সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিতে কাজ করছে গ্যালাকটিক এনার্জি নামের একটি চিনা সংস্থা। তাদের দাবি, সব ঠিক থাকলে ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম তড়িচ্চুম্বকীয় শক্তির রকেট লঞ্চিং ব্যবস্থা চালু করবে তারা। এতে বিশ্বব্যাপী মহাকাশ গবেষণার সংজ্ঞায় বড় বদল আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে সরকারি ভাবে এখনও কোনও ঘোষণা করেনি ড্রাগন-সরকার।
দক্ষিণ-পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রদেশে রয়েছে চিনা সরকারের একটি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট রকেট লঞ্চিং ব্যবস্থাটি তৈরিতে হাত দিয়েছে গ্যালাকটিক এনার্জি। সূত্রের খবর, এতে সুপার কন্ডাক্টিং চুম্বক ব্যবহার করছেন ড্রাগনের বিজ্ঞানীরা। এর ফলে মহাকাশযান বা কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেট সুপারসনিক (শব্দের চেয়ে বেশি) গতি পাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এই গবেষণায় অনেকটাই যে সাফল্য এসেছে, তা ফলাও করে জানিয়েছে বেজিং। মার্চের শেষ সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে একটি খবর সম্প্রচার করে সিচুয়ান রেডিয়ো অ্যান্ড টেলিভিশন। সেখানে বলা হয়, উচ্চাভিলাষী তড়িচ্চুম্বকীয় রকেট লঞ্চিং ব্যবস্থার প্ল্যাটফর্ম ভাল ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে সিচুয়ানের স্থানীয় সরকারি কর্তাদের সঙ্গে ‘চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন’-এর (সিএএসআইসি) পদস্থ আধিকারিকেরাও ছিলেন।
সিচুয়ান রেডিয়ো অ্যান্ড টেলিভিশনে সম্প্রচারিত খবর অনুযায়ী, এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণের পর মহাকাশযান বা কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে ম্যাক-১ গতিতে ছুটবে রকেট। নতুন পদ্ধতিতে কমবে জ্বালানির খরচ। ফলে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ যাত্রিবাহী ট্রেনের মতো নিত্য দিনের পরিষেবা হয়ে উঠবে। চিনের এই দাবিকে অবশ্য ‘অতিরঞ্জিত’ বলেছেন অন্তরীক্ষ বিজ্ঞানীদের একাংশ।
এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন সিচুয়ানের ‘জিয়াং কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ টেকনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর সভাপতি লি পিং। তাঁর কথায়, নতুন প্রযুক্তিতে রকেটের ভার বহনের ক্ষমতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। কমবে উৎক্ষেপণের খরচ। তা ছাড়া ঐতিহ্যবাহী লঞ্চপ্যাডগুলির রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। নতুন ব্যবস্থায় সেই ঝামেলা থাকবে না। ফলে ঘন ঘন উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে।
বর্তমানে সেরেস-২ নামের আরও উন্নত একটি রকেট তৈরিতে মন দিয়েছে গ্যালাকটিক এনার্জি। এর সম্পর্কে অবশ্য বিস্তারিত তথ্য দিতে সংস্থার তরফে অস্বীকার করা হয়েছে। তবে ‘সিচুয়ান রেডিয়ো অ্যান্ড টেলিভিশনে’ সম্প্রচারিত খবর অনুযায়ী, সেরেস-১-এর ভারবহন ক্ষমতা ছিল ৪০০ কেজি। সেরেস-২তে সেটা বেড়ে ৩.৫ টন দাঁড়াবে বলে জানা গিয়েছে। তবে নতুন রকেটটি তড়িচ্চুম্বকীয় লঞ্চিং ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা জানা যায়নি।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তড়িচ্চুম্বকীয় শক্তি ব্যবহার করে মহাকাশ উৎক্ষেপণের জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় একটি সুপার কন্ডাক্টিং ম্যাগলেভ পরীক্ষা করে ‘চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন’। তাতে আংশিক সাফল্য মিলেছিল। ওই পরীক্ষায় ৩৮০ মিটার ট্র্যাকে ঘণ্টায় ২৩৪ কিলোমিটার গতিবেগ পেয়েছিল ওই সুপার কন্ডাক্টিং ম্যাগলেভ।
অন্য দিকে অন্তরীক্ষে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর ক্ষেত্রে রকেট যুগের ইতি টানার চেষ্টা চালাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)। কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে ক্যাটাপল্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে আগ্রহী আমেরিকা। এর ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংজ্ঞা বদলে যাবে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মহাকাশ গবেষণায় বিপ্লব আনতে চলা ক্যাটাপল্টের আবিষ্কর্তা আমেরিকার ক্যালোফোর্নিয়াভিত্তিক স্টার্ট আপ স্পিনলঞ্চ। কৃত্রিম উপগ্রহকে পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে দিতে রকেটের বদলি হিসাবে ওই যন্ত্র তৈরি করেছে তারা। সংস্থাটির দাবি, এর সাহায্যে ব্যাপক সস্তায় কোনও যান বা কৃত্রিম উপগ্রহকে মহাশূন্যে পাঠানো যাবে। পাশাপাশি, ক্যাটাপল্ট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় নেই কোনও দূষণের আশঙ্কা।
এ-হেন ক্যাটাপল্ট যন্ত্রটির প্রেমে পড়ছেন নাসার তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদেরা। আর তাই এয়ারবাস এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে মিলে এর উন্নত সংস্করণ তৈরির দিকে মন দিয়েছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের মধ্যে ক্যাটাপল্টের সাহায্যে একগুচ্ছ কৃত্রিম উপগ্রহ মহাশূন্যে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার।
বর্তমানে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে আধিপত্য রয়েছে বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের তথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের। এই কোম্পানির প্রতিটা লঞ্চে খরচ হয় ন’লক্ষ পাউন্ডের বেশি জ্বালানি। আর তাই স্পেসএক্সের সাহায্যে মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর বিষয়টি বেশ খরচসাপেক্ষ।
বিশ্লেষকদের দাবি, চিনা গ্যালাকটিক এনার্জি হোক বা ক্যালিফোর্নিয়ার স্পিনলঞ্চের ক্যাটাপল্ট, দুটোর যে কোনও একটি পুরোপুরি সাফল্য পেলে মাস্কের ব্যবসায় থাবা বসানোর সুযোগ চলে আসবে। উৎক্ষেপণ ব্যয়বহুল না হওয়ায় অনেক সস্তা দরে ইন্টারনেট পরিষেবাও দিতে পারবে এই সমস্ত সংস্থা। আর তখন বিপুল পরিমাণ গ্রাহক হারাবে মাস্কের সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy