Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mayanmar

বাবার কোলেই গুলিতে মৃত্যু, ফুঁসছে মায়ানমার

নিরস্ত্র শিশু-কিশোরদের এর আগেও নিশানা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

নৈঃশব্দ্য: মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শুনশান শহর। শান প্রদেশের তায়ুনজিতে। রয়টার্স ।

নৈঃশব্দ্য: মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শুনশান শহর। শান প্রদেশের তায়ুনজিতে। রয়টার্স ।

সংবাদ সংস্থা
ইয়াঙ্গন শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২১ ০৫:১৩
Share: Save:

দরজায় কড়া নেড়েছিল সেনা। বাড়ির ভিতরে তখন বাবার কোলে বসেছিল বছর সাতেকের মেয়েটি। সেনা বাড়িতে ঢুকেই জিজ্ঞেস করেছিল, সবাই বাড়ি আছে কি না, তার পরেই মেয়েটির বাবাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয় তারা। বাবা নয়, সেনার গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে সাত বছরের সেই বালিকার। না কোনও ছবির দৃশ্য নয়। গত কাল এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে মায়ানমারের মান্দালয় শহর। সাত বছরের ওই শিশুকন্যাই মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতদের মধ্যে কনিষ্ঠতম। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ।

বোনের মৃত্যু চোখের সামনে দেখেছে ওই খুদের দিদি। স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলকে সে-ই সব ঘটনা জানায়। তার পরে কাল রাত থেকেই শুরু হয় দফায় দফায় মোমবাতি মিছিল। আজ সকালেও দেশের বিভিন্ন শহরে মৌনী মিছিলে অংশ নেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ।

তবে কালকের ঘটনাই প্রথম নয়। নিরস্ত্র শিশু-কিশোরদের এর আগেও নিশানা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। গত সোমবারই বাড়ির সামনের কল থেকে জল আনতে বেরিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে নয় ও তেরো বছরের দুই কিশোরেরও। তবে কাল বাবার কোলে বসা মেয়েটির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন দাবি করেছে, এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে দেড়শো শিশু-কিশোরকে সেনা-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় আটক করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রতিটি মৃত্যুর পিছনেই আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকে দায়ী করে এসেছে জুন্টা। কালকের ওই সাত বছরের খুদের মৃত্যু কী ভাবে হল, তার ব্যাখ্যা নিয়ে অবশ্য নীরব তারা।

কালই যদিও সরকারি টিভি চ্যানেলে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন সেনার মুখপাত্র জ়াও মিন তুন। তাঁর বক্তব্য, দেশের প্রতিটি মানুষের মৃত্যুই তাঁদের কাছে দুঃখজনক, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়েই গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে সেনা। তাঁর দাবি, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৬৮ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। যদিও বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, আসল সংখ্যাটা তার থেকে কমপক্ষে ১০০ বেশি। যে সরকারি কর্মীরা একটানা অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছেন, কড়া ভাষায় তাঁদের নিন্দা করেছেন সেনা মুখপাত্র।

আজ অবশ্য ছ’শো রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে সেনা। সকালের দিকে ইয়াঙ্গনের কুখ্যাত ইনসেন কারাগার থেকে বেশ কয়েকটি বাস বেরোতে দেখা যায়। পরে আইনজীবীদের একটি সংগঠন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বা রাতের কার্ফু লঙ্ঘন করে বাইরে বেরোনো বন্দিদের আজ মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৩৬০ জন পুরুষ ও ২৬৮ জন মহিলা বন্দি রয়েছেন। মুক্তি পেয়েছেন সংবাদ সংস্থা এ পি-র সাংবাদিক থিয়েন জ়াও-ও। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইয়াঙ্গনে বিক্ষোভের খবর কভার করতে গিয়ে সেনার হাতে বন্দি হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

ঘুষ মামলায় এনএলডি নেত্রী আউং সান সু চি-র আজ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, সেনা দেশ জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত রাখায় আজ শুনানি হয়নি। পরবর্তী শুনানি ১ এপ্রিল। সু চি-র আইনজীবীর অভিযোগ, তাঁর মক্কেল যাতে আর কোনও দিন কোনও রাজনৈতিক দায়িত্ব নিতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করতে চাইছে সেনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Military Mayanmar Dictatorship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy