চিনা কোটিপতি জিয়ানলিন।
কোটি কোটিপতি বাবার সম্পত্তি নিতে চান না তাঁর ছেলে! বিপুল পিতৃসম্পত্তিতেও তীব্র অনীহা ছেলের! আর তার ফলে, হন্যে হয়ে বাবা তাঁর উত্তরাধিকারী খুঁজে চলেছেন, এখানে ওখানে! এমন এক জনকে খুঁজছেন, যিনি তাঁর বিপুল সম্পত্তি সামলাবেন, আগলে রাখবেন আর তার দেখভাল করবেন। হাল ধরবেন তাঁর সংস্থারও।
এই দুশ্চিন্তায় এই মূহুর্তে দুনিয়ায় সম্ভবত যাঁর রাতের ঘুম সবচেয়ে বেশি ছুটে গিয়েছে, তিনি চিনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ওয়াং জিয়ানলিন। ৬২ বছর বয়সী জিয়ানলিন চিনের নামজাদা বেসরকারি শিল্প সংস্থা ‘দালিয়ান ওয়ান্ডা গ্রুপ কোম্পানি’র চেয়ারম্যান। যাঁদের অন্যান্য অনেক ব্যবসার মধ্যে রয়েছে শপিং মল, থিম পার্ক, স্পোর্টস ক্লাব আর সিনেমা হলও। জিয়ানলিনের সম্পদের পরিমাণ ৯ হাজার ২০০ কোটি ডলার। কিন্তু তার এক কানাকড়িও নিতে চায় না তাঁর ছেলে! জিয়ানলিনের কথায়, ‘‘আমি ছেলেকে বলেছিলাম, তুমিই সব দায়িত্ব নাও। কিন্তু ও বলল, আমি যে ভাবে জীবন কাটাই, সে ভাবে ও জীবনটা কাটাতে চায় না।’’ ফলে, বাধ্য হয়েই জিয়ানলিনকে এখন একদল প্রফেশনাল ম্যানেজার খুঁজতে হচ্ছে। যাঁরা তাঁর বিপুল সম্পত্তির দেখভাল করবেন। তাঁর সংস্থাটিও চালাবেন। হরিয়ানার একটি চিনা প্রকল্পেও এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জিয়ানলিন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে।
আরও পড়ুন- প্রকাশ্যে বোরখা ছাড়া ছবি তুলে পোস্ট, সৌদি তরুণী জেলে
হংকঙে সম্প্রতি চিনের শিল্পপতিদের একটি সম্মেলন ছিল। সেখানে গিয়েছিলেন জিয়ানলিন। হংকং-এর একটি দৈনিক ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিয়ানলিন বলেছেন, ‘‘এখনকার ছেলেমেয়েরা একটু অন্য রকম স্বপ্ন দেখে। জীবনটাকে তারা ভাবে একটু অন্য ভাবে। তাই ঠিক করেছি, প্রফেশনাল ম্যানেজারদের দিয়েই সবকিছু চালাব। সম্পত্তির দেখভালও হবে। আমার কোম্পানিও চালাবেন তাঁরাই। কোম্পানির বোর্ড মিটিঙে সে কথা আমি বলে দিয়েছি। আর তা বোর্ডের অন্য সদস্যরা মেনেও নিয়েছেন।’’
জিয়ানলিনের এই ‘অসহায়ত্ব’ যে এই মূহুর্তে চিনে খুব ব্যাতিক্রমী ঘটনা, তা কিন্তু নয়। গত তিন দশক ধরে অর্থনৈতিক সংস্কারের গতি তরতরিয়ে বেড়ে চলা আর চিনের তরুণ প্রজন্মের বিদেশে পড়াশুনো করতে যাওয়ার হিড়িক পড়ে যাওয়ায় নবীন চিনা প্রজন্মের চিন্তাভাবনায় একটা বড়সড় রদবদল ঘটে গিয়েছে। তাঁদের দেখার চোখটা ভিন্ন। ভাবনার মনটাও ভিন্ন। বিশ্ব পরিস্থিতিটাকে তাঁরা অন্য রকম ভাবে দেখেন, লক্ষ্য রাখেন, ব্যাখ্যা করেন। যা তাঁদের অভিভাবকদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেলে না। সাংহাইয়ের জিয়াওতোঙ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, এখন চিনের তরুণদের ৮০ শতাংশই আর তাঁদের বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে চাইছেন না। ওই তরুণ-তরুণীদের সকলেই চিনের নামজাদা বেসরকারি সংস্থাগুলির কর্ণধারদের সন্তান। এমন ১৮২টি সংস্থা রয়েছে চিনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy