খারকিভের বাসিন্দাদের প্রাণে বাঁচতে রাশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সেখানকার রুশ প্রশাসন। ছবি: রয়টার্স।
ইউক্রেনীয় সেনাদের দাপটে উত্তর-পশ্চিম ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশে ইজিয়ুম শহরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ‘ঘাঁটি’র দখল হারাল রাশিয়া। মার্চে কিভ থেকে পিছু হঠার পর এটিই রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বড় ধাক্কা বলে দাবি সংবাদমাধ্যমের। তাদের প্রশ্ন, তবে কি ইজিয়ুমের রাশ আলগা হয়ে যাওয়াটাই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে মোড় ঘোরানো দিক হয়ে উঠবে?
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ইজিয়ুমে নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র-সহ সামরিক রসদ ফেলে রেখেই পাততাড়ি গুটিয়ে সরে যাচ্ছেন রুশ সেনারা। শনিবার সরকারি ভাবে এ শহর হারানোর কথা ঘোষণা করেছে রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা টাস। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে উদ্ধৃত করে তারা জানিয়েছে, ইজিয়ুম ছেড়ে ডনেৎস্ক-সহ অন্যত্র যাওয়ার জন্য সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে খারকিভের বাসিন্দাদের প্রাণে বাঁচতে রাশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সেখানকার রুশ প্রশাসন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই নির্দেশের পরেই রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চল ছাড়ার জন্য তৎপর হয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। যার জেরে শহরে যানজটও দেখা গিয়েছে।
বস্তুত, এই পরাজয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করার কারণও রয়েছে। ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলে ডনবাস ঘেঁষা এলাকা আক্রমণের জন্য যাবতীয় সামরিক রসদ রাখার ঘাঁটি হিসাবে এই শহরকে ব্যবহার করত রুশ সেনাবাহিনী। এই শহরের দখল হারানোর ফলে সেই বিপুল রসদও হাতছাড়়া হয়েছে তাদের। ফলে যুদ্ধে তার প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
শনিবারের এই ‘জয়’-এর পর তা নিয়ে ভিডিয়োবার্তায় রুশ সেনাবাহিনীকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ‘‘রাশিয়ার সেনাবাহিনী আজকাল তাদের সেরা ক্ষমতার প্রদর্শন করছে— কী ভাবে পিঠ বাঁচাতে হয়।’’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দাবি, চলতি মাসের গোড়ায় পাল্টা আক্রমণে রাশিয়ার কবল থেকে দেশের প্রায় ২,০০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল মুক্ত করেছেন তারা। যদিও ইউক্রেনীয় বাহিনীর তরফে ইজিয়ুম পুনর্দখলের বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে জেলেনস্কির সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই জেরম্যাক নেটমাধ্যমে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, ইউক্রেনীয় সেনারা ইজিয়ুমের অদূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ওই পোস্টে আঙুরের ইমোজিও জুড়ে দিয়েছেন জেরম্যাক। প্রসঙ্গত, ‘ইজিয়ুম’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল, কিশমিশ। এবং কে না জানে, আঙুর শুকিয়েই কিশমিশ তৈরি করা হয়! ওই পোস্টের পরে আর একটি টুইটে জেরম্যাক লিখেছেন, ‘বিশ্বের দ্রুতগামী সেনাবাহিনীর খেতাব দখলের পথে রয়েছেন রাশিয়ার সেনারা... ছুটতে থাকুন!’
সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল ছাড়া উত্তর-পূর্ব দিকেও অগ্রসর হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তারা দেশের উত্তরে কুপিয়ানস্ক শহর দখল করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইজিয়ুম থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা করে রাশিয়া। প্রসঙ্গত, কুপিয়ানস্ক শহর থেকেই ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বে নিজেদের সেনাদের জন্য সামরিক রসদ জোগান দিত রাশিয়া। তবে সেই কুপিয়ানস্কের সিটি হলেও ইউক্রেনের নীল-হলুদ পতাকা উড়িয়ে দিয়েছেন জেলেনস্কির সেনারা। এর আগে বালাকলিয়া শহরের দখলদারিও হাতছাড়া হয়েছে রাশিয়ার। ইতিমধ্যেই হ্রাকোভ-সহ ইউক্রেনের ডজনখানেক গ্রামেও ঢুকে পড়ে সেগুলির পুনর্দখল নিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy