শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ছ’মাস পরে ফের তপ্ত হয়েছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। ধানমন্ডির ঘটনার পর বর্তমানে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গাজীপুর। হামলা, পাল্টা হামলার উত্তাপের মাঝে চলেছে গুলিও। গাজীপুরের উত্তেজনার আবহে বাংলাদেশ পুলিশ ‘ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে পুলিশি অভিযানে এখনও পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তাঁরা হাসিনার আওয়ামী লীগের সমর্থক। গাজীপুরের পুলিশ সুপারের কথায়, “আটক ব্যক্তিরা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন।”
ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ির সিংহভাগ ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলে একদল জনতা। পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভের আঁচ। গোটা দেশ জুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে আসতে থাকে। এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের গাজীপুরে পাল্টা হামলার মুখে পড়ে বিক্ষুব্ধ জনতাও। সেখানে হাসিনা সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে একদল জনতা চড়াও হলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। স্থানীয় কিছু মানুষ হামলাকারীদের কয়েক জনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় স্থানান্তর করা হয় ঢাকায়।
গাজীপুরের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব। চলে বিক্ষোভ কর্মসূচি। গাজীপুরে প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে চড়াও হওয়ার অভিযোগটি অবশ্য অস্বীকার করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘প্রথম আলো’-র রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাতে ডাকাতির খবর পেয়ে তা ঠেকাতে গিয়েছিলেন। ওই সময়েই তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে। এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সক্রিয় সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। তাতে নতুন করে তপ্ত হয় পরিস্থিতি। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় দায়িত্বে গাফিলতির কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার। বিক্ষোভ সামলাতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হয়।
আরও পড়ুন:
গাজীপুরে এই উত্তেজনার আবহেই শনিবার বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে জানানো হয় ‘ডেভিল হান্ট’ নামে একটি বিশেষ অভিযান শুরু করছে যৌথ বাহিনী। এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তারাই গ্রেফতার হবে।”
গাজীপুরের অশান্তির পর থেকে সেখানে বহু বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছে। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ির আশপাশের ৪০-৫০টি বাড়ির বেশির ভাগই তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।