নতুন পরমাণু চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ইরানকে দু’মাসের ‘চূড়ান্ত সময়সীমা’ বেঁধে দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময়সীমার মধ্যে পদক্ষেপ না করলে তেহরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউস থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেইনিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের কোনও হুমকিতে মাথা নত করা হবে না বলে চলতি মাসের গোড়ায় জানিয়েছিলেন খামেইনি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘পত্রবোমা’র প্রেক্ষিতে কিছুটা সুর নরম করেছে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েশকিয়ানের সরকার। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরকচি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চিঠি খতিয়ে দেখছি। সম্ভাবনা এবং সঙ্কটের দিকগুলি বিবেচনা করছি।’’
আরও পড়ুন:
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের উপর চাপ বাড়াতে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করবে আমেরিকা এবং ইজ়রায়েল! সেখানে ‘সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ’-এর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে একাধিক বার ইরানের বিভিন্ন পরমাণুকেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি ফৌজ। ট্রাম্পের চিঠি ‘বৃহত্তর হামলা’র ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ওই চুক্তিতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো বিপুল আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা ও অন্যান্য বেশ কিছু দেশ। এই চুক্তির ফলে এক দিকে যেমন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া, তেমনই ১০ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি ফিরে পেয়েছিল ইরানও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্পই বলতে শুরু করেন, ‘‘ওই চুক্তি ওবামার অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের।’’ শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের মে মাসে হোয়াইট হাউসের তরফে একটি টুইট করে বলা হয়, ‘‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি। তাই এই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।’’ এর পর জো বাইডেনের জমানায় ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু সমঝোতার পথ খুলেছিল আমেরিকা। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে আবার কড়া তেহরান বিরোধী অবস্থান নিয়েছে হোয়াইট হাউস।
আরও পড়ুন:
তেহরানের অভিযোগ, নিরস্ত্রীকরণের অজুহাত দিয়ে তাদের পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে ‘কোপ’ মারতে চাইছে ওয়াশিংটন-তেল আভিভ। যদিও গত ফ্রেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংগঠন আইএইএ (আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা)-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দ্রুতগতিতে পরমাণু বোমা বানানোর প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। ওই রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরান প্রায় ২৭৫ কিলোগ্রাম ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরির কাজে সফল হয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরের আইএইএ রিপোর্টে বলা হয়েছিল, তেহরানের হাতে সাড়ে ৯২ কিলোগ্রাম ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে।
২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ইরানের ২০ শতাংশের বেশি পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে ছাড় রয়েছে। তার বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন নিষেধ। আইএইএ-কে অবশ্য ইরান জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যই ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা হচ্ছে। সাধারণ ভাবে পরমাণু বোমা তৈরি করতে গেলে ৯০ শতাংশ পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন। এখনও তেহরান সেই দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি বলেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত। তবে ৪২ কিলোগ্রাম ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে কম ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা বানানো সম্ভব। তা ছাড়া পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, পরমাণু সেন্ট্রিফিউজ (যা অস্ত্র নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে) তৈরির কাজেও সাফল্য পেয়েছে ইরান।