হার্ট অব এশিয়া সম্মেলনে দুই রাষ্ট্রনেতা। ছবি: এএফপি।
দীর্ঘদিনের একটি অক্ষের নিঃশব্দ বদলের সম্ভাবনা আরও একটু উস্কে দিল ‘হার্ট অব এশিয়া’ মঞ্চ। সন্ত্রাস-বিরোধিতায় সরগরম অমৃতসরের সম্মেলন শেষে, এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
অক্ষটি সেই ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার। এক দিকে আমেরিকা-পাকিস্তান অন্য দিকে ভারত-রাশিয়া। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সমীকরণ বদলে গিয়ে অক্ষের নতুন বিন্যাসটি এখন এই রকম: এক দিকে রাশিয়া ও পাকিস্তান। আর এক পক্ষে ভারত-আমেরিকা। অথবা বলা ভাল, ভারত-আমেরিকা-আফগানিস্তান।
অমৃতসরের সম্মেলনে কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির যে ঘনিষ্ঠতা দেখা গিয়েছে, তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি বলেই দাবি করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেখানে একযোগে আক্রমণ করেছেন ইসলামাবাদকে।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, অমৃতসর ঘোষণায় সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানকে এ ভাবে চাপে ফেলার পিছনে হোয়াইট হাউসের দীর্ঘদিনের দৌত্য কাজ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে জানুয়ারি মাস থেকে এই ক্ষেত্রে মার্কিন নীতিতে কোনও বদল আসবে কিনা, সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয় এখনও।
তবে আপাতত যেটা জানা যাচ্ছে, তা হল ‘অমৃতসর-ঘোষণা’য় হোয়াইট হাউসের পরোক্ষ সিলমোহর রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। যেমনটি ছিল ভারতীয় সেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, অমৃতসরের মঞ্চে পাকিস্তান কোণঠাসা হওয়ায়, অস্বস্তি গোপন রাখেনি মস্কো। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘হার্ট অব এশিয়ায় উপস্থিত রাশিয়ার প্রতিনিধির বক্তব্য ও আচরণ থেকেই স্পষ্ট যে, তারা পাকিস্তানের পাশে। ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে ইসলামাবাদের সঙ্গে। উরির হামলার পর, ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও ইসলামাবাদের সঙ্গে মস্কোর সামরিক মহড়ার বিষয়টি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না।’’
হার্ট অব এশিয়া সম্মেলনে উপস্থিত আফগানিস্তানের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাশিয়ার কূটনীতিক জামির কাবুলভকে পাক-সন্ত্রাস নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের মঞ্চ ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের জন্য নয়। কে কোন দেশের বিরুদ্ধে কতটা চাপ তৈরি করতে পারল, তার খেলা নয়।’’ পাক সন্ত্রাস নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান কাবুলভ।
কিন্তু দু’মাস আগের পাক-রুশ যৌথ সেনা মহড়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘ভারতও তো আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমঝোতা করে এগোচ্ছে। তা নিয়ে আমরা কি কখনও আপত্তি করেছি? তুলনায় পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সামরিক সমঝোতা যথেষ্ট ‘মাঝারি’ মানের।’’
পরিস্থিতির এই বদলের দিকে সতর্ক নজর রাখছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে এ বার রাশিয়ার সঙ্গে আলাদা ভাবে সক্রিয় কূটনৈতিক দৌত্য চালানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি ‘ট্র্যাক টু’-র মাধ্যমে ইসলামাবাদের গতিবিধিও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলবে।
তবে গত কাল অমৃতসর-ঘোষণায় পাক জঙ্গিদের নাম রাখার বিষয়টি আগামী দিনে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সুবিধা দেবে বলেই আশা করছে সাউথ ব্লক।
অন্য দিকে অমৃতসর সম্মেলন শেষ হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন পাক বিদেশনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। ভারত চাইলেও পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবে না বলে আজ মন্তব্য করেছেন তিনি। সন্ত্রাসে পাক মদতের নিন্দা করে গত কাল বিবৃতি দিয়েছিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানি। আজিজের বক্তব্য, ‘‘ভারতকে খুশি করতেই আফগানিস্তান এই বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু অনেক বিষয়ে আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলা ছাড়া আফগানিস্তানের কাছে কোনও পথ নেই। তাই এই সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবে না ভারত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy