকশো কোটি ডলার খরচ করেছি, সেটা ভাবা হল না! যারা তা করছে না, সেই সব দেশের প্রতি এটা খুব খারাপ বার্তা। রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তারা এখন উল্টো সুরে গাইছেন।”
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটিতে রয়েছে ১২টি দেশ। বর্তমান চিন এর চেয়ারম্যান। করোনাভাইরাসের উৎস-সন্ধান, মাংস রফতানি, কূটনীতি নানা প্রসঙ্গে গত বছর থেকে অস্ট্রেলিয়া ও চিনের সম্পর্ক বেশ তিক্ত। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশমন্ত্রী সাসেনের দাবি, “যথাযথ প্রক্রিয়াটিকে বিপথে চালিত করা হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবে এর পিছনে রাজনীতি রয়েছে।” সাসেনের ইঙ্গিত চিনের দিকে। তাঁর বক্তব্য, “বিশ্বে প্রাকৃতিক সম্পদের মোট ৮৩টি ঐতিহ্যস্থল রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে তার সব ক’টিরই ক্ষতি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু অস্ট্রেলিয়াকে আলাদা করে বেছে নেওয়াটা আদৌ সঙ্গত নয়।”
পরিবেশ সংগঠনগুলি অবশ্য দুষছে অস্ট্রেলিয়ার সরকারকেই। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ডের নেচার অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র বিষয়ক প্রধান রিচার্ড লেকের কথায়, “ইউনেস্কোর সুপারিশ খুব পরিষ্কার। জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্য বিপদ থেকে আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদটি রক্ষায় আদৌ যথেষ্ট সক্রিয় নয় অস্ট্রেলিয়া।” পরিবেশ সংগঠন ‘ক্লাইমেট কাউন্সিল’-এর বক্তব্য, অস্ট্রেলিয়া সরকার রিফ সুরক্ষায় তৎপর না-হয়ে এর অবক্ষয়ের পক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছে। এটা লজ্জার।” ইতিপূর্বে অস্ট্রেলিয়া সরকারের নিজস্ব রিপোর্টেও ‘গ্রেট বেরিয়ার রিফ’-এর অবস্থা ‘খুব খারাপ’ বলে উল্লেখ
করা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy