Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Pompeii

ছাই-লাভা সরাতেই নতুন ছবি পম্পেইয়ের দেওয়ালে

দক্ষিণ-পশ্চিম ইটালির বন্দর নগরী পম্পেই। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেই শহর ও পার্শ্ববর্তী হারকিউলেনিয়াম-সহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃত এলাকা।

পম্পেইয়ের দেওয়ালে খুঁজে পাওয়া ফ্রেস্কো। ছবি: সমাজমাধ্যম।

পম্পেইয়ের দেওয়ালে খুঁজে পাওয়া ফ্রেস্কো। ছবি: সমাজমাধ্যম।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:২৪
Share: Save:

১৯৪৫ বছর ধরে জমাটবদ্ধ লাভা ও পুরু ছাইয়ের তলায় চাপা পড়েছিল উঁচু দেওয়ালের ঘরটি। সেই আস্তরণ সরাতেই বেরিয়ে এল ঝলমলে ফ্রেস্কো, দু’হাজার বছর আগের কোনও নাম না জানা শিল্পীদের অপূর্ব কীর্তি।

দক্ষিণ-পশ্চিম ইটালির বন্দর নগরী পম্পেই। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সেই শহর ও পার্শ্ববর্তী হারকিউলেনিয়াম-সহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃত এলাকা। ১৯ শতকের গোড়ার দিক থেকে এখানে দফায় দফায় খননকার্য চলেছে। ছাই ও জমে যাওয়া লাভা সরিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছে গোটা একটা শহর। বর্তমানে বছরে ২৫ লক্ষ পর্যটক পম্পেইয়ের ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসেন।

দু’শো বছরের বেশি সময় ধরে পম্পেই ও তার আশপাশের এলাকায় খনন চললেও এখনও পর্যন্ত এখানকার এক তৃতীয়াংশ এলাকা ছাই ও লাভার তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। সে রকমই একটি এলাকায় খননকাজে চালিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে বেরিয়ে এসেছে একটি বিশাল ঘর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, এটি একটি ব্যাঙ্কোয়েট রুম বা পালা-পার্বণে ব্যবহৃত ভোজ-কামরা। বিশাল এই ঘরটির মেঝে ১০ লক্ষেরও বেশি ছোট ছোট সাদা টাইলের টুকরো দিয়ে মোজ়াইক করা। দেওয়ালগুলির রং কালো। আর সেই কালো রংয়ের উপরে কমলা, সবুজ, নীল ও হলুদের মতো উজ্জ্বল রং ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে গ্রিক প্রত্নকথার নানা দৃশ্য।

ছাই-লাভার পলেস্তারা সরিয়ে এখনও পর্যন্ত দু’টি ফ্রেস্কো বার করেছেন প্রত্নবিদেরা। একটি ছবিতে সূর্য ও সঙ্গীতের গ্রিক দেবতা অ্যাপোলো রাজকুমারী কাসান্দ্রাকে প্রেম নিবেদন করছেন। অ্যাপোলোর হাতে বীণা। আর একটি ছবিতে রয়েছেন ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস ও স্পার্টার রানি হেলেন। হেলেনের পাশে সম্ভবত তাঁর পরিচারিকা। প্যারিসের পায়ের কাছে একটি বাঘ বসে রয়েছে। কথিত, প্যারিসের প্রেমে পড়ে স্বামী-সংসার ত্যাগ করে ট্রয় পাড়ি দিয়েছিলেন হেলেন। হেলেন-প্যারিসের এই কীর্তির পরেই ট্রয় আক্রমণ করেন গ্রিক রাজারা, দশ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের পরে ট্রয়ের পতন হয়। গ্রিক কবি হোমার তাঁর দু’টি মহাকাব্যে সেই যুদ্ধ এবং তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনাক্রমকে অমর করে গিয়েছেন।

হোমারের প্রায় ন’শো বছর পরে একটি রোমান নগরীর দেওয়ালে গ্রিক প্রত্নকথা-সম্পর্কিত এই ছবি ইতিহাসবিদদের পম্পেই সম্পর্কে নতুন করে ভাবাচ্ছে। পম্পেই পুরাতাত্ত্বিক এলাকার দায়িত্বে থাকা গবেষক গাব্রিয়েল জ়ুকট্রিগেলের কথায়, ‘‘পম্পেইকে এত দিন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ভেবে এসেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার আমাদের এই প্রাচীন নগরীর অন্য একটি সত্তা তুলে ধরল। পম্পেই যে রোমান সাম্রাজ্যের শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থানও ছিল, সে বিষয়ে আমাদের আর সন্দেহ নেই।’’

এখন ফ্রেস্কোগুলি সংরক্ষণ করাই পুরাতাত্ত্বিকদের প্রধান লক্ষ্য। সে জন্য আঠার মিশ্রণ করে দেওয়ালে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপাতত সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিনিধি ছাড়া ঘরে কারওকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে সাধারণ পর্যটকদের জন্য ঘরটি খুলে দিতে চান গাব্রিয়েল। তাঁর কথায়, ‘‘কালো রঙের দেওয়ালে এই ঝলমলে ছবিগুলি দেখে সবাই অভিভূত হবেন। আমরা চাই ভাললাগা ও চমকের সেই অনুভুতি থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Pompeii Roman empire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy