Secret relationship with Ma Anand Sheela destroyed Osho Rajneesh dgtl
Ma Anand Sheela
Ma Anand Sheela: স্বামীকে খুন, গণহত্যার চেষ্টা... ‘সেক্স গুরু’র এই শিষ্যার জীবন নিয়ে রয়েছে তথ্যচিত্রও
গুজরাতের বদোদরায় জন্ম নেওয়া শীলা অম্বালা পটেলের মা আনন্দ শীলা হয়ে ওঠার গল্প কোনও সিনেমার থেকে কম নয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২১ ১২:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
গডম্যান ওশো রজনীশের জন্ম ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ ভারতের ভোপালে। অন্য ধারার আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন তিনি। দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ শিষ্য পুণেতে তাঁর আশ্রমে জীবনের পাঠ নিতেন। আশ্রমে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং শিষ্যদের মধ্যে অবাধ মিলনের মানসিকতা জাগরণের জন্য তিনি সারা বিশ্বের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ‘সেক্স গুরু’।
০২১৮
প্রভাবশালী এই গুরুর এক কথাতেই প্রাণ লুটিয়ে দিতে রাজি থাকতেন হাজার হাজার মানুষ। সেই তিনি ‘অন্ধ’ হয়েছিলেন এক শিষ্যার প্রেমে। ওই শিষ্যা মা আনন্দ শীলাই বিশ্বাসঘাতকতা করেন। প্রেমের জালে জড়িয়ে ক্ষমতা হরণ করে নেন। একপ্রকার মৌনী করে রেখে দেন গডম্যান ওসোকে। ক্ষমতার লোভে নিজের প্রথম স্বামীকে খুন, বিষ দিয়ে গণহত্যার চেষ্টা-সহ একাধিক অপরাধের সঙ্গী শীলা।
০৩১৮
একাধিক অপরাধ মাথায় নিয়ে হাজতবাস করা শীলা আজও একই প্রতিপত্তিতে জীবন কাটিয়ে চলেছেন। সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার, একাধিক তথ্যচিত্র তাঁকে রীতিমতো তারকা করে তুলেছে। গুজরাতের বদোদরায় জন্ম নেওয়া শীলা অম্বালা পটেলের মা আনন্দ শীলা হয়ে ওঠার গল্প কোনও সিনেমার থেকে কম নয়।
০৪১৮
মাত্র ১৮ বছর বয়সে পড়াশোনার জন্য আমেরিকার নিউ জার্সি যান তিনি। খুব কম বয়সে আমেরিকাতেই মার্ক হ্যারিস সিলভারম্যান নামে এক জনকে বিয়ে করেন। তার পর ১৯৭২ সালে স্বামীকে নিয়েই তাঁর ভারতে প্রত্যাবর্তন। রজনীশের আশ্রমে শিষ্য হয়েই থাকতে শুরু করেন স্বামী-স্ত্রী। নাম নেন মা আনন্দ শীলা।
০৫১৮
কিন্তু শীলার লক্ষ্য ছিলেন ওশো রজনীশ। রজনীশের কাছে পৌঁছনোর ছক কষতে শুরু করেছিলেন প্রথম থেকেই। রজনীশ এবং তাঁর মাঝের সমস্ত বাধাকে সরিয়ে ফেলেছিলেন। এমনকি রজনীশের কাছে পৌঁছনোর জন্য স্বামীকে বিষ ইঞ্জেকশন দিয়ে খুনেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর উপর। যা পরবর্তীকালে আশ্রমেরই এক শিষ্য প্রকাশ করেছিলেন। প্রথম দিকে আশ্রমের ক্যান্টিনে কাজ করতেন তিনি।
০৬১৮
তার পর রজনীশের ব্যক্তিগত সহায়কের সহকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রজনীশের মন জিতে নেন। ১৯৮১ সালে রজনীশ তাঁকে নিজের ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ করেন। রজনীশের আশ্রমে যে পদ্ধতিতে আধ্যাত্মিকতার পাঠ দেওয়া হত তা ভারতের মতো দেশে গ্রহণযোগ্য ছিল না। বিভিন্ন মহল থেকে আশ্রমের উপর চাপ আসতে শুরু করেছিল।
০৭১৮
ওই বছরই জুলাই মাসে মা শীলার কথায় রজনীশ ভারত ছেড়ে গোটা আশ্রম তুলে নিয়ে চলে যান আমেরিকাতে। এক দিনেই বিমানে উড়িয়ে নিয়ে চলে যান তাঁর পুণের আশ্রমের সমস্ত শিষ্যদেরও।
০৮১৮
আমেরিকার ওরেগনের ওয়াসকো কাউন্টি। সেখানেই ২৬০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা কিনে দ্রুত নতুন আশ্রম বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। রজনীশের আশ্রমের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি বুদ্ধিমতী শীলার। রজনীশের সংস্থার সভাপতিও হয়ে যান শিলা।
০৯১৮
দ্রুত শিলার পদোন্নতি হয়ে চলে। রজনীশেরও সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। রজনীশের কাছে পৌঁছনোর আগে তাঁর দরজায় কড়া নাড়তে হত শিষ্যদের। আশ্রমের যাবতীয় বিষয় রজনীশের আগে তাঁর কানে পৌঁছত। এগুলির মধ্যে রজনীশকে কোন কথা কতটা বলা উচিত এবং কোনটা নয় তা খুব ভাল ভাবেই জানতেন শীলা।
১০১৮
ওয়াসকো কাউন্টিতে আশ্রম চালু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাঁদের হাবভাব স্থানীয়দের সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। ৩ বছরের মধ্যে সেখানকার স্থানীয়রাও রজনীশের আশ্রমের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। আশ্রমে যাতে কোনও ভাবে স্থানীয়েরা হামলা না করতে পারে তার জন্য শীলার নির্দেশেই শিষ্যদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। সেগুলি নিয়েই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেন তাঁরা।
১১১৮
আশ্রমের একচ্ছত্র ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন শীলা। কিন্তু এইটুকুতেই তিনি থিতু হতে পারছিলেন না। আরও ক্ষমতা চাইছিলেন তিনি। ওয়াসকো কাউন্টি কোর্টের অন্তত দুটো আসন নিজের দখলে আনতে চেয়ে নির্বাচনেও লড়েন। তার জন্য ওয়াসকো কাউন্টি এবং তার আশপাশ থেকে ভবঘুরেদের বাসে চাপিয়ে আশ্রমে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল খাওয়া-পোশাক-আশ্রয়ের বিনিময়ে এই সকল মানুষদের ভোট নিজের দিকে টানা। কিন্তু তার জন্য এঁদের ওয়াসকো কাউন্টির ভোটার হতে হত। শেষমেশ তাঁদের ভোটার করতে পারেননি শীলা।
১২১৮
এর পর মাস্টারস্ট্রোক চালেন শীলা। যাতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভোটে না জেতেন তার জন্য ওয়াসকো কাউন্টির বেশির ভাগ ভোটারকেই অসুস্থ করে দেওয়ার ছক কষেন। বিষাক্ত সালমোনেলা ব্যাকটিরিয়া খাবারে মিশিয়ে অন্তত সাড়ে সাতশো ভোটারকে অসুস্থ করে তুলেছিলেন তিনি। ওয়াসকো কাউন্টির ১০টি রেস্তোরাঁর খাবারে এই ব্যাকটিরিয়া মিশিয়েছিলেন তিনি।
১৩১৮
তত দিনে আশ্রমের সর্বেসর্বা ওশো মৌনী হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি শীলা ছাড়া আর কারও সঙ্গেই কোনও কথা বলতেন না। শীলার সঙ্গেও যেটুকু কথা হত সবই হত বন্ধ দরজার পিছনে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে শীলা এতটাই জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন যে ১৯৮৫ সালে তাঁকে আশ্রম ছেড়ে ইউরোপে গা ঢাকা দিতে হয়। শীলা গা ঢাকা দেওয়ার পরই মুখ খোলেন রজনীশ।
১৪১৮
খুনের চেষ্টা, গণ বিষপ্রয়োগ, গোপনে তাঁর উপরে নজর রাখা, তাঁর সমস্ত কথা রেকর্ড করার মতো মারাত্মক অভিযোগ আনেন তাঁর উপর। আমেরিকার পুলিশ শীলার ঘর তল্লাশি করে একটি ল্যাবরেটরি পেয়েছিল যাতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া কালচার হয়েছিল। পাশাপাশি রজনীশের আনা অন্যান্য অভিযোগেরও প্রমাণ মেলে।
১৫১৮
১৯৮৬ সালে পশ্চিম জার্মানিতে গ্রেফতার হন শীলা। ৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার জরিমানা এবং ২০ বছরের জেল হয় তাঁর। কিন্তু মাত্র ৩৯ মাসের মধ্যেই ভাল আচরণের জন্য মুক্তি পেয়ে যান। তার পর সুইৎজারল্যান্ডে গিয়ে জীবনের অন্য অধ্যায় শুরু করেন। সংসার পাতেন তিনি। একদা রজনীশের শিষ্য সুইৎজারল্যান্ডের নাগরিক বির্নস্টেইলকে বিয়ে করেন তিনি। তারপর দু’টি নার্সিং হোম কিনে সেগুলি চালাতে শুরু করেন।
১৬১৮
এর পরও ১৯৮৫ সালে চার্লস টার্নার নামে আমেরিকার এক পুলিশকে খুনের অপরাধে ১৯৯৯ সালে সুইস আদালত তাঁকে কারাদণ্ডের সাজা দেয়। সাজা কাটিয়ে আপাতত সুইৎজারল্যান্ডেই থাকছেন তিনি।
১৭১৮
২০১৮ সালে নেটফ্লিক্সের তথ্যচিত্র ‘ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড কান্ট্রি’ সম্প্রচারিত হয়। তাতে তিনি সাক্ষাৎকার দেন। এর পর ২০১৯ সালে কর্ণ জোহর দিল্লিতে তাঁর সাক্ষাৎকার নেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে নেটফ্লিক্সে ‘সার্চিং ফর শীলা’ নামে কর্ণ জোহরের তথ্যচিত্রও মুক্তি পায়।
১৮১৮
১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি ওশো রজনীশের মৃত্যু হয় পুণেতে। সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠা শীলা তাঁর জীবনের শেষের দিকে সবচেয়ে দূরের মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। সবচেয়ে বিশ্বাস করেছিলেন যাঁকে তাঁর কাছ থেকেই সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছিলেন রজনীশ। শীলার বিরুদ্ধে প্রথম মুখ খুলেছিলেন তিনিই। তা সত্ত্বেও শীলা আজও নিজেকে রজনীশের প্রেমিকা বলতেই ভালবাসেন।