প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত ৬৩ হাজার পাতার নথি প্রকাশ্যে আনল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। আর সেই সঙ্গেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। ওই নথি প্রকাশ্যে আসার পর পরই আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে হইচই পড়ে গিয়েছে। বেশ কিছু প্রথম সারির আমেরিকান সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, এ দেশেরই গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র একটা অংশের হাত ছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের হত্যায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে, কেনেডির হত্যা সংক্রান্ত এই নথিগুলিতে কোনও কাটছাঁট করা হয়নি। ট্রাম্প সোমবার জানিয়েছিলেন, কেনেডি-হত্যা সংক্রান্ত প্রায় ৮০ হাজার পাতার নথি প্রকাশ করবে তাঁর সরকার। ইউএস ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস-এর ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত প্রায় ২২০০ ফাইল গত কাল আপলোড করা হয়েছে। তার পরেই প্রায় ৬২ বছরের পুরনো হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে হইচই শুরু হয়েছে। ওই নথিতে গ্যারি আন্ডারহিল নামে সিআইএ-রই এক প্রাক্তন অফিসারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি তাঁর এক বন্ধুকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর সন্দেহ কেনেডিকে খুনের পিছনে আমেরিকান গুপ্তচর সংস্থারই একাংশের হাত রয়েছে। লি হার্ভি অসওয়াল্ড নামে যে ব্যক্তিকে কেনেডি হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁকে সেই সময় ফাঁসানো হয়েছিল বলেও দাবি করেছিলেন আন্ডারহিল।
১৯৬৩ সালের নভেম্বরে ডালাসে গিয়ে খুন হয়েছিলেন কেনেডি। তার পর পরই ওয়াশিংটন ছাড়েন আন্ডারহিল। পালিয়ে নিউ জার্সিতে তাঁর সেই বন্ধুর বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। সেই বন্ধুর দেওয়া সাক্ষ্যের উল্লেখ রয়েছে কেনেডি-হত্যা সংক্রান্ত সদ্য প্রকাশিত নথিতে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেনেডির মৃত্যুর ছ’মাসের মাথায় রহস্যজনক পরিস্থিতিতে উদ্ধার হয় আন্ডারহিলের মৃতদেহও। তাঁর শরীরে গুলির আঘাত ছিল, কিন্তু অটোপ্সি রিপোর্টে বলা হয়, আন্ডারহিল নিজেই নিজেকে গুলি করেছিলেন। আন্ডারহিলের রহস্য-মৃত্যুর পরে গোটা ঘটনাপ্রবাহে সিআইএ-র ভূমিকার বিষয়টি আরও বেশি করে নজরে আসে। আন্ডারহিলের ওই বন্ধু দাবি করেছেন, কেনেডির কাজকর্মে সিআইএ-র একটা ছোট অংশ আদৌ সন্তুষ্ট ছিল না। এবং প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করা হতে পারে, এমন গোয়েন্দা তথ্য জানার পরেও তাতে আমল দেননি তৎকালীন সিআইএ অফিসারেরা।
কেনেডি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ্যে আসার পরে আরও একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমেরিকান সংবাদমাধ্যমের একাংশই বলতে শুরু করেছে যে, ইজ়রায়েলের গুপ্তচর বাহিনীর সঙ্গে সিআইএ-র নানা ধরনের যোগসাজসের বহু পুরনো ঘটনা ফের সামনে চলে এসেছে। এই প্রসঙ্গে জেমস অ্যাঙ্গেলটন নামে সিআইএ-র এক প্রাক্তন অফিসারের নামও উঠে এসেছে। এই অফিসারই নাকি সিআইএ-র সঙ্গে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর বাহিনীর যাবতীয় যোগাযোগ একা হাতে সামলাতেন এবং এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য গোপন রাখার ভার ছিল তাঁরই হাতে। সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)