Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
siberia

অ্যান্টার্কটিকায় নিজের দেহেই অস্ত্রোপচার করে অ্যাপেন্ডিক্স বাদ দিতে বাধ্য হন এই ডাক্তার

সম্ভাব্য শুশ্রূষা সবই করলেন রোগোজোভ। কিন্তু উপসর্গ ক্রমশ বাড়তে লাগল। নিজে চিকিৎসক হওয়ায় তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর সমস্যা অ্যাপেন্ডিসাইটিস। অস্ত্রোপচার না করলেই নয়!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৪২
Share: Save:
০১ ১৫
চারদিকে শুধু বরফ। চিরতুষারের দেশে তিনিই একমাত্র চিকিৎসক। তাই নিজের অসুখে নিজেরই চিকিৎসা করা ছাড়া উপায় নেই। শুধু চিকিৎসা-ই নয়। নিজের দেহে নিজেই অস্ত্রোপচার করেছিলেন লিওনিড রোগোজোভ। দেহ থেকে বাদ দিয়েছিলেন অ্যাপেন্ডিক্স।

চারদিকে শুধু বরফ। চিরতুষারের দেশে তিনিই একমাত্র চিকিৎসক। তাই নিজের অসুখে নিজেরই চিকিৎসা করা ছাড়া উপায় নেই। শুধু চিকিৎসা-ই নয়। নিজের দেহে নিজেই অস্ত্রোপচার করেছিলেন লিওনিড রোগোজোভ। দেহ থেকে বাদ দিয়েছিলেন অ্যাপেন্ডিক্স।

০২ ১৫
মঙ্গোলিয়া এবং চিনের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্ত থেকে ১৭ কিমি দূরে পূর্ব সাইবেরিয়ার চিটা ওব্লাস্ট গ্রামে রোগোজোভের জন্ম ১৯৩৪-এর ১৪ মার্চ। শৈশবেই পিতৃহীন হন তিনি। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হন তাঁর বাবা। তখন রোগোজোভের বয়স মাত্র ১১ বছর।

মঙ্গোলিয়া এবং চিনের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্ত থেকে ১৭ কিমি দূরে পূর্ব সাইবেরিয়ার চিটা ওব্লাস্ট গ্রামে রোগোজোভের জন্ম ১৯৩৪-এর ১৪ মার্চ। শৈশবেই পিতৃহীন হন তিনি। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হন তাঁর বাবা। তখন রোগোজোভের বয়স মাত্র ১১ বছর।

০৩ ১৫
লেলিনগ্রাদ পেডিয়াট্রিক মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ডাক্তারি পাশ করেন ১৯৫৯ সালে। তাঁর খ্যাতি ছিল অস্ত্রোপচারে। ১৯৬০ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার ষষ্ঠ অ্যান্টার্কটিক অভিযানে তিনি যোগ দেন চিকিৎসক হিসেবে।

লেলিনগ্রাদ পেডিয়াট্রিক মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ডাক্তারি পাশ করেন ১৯৫৯ সালে। তাঁর খ্যাতি ছিল অস্ত্রোপচারে। ১৯৬০ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার ষষ্ঠ অ্যান্টার্কটিক অভিযানে তিনি যোগ দেন চিকিৎসক হিসেবে।

০৪ ১৫
১৯৬০ থেকে ১৯৬২, দু’ বছর অ্যান্টার্কটিকায় কর্মরত ছিলেন রোগোজোভ। তেরো জন বিজ্ঞানী তথা গবেষকের দলে তিনি ছিলেন একমাত্র চিকিৎসক। তাঁদের কর্মক্ষেত্র ছিল নোভোলাজারেভস্কায়া স্টেশন।

১৯৬০ থেকে ১৯৬২, দু’ বছর অ্যান্টার্কটিকায় কর্মরত ছিলেন রোগোজোভ। তেরো জন বিজ্ঞানী তথা গবেষকের দলে তিনি ছিলেন একমাত্র চিকিৎসক। তাঁদের কর্মক্ষেত্র ছিল নোভোলাজারেভস্কায়া স্টেশন।

০৫ ১৫
হিমশীতল মেরুপ্রদেশে নোভোলাজারেভস্কায়া স্টেশনে ১৯৬১-র এপ্রিল মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রোগোজোভ। প্রথমে দুর্বলতা, তার পরে বমি, হাল্কা জ্বর এবং তলপেটের ডানদিকে ব্যথা।

হিমশীতল মেরুপ্রদেশে নোভোলাজারেভস্কায়া স্টেশনে ১৯৬১-র এপ্রিল মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রোগোজোভ। প্রথমে দুর্বলতা, তার পরে বমি, হাল্কা জ্বর এবং তলপেটের ডানদিকে ব্যথা।

০৬ ১৫
সম্ভাব্য শুশ্রূষা সবই করলেন রোগোজোভ। কিন্তু উপসর্গ ক্রমশ বাড়তে লাগল। নিজে চিকিৎসক হওয়ায় তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর সমস্যা অ্যাপেন্ডিসাইটিস। অস্ত্রোপচার না করলেই নয়!

সম্ভাব্য শুশ্রূষা সবই করলেন রোগোজোভ। কিন্তু উপসর্গ ক্রমশ বাড়তে লাগল। নিজে চিকিৎসক হওয়ায় তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর সমস্যা অ্যাপেন্ডিসাইটিস। অস্ত্রোপচার না করলেই নয়!

০৭ ১৫
অস্ত্রোপচার করতে হলে আরও একটি গবেষণাকেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেই মুহূর্তে নোভোলাজারেভস্কায়া-র সবথেকে কাছের গবেষণাকেন্দ্র মিরনি ছিল ১৬০০ কিমি দূরে। সেখানে যাওয়ার একমাত্র ভরসা এয়ারক্র্যাফ্ট। কিন্তু তীব্র তুষারঝড়ে সে বাহনও ব্যবহারের অযোগ্য ছিল।

অস্ত্রোপচার করতে হলে আরও একটি গবেষণাকেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেই মুহূর্তে নোভোলাজারেভস্কায়া-র সবথেকে কাছের গবেষণাকেন্দ্র মিরনি ছিল ১৬০০ কিমি দূরে। সেখানে যাওয়ার একমাত্র ভরসা এয়ারক্র্যাফ্ট। কিন্তু তীব্র তুষারঝড়ে সে বাহনও ব্যবহারের অযোগ্য ছিল।

০৮ ১৫
রোগোজোভ বুঝলেন নিজের অস্ত্রোপচার নিজেকেই করতে হবে। নইলে প্রাণসংশয় আসন্ন। ১৯৬১-র ১ মে দুপুর দু’টো-র সময় অস্ত্রোপচারের সময় ঠিক হল। গবেষণাকেন্দ্রে তৈরি হল অস্থায়ী  অস্ত্রোপচার থিয়েটার। রোগোজোভের পাশে থাকলেন একজন আবহাওয়া-বিজ্ঞানী এবং একজন গাড়িচালক।

রোগোজোভ বুঝলেন নিজের অস্ত্রোপচার নিজেকেই করতে হবে। নইলে প্রাণসংশয় আসন্ন। ১৯৬১-র ১ মে দুপুর দু’টো-র সময় অস্ত্রোপচারের সময় ঠিক হল। গবেষণাকেন্দ্রে তৈরি হল অস্থায়ী অস্ত্রোপচার থিয়েটার। রোগোজোভের পাশে থাকলেন একজন আবহাওয়া-বিজ্ঞানী এবং একজন গাড়িচালক।

০৯ ১৫
আধশোয়া রোগোজোভের সামনে ধরা হল আয়না। ইঞ্জেকশন দিয়ে তলপেটের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করলেন তিনি। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া। এরপর অস্ত্রোপচার শুরু করলেন তিনি।

আধশোয়া রোগোজোভের সামনে ধরা হল আয়না। ইঞ্জেকশন দিয়ে তলপেটের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করলেন তিনি। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া। এরপর অস্ত্রোপচার শুরু করলেন তিনি।

১০ ১৫
আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে এগোতে লাগল রোগোজোভের হাতের ছুরি-কাঁচি। অ্যাপেন্ডিক্স বাদ দিতে গিয়ে প্রথমে অন্য অঙ্গ ‘সিকাম’-কে আঘাত করে বসেন তিনি। তারপর সেটি সেলাই করে আবার নির্দিষ্ট দিকে এগোতে শুরু করল তাঁর হাতের অস্ত্র।

আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে এগোতে লাগল রোগোজোভের হাতের ছুরি-কাঁচি। অ্যাপেন্ডিক্স বাদ দিতে গিয়ে প্রথমে অন্য অঙ্গ ‘সিকাম’-কে আঘাত করে বসেন তিনি। তারপর সেটি সেলাই করে আবার নির্দিষ্ট দিকে এগোতে শুরু করল তাঁর হাতের অস্ত্র।

১১ ১৫
অবশেষে অ্যাপেন্ডিক্স দেখতে পেলেন রোগোজোভ। সেটি তখন যথেষ্ট স‌ংক্রামিত। দেহ থেকে সেটি বাদ দিলেন তিনি। বুঝলেন, এই অস্ত্রোপচার না করলে যে কোনও সময় সেটি পেটের ভিতরে ফেটে যেত। তাহলে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি দেখা দিতে পারত।

অবশেষে অ্যাপেন্ডিক্স দেখতে পেলেন রোগোজোভ। সেটি তখন যথেষ্ট স‌ংক্রামিত। দেহ থেকে সেটি বাদ দিলেন তিনি। বুঝলেন, এই অস্ত্রোপচার না করলে যে কোনও সময় সেটি পেটের ভিতরে ফেটে যেত। তাহলে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি দেখা দিতে পারত।

১২ ১৫
ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ বাদ দেওয়ার পরে আবার নিপুণ হাতে অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাই করে ফেলেন রোগোজোভ। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় দু’ ঘণ্টা। এর সাতদিন পরে সেলাই কাটা হয়। দু’ সপ্তাহ পরে পুরনো কাজের ছন্দে ফেরেন চিকিৎসক রোগোজোভ।

ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ বাদ দেওয়ার পরে আবার নিপুণ হাতে অস্ত্রোপচারের জায়গা সেলাই করে ফেলেন রোগোজোভ। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় দু’ ঘণ্টা। এর সাতদিন পরে সেলাই কাটা হয়। দু’ সপ্তাহ পরে পুরনো কাজের ছন্দে ফেরেন চিকিৎসক রোগোজোভ।

১৩ ১৫
চিকিৎসকের এই স্ব-অস্ত্রোপচার শিরানোমে চলে এসেছিল স্বভাবতই। লিওনিড রোগোজোভকে পুরস্কৃত করা হয় ‘অর্ডার অব দ্য রেড ব্যানার অব লেবার’ সম্মানে। সব গবেষণাকেন্দ্রে কর্মরতদের শারীরিক চেকআপ-এ আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

চিকিৎসকের এই স্ব-অস্ত্রোপচার শিরানোমে চলে এসেছিল স্বভাবতই। লিওনিড রোগোজোভকে পুরস্কৃত করা হয় ‘অর্ডার অব দ্য রেড ব্যানার অব লেবার’ সম্মানে। সব গবেষণাকেন্দ্রে কর্মরতদের শারীরিক চেকআপ-এ আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

১৪ ১৫
১৯৬১ সালে লেনিনগ্রাদে ফিরে আসেন রোগোজোভ। এম ডি হিসেবে যোগ দেন লেলিনগ্রাদ পেডিয়াট্রিক মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট-এ। যেখান থেকে তিনি ডাক্তারি পাশ করেছিলেন।

১৯৬১ সালে লেনিনগ্রাদে ফিরে আসেন রোগোজোভ। এম ডি হিসেবে যোগ দেন লেলিনগ্রাদ পেডিয়াট্রিক মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট-এ। যেখান থেকে তিনি ডাক্তারি পাশ করেছিলেন।

১৫ ১৫
এরপর তিনি লেনিনগ্রাদের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ থেকে ২০০০ অবধি তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর টিউবারকুলার পালমোনোলজি-র বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লিওনিড রোগোজোভ প্রয়াত হন ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, ৬৬ বছর বয়সে।

এরপর তিনি লেনিনগ্রাদের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ থেকে ২০০০ অবধি তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর টিউবারকুলার পালমোনোলজি-র বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লিওনিড রোগোজোভ প্রয়াত হন ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, ৬৬ বছর বয়সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy