Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
US

আমেরিকায় আশ্রয় নিতে গিয়ে জুটল কাঁদানে গ্যাস, ছেলেমেয়েদের নিয়ে অসহায় মা

শরণার্থী প্রবেশ রুখতে শুরু থেকেই কঠোর মনোভাব বজায় রেখেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। যে কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মেক্সিকো সীমান্তের টিউয়ানা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

ছেলেমেয়ে নিয়ে দৌড় মারিয়ার। ছবি: রয়টার্স।

ছেলেমেয়ে নিয়ে দৌড় মারিয়ার। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
টিউয়ানা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ২১:০৬
Share: Save:

পরনে ফুটপাতের টি-শার্ট। আর কোমরে ডায়াপার। একজনের পায়ে হাওয়াই চটি রয়েছে। আর একজনের পা খালি। সেই অবস্থাতেই মায়ের হাত ধরে দৌড় লাগাল দুই যমজ মেয়ে। এলোমেলো পায়ে ছুটতে পারছিল না তারা। তার উপর ধোঁয়ায় চোখে জ্বালা ধরে গিয়েছিল। আচমকাই মুখ থুবড়ে পড়ে গেল একজন। কোনওরকমে টেনেহিঁচড়ে তাকে তুলল মা। তার পর ফের দৌড়। খানিকটা তফাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ল শিশুটি। বুকের মধ্যে তাকে চেপে ধরা ছাড়া আর কিছুই করে উঠতে পারলেন না তার মা। অভিবাসী ইস্যু নিয়ে মার্কিন রাজনীতি যখন উত্তাল, ঠিক তখনই সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়ল এমন দৃশ্য।

অভিবাসীদের প্রবেশ রুখতে শুরু থেকেই কঠোর মনোভাব বজায় রেখেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। যে কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মেক্সিকো সীমান্তের টিউয়ানা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। আমেরিকায় প্রবেশের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। ভাগ্যক্রমে রবিবার সকালে কিছুক্ষণের জন্য সেই সুযোগ চলে আসে তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের কাছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন আঁটোসাটো নয় দেখে মহিলা ও শিশু মিলিয়ে প্রায় পাঁচশো জনের একটি দল অবৈধ ভাবে আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করে। তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী। দলে শিশু এবং মহিলা রয়েছে জেনেও পাঁচশো জনের ওই দলকে পিছু হটাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে তারা। তাতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসীদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন রয়টার্সের চিত্র সাংবাদিক কিম কিম কিউং হুন। আচমকাই তাঁর চোখ পড়ে ওই মহিলা ও তাঁর সন্তানদের উপর। কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে দুই সন্তানকে নিয়ে পিছু হটছিলেন তিনি। হুড়োহুড়ি সত্ত্বেও দুই মেয়ের লিকলিকে হাত ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু ধাক্কাধাক্কি আর কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁঝের মধ্যে টাল সামলাতে পারেনি তাদের মধ্যে একজন। মুখ থুবড়ে পড়ে যায় সে। ছবিগুলি সামনে আসতেই দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মার্কিন সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে প্রায় সব দেশই।

টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় দুই শিশুর মধ্যে একজন। ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন: শরণার্থী ফেরাও, মেক্সিকোকে চাপ ডোনাল্ড ট্রাম্পের​

আরও পড়ুন: করতারপুর করিডর ধরে শান্তির বার্তা, ‘ইয়ার দিলদার ইমরান’, বলে এলেন সিধু​

কিন্তু আশ্রয়হীন ওই মহিলা কী বলছেন? আদতে হন্ডুরাসের বাসিন্দা ওই মহিলার নাম মারিয়া মেসা। পাঁচ বছরের যমজ মেয়ে দু’টির নাম শেলি এবং সায়রা। এনবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মারিয়া জানিয়েছেন, স্বামী লুইসিয়ানায় থাকেন। তাঁর কাছে পৌঁছতেই পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। ছবিতে সকলকে দেখা যায়নি। তিন বছরের ছেলে জেমসও তাঁদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু কাঁদানে গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় সে। ছেলেকে রাস্তায় ফেলেই বাকিদের নিয়ে দৌড় লাগিয়েছিলেন তিনি। পরে ছেলেকে তুলে নিয়ে যান। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, ওই পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের মধ্যে কারও কিছু হয়েও তো যেতে পারত? কেউ কি তার দায় নিত?

তবে তাতেও মন গলেনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। বরং সোমবার তিনি দাবি করেন, মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে যাঁরা আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই কুখ্যাত অপরাধী। ভাল চাইলে দেশে ফিরে যান। নইলে পাকাপাকিভাবে সীমান্ত বন্ধ করার বন্দোবস্ত করবেন তিনি। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তরফে বলা হয়, ছেলেমেয়ে নিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরনোর চেষ্টা না করাই ভাল। এ ভাবে মা-বাবারা নিজেরাই ছেলেমেয়েদের বিপদ ডেকে আনছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

US Migrants Mexico Border Viral
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE