বোমা বর্ষণে গুঁড়িয়ে য়াওয়া সিরীয় শহর।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে আলোচনা জরুরি। বিবদমান পক্ষগুলির মধ্যে আলোচনা ছাড়া ইসলামিক স্টেট (আইএস)-কে নির্মূল করাও সম্ভব নয়। এ নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু ভিয়েনার বৈঠকের পরে সে ভাবে আলোচনা হয়নি। এ বার এগিয়ে এল সৌদি আরব। মঙ্গলবার সৌদি রাজধানী রিয়াধে প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদ বিরোধী গোষ্ঠীগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু হল। লক্ষ্য আসাদ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনার আগে নিজেরা এক মত হওয়া। কিন্তু সেই আলোচনা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হল।
এই আলোচনায় আসাদ বিরোধী কিন্তু মার্কিন বা রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাসের তালিকায় নেই তেমন গোষ্ঠীগুলিকেই ডাকা হয়েছে। তাই বাদ পড়েছে আল-নুসরার মতো সংগঠন। যাদের সঙ্গে আল-কায়দার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই আলোচনা প্রধানত আসাদ বিরোধী সুন্নি সংগঠনগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার চেষ্টা। সৌদি আরব ছাড়াও কাতার, জর্ডনও এর সঙ্গে জড়িত আছে। যেমন, আসাদ বিরোধী সংগঠনগুলির মধ্যে কারা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব রয়েছে জর্ডনের উপরে।
কিন্তু দুধে চোনা পড়া মতো এই আলোচনা থেকে বাদ গিয়েছে কুর্দদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) এবং তাদের সশস্ত্র শাখা ওয়াইপিজি। বাদ গিয়েছে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স-ও (এসডিএফ)। সৌদি আরব এদের আমন্ত্রণই জানায়নি। এদের অভিযোগ, তুরস্কের আপত্তিতে তাদের রিয়াধে ডাকা হয়নি। ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলি সিরিয়ায় উত্তরপূর্বে হাসাকা শহরে পৃথক আলোচনার আয়োজন করেছে। সিরিয়ায় কোনও ঐক্যমত্যে পৌঁছনো কত কঠিন তা আলোচনার এই প্রাথমিক ধাপেই মালুম হচ্ছে।
যে সংগঠনগুলি এই আলোচনার টেবলে এসেছে তারা আসাদ বিরোধী হলেও নিজেদের মধ্যেই তীব্র মতভেদ রয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সেই মতভেদ সংঘর্ষেও গড়িয়েছে। আলোচনার ডাকে এক টেবিলে এলেও আদৌ এরা এক সঙ্গে কাজ করে উঠতে পারবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। আপাতত আলোচনার টেবিলে জায়গা পেতে প্রায় সব গোষ্ঠীর নেতারই আগ্রহী। কারণ, ভবিষ্যতে কোনও সিরিয়ায় জোট সরকার তৈরি হলেই সবাই সেখানে অংশ নিতে চায়। লাভের গুড়ের ভাগ সবাই চাইবেই। তা ছাড়া এই বিরোধীগোষ্ঠীগুলির নানা পৃষ্ঠপোষক রয়েছে। এই আলোচনার সাফল্য নির্ভর করছে সেই পৃষ্ঠপোষকদের স্বার্থ কতটা রক্ষিত হচ্ছে তার উপরেও।
কিন্তু এই আলোচনা নিয়ে এর মধ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইরান। সংশয়ে রয়েছে রাশিয়াও। আসাদের বিরুদ্ধে সুন্নিদের এক জোট হওয়া এক অর্থে আসাদের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করা। কারণ, নানা মতভেদ থাকলেও সিরিয়ার ভবিষ্যতে যে আসাদের কোনও ভূমিকা থাকবে না এ বিষয়ে কিন্তু কার্যত এই গোষ্ঠীগুলি একমত। আসাদ তো বটেই, ইরান ও রাশিয়ার পক্ষেও এটা মেনে নেওয়া কঠিন। ফলে সংশয় প্রকাশ স্বাভাবিক।
পাশাপাশি বড় করে উঠে আসবে কুর্দদের কথা। আইএস বিরোধী যুদ্ধে কুর্দ পেশমেরগা যোদ্ধাদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহায়তায় কুর্দরা শুধু ইরাকেই নিজেদের জমি ধরে রাখেনি, সিরিয়ার কোবানেতে কুর্দদের রক্ষা করেছে। পাল্টা হানায় ইয়াজিদিদের বাসস্থান শিনজারও উদ্ধার করেছে। সেখানে মার্কিন সহায়তা পেয়েও বেশ কয়েক জায়গায় ল্যাজেগোবরে হয়ে রয়েছে ইরাকি সেনা। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কুর্দদের এই শক্তিবৃদ্ধি তুরস্ক, ইরাক এমনকী ইরানের পক্ষেও শঙ্কার। এই তিনটি দেশেই ছড়িয়ে রয়েছে কুর্দরা। তুরস্ক দীর্ঘ দিন কুর্দদের দমনের জন্য সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। ইরাক ও ইরানের শাসকরাও কুর্দদের আলাদ দেশের বিরোধী। কুর্দদের আমন্ত্রণ না জানানোর মধ্যে সেই শঙ্কাই প্রচ্ছন্ন রয়েছে। কিন্তু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পরে নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থান ছাড়তে রাজি হবে কি? তাই এর মধ্যেই পৃথক আলোচনার আয়োজন করে ফেলেছে তারা।
নানা মুনির নানা মত থাকবেই। আলোচনা লক্ষ্য তার মধ্যে থেকে সর্বসম্মত পথটি খুঁজে পাওয়া। সিরিয়ার মতো বহু পরস্পর বিরোধী মতের মধ্যে এই সর্বসম্মত পথটি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। তবে উদ্যোগী কখনও না কখনও নিতেই হত। সিরিয়া নিয়ে ভিয়েনা সম্মেলনের পরে সৌদি আরব সেই উদ্যোগটি নিল। ফলাফলের দিকেই লক্ষ্য রাখছে বিশ্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy