চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা সংস্থা ওপেনএআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২৬ বছর বয়সি সুচির। তবে সংস্থা ছাড়ার পর তিনি ওপেনএআই-এর কার্যকারিতা এবং নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:১৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
আত্মহত্যা করেননি ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত এআই গবেষক সুচির বালাজি! তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সুচিরের বাবা-মার অভিযোগ, ময়নাতদন্তে তাঁদের ছেলের মাথায় আঘাতের মতো চিহ্ন লক্ষ করা গিয়েছে। এ ছাড়াও শরীরে মিলেছে ধস্তাধস্তির চিহ্ন।
০২২০
চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা সংস্থা ওপেনএআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২৬ বছর বয়সি সুচির। তবে সংস্থা ছাড়ার পর তিনি ওপেনএআই-এর কার্যকারিতা এবং নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন।
০৩২০
সান ফ্রান্সিসকোর বুচানন স্ট্রিটের অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন সুচির। গত ২৬ নভেম্বর সেখান থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ প্রশাসনের দাবি, সুচির আত্মহত্যা করেছিলেন। যদিও অন্য দাবি করছেন তাঁর বাবা-মা।
০৪২০
সুচিরের বাবা-মা বালাজি রামামূর্তি এবং পূর্ণিমা রাও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে। ন্যায়বিচারের জন্য তাঁদের লড়াই নিয়েও কথা বলেছেন তাঁরা।
০৫২০
পূর্ণিমার কথায়, ‘‘আমরা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পড়েছি। সেখানে মাথায় আঘাতের চিহ্নের উল্লেখ রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে এটি হত্যা।’’
০৬২০
পূর্ণিমা জানিয়েছেন, তাঁর পুত্র ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ আনা অভিযোগ নিয়ে একটি মামলায় সম্ভাব্য সাক্ষী ছিলেন। এর পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাই পুরো বিষয়টিই গোলমেলে বলে মনে করছেন তিনি।
০৭২০
সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-কে পূর্ণিমা বলেছেন, ‘‘এআই শিল্পে প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ আমার ছেলেকে মামলায় সাক্ষী হিসাবে রেখেছিল। এক সপ্তাহের মধ্যে তার দেহ উদ্ধার হয়। তার কাছে এমন কিছু নথি এবং তথ্য ছিল যেগুলি নিয়ে সমালোচনা হত। নড়ে যেত এআই শিল্প। ওপেনএআই এবং মাইক্রোসফ্টের মতো সংস্থা বিপদে পড়ত। যদি আমার পুত্র সাক্ষ্য দিত তা হলে ওদের উপর বড় প্রভাব পড়ত।”
০৮২০
পূর্ণিমা আরও জোর দিয়ে বলেন, সুচির ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেননি। এআইয়ের ‘এলএলএম’ মডেল কতটা ক্ষতিকারক সেটাই প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এলএলএম হল এক ধরনের এআই যা মানুষের ভাষা শোনে, বোঝে এবং তৈরি করে।
০৯২০
পূর্ণিমা বলেন, ‘‘সুচির ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেনি। ও শুধু বলছিল যে এআই এলএলএম মডেল ক্ষতিকারক। এটি আসলে ডেটাকে ঠিক ভাবে প্রকাশ করে না। এটি কেবল কপিরাইট লঙ্ঘন করে না, মানবতার ক্ষতিও করে।’’
১০২০
তিনি আরও বলেন, ‘‘তখনই কাউকে ‘হুইসেলব্লোয়ার’ বলা হয় যখন কেউ সংস্থার ভিতরে থেকে আওয়াজ তোলে। কিন্তু আমার ছেলে ওপেনএআই ছেড়ে দিয়েছিল। যত ক্ষণ আমার ছেলে ওখানে ছিল, তত দিন সে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেনি।’’
১১২০
সুচিরের মায়ের দাবি, সুচির অনুভব করতে শুরু করেছিলেন যে, তাঁর কাজের অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোনও নীতি না মেনেই কাজ করা হচ্ছে। আর তা নিয়ে কথা বলতে গিয়েই সুচিরের প্রাণ গিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
১২২০
পূর্ণিমার কথায়, ‘‘আমি আমার ছেলেকে নৈতিকতা শিখিয়েছি। আমার কি তাকে মিথ্যা বলতে শেখানো উচিত ছিল? সে নৈতিকতার পক্ষে ছিল এবং সেই নীতি ও মূল্যবোধ তার জীবন কেড়ে নিয়েছে।’’
১৩২০
একই সঙ্গে সুচির সঙ্গে শেষ কথোপকথনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সুচির বাবা রামমূর্তি। তিনি জানান, সুচি যখন লস অ্যাঞ্জেলসে বন্ধুদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করে ফিরছিলেন, তখন খুবই হাসিখুশি ছিলেন। আবার জানুয়ারিতে লস অ্যাঞ্জেলসে যাবেন বলেও জানান। পাশাপাশি, ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন সুচির বাবা-মা।
১৪২০
ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম সুচিরের। সেখানেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা শেষ করে চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা সংস্থা ওপেনএআই-এর সঙ্গে যুক্ত হন। সুচির এই সংস্থায় যোগ দেন ২০২০ সালের নভেম্বরে।
১৫২০
২০২৪ সালের অগস্ট পর্যন্ত সেখানে গবেষক হিসাবে কাজ করেন সুচির। চ্যাটজিপিটি নিয়ে তিনি কাজ করেছিলেন দেড় বছরের বেশি। পরে ওই সংস্থা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন।
১৬২০
ওপেনএআই ইন্টারনেটের ক্ষতি করছে বলেও দাবি করেছিলেন সুচির। তার পর পরই সুচির মৃত্যুর কারণ ঘিরে তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। ওপেনএআই সংস্থার ‘কালো দিক’ প্রকাশ করার কারণেই কি খুন হতে হয়েছে সুচিরকে? উঠছে প্রশ্ন। ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে ঠিক কী কী অভিযোগ তুলেছিলেন সুচির?
১৭২০
নিজের প্রাক্তন সংস্থার বিরুদ্ধে সুচিরের মূল অভিযোগ ছিল, ইন্টারনেটের কপিরাইট আইন ভাঙছে ওপেনএআই। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন চ্যাটজিপিটি। এই চ্যাটজিপিটি বাজারে এনেছে ওপেনএআই সংস্থা।
১৮২০
সুচিরের অভিযোগ, সংস্থার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিভিন্ন মডেলকে ভুল পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কপিরাইট থাকা উপাদানে না বলে হস্তক্ষেপ করছে ওপেনএআই। সেই উপাদান ব্যবহার করে এআই মডেলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সুচির।
১৯২০
সুচিরের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই মনে করছে পুলিশ। স্যান ফ্রান্সিসকো পুলিশের তরফে তা নিয়ে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন মরতে হল সুচিরকে? আত্মহত্যার তত্ত্বই যদি সঠিক হয়, তবে কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল?
২০২০
সুচিরের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল কি না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। সে সব প্রশ্নের উত্তর অধরা। তার মধ্যেই এ বার অন্য রকম ইঙ্গিত দিলেন তাঁর বাবা-মা।