রবার্ট মুগাবে। ফাইল চিত্র।
দাবিটা জোরালো হচ্ছিল গত কাল থেকে। শেষমেশ দলের প্রধানের পদ খোয়াতেই হল প্রবীণ শাসককে। রবার্ট মুগাবেকে রবিবার বহিষ্কার করল তাঁর দল জ্যানু-পিএফ।। প্রায় চার দশক ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ। সেই সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সোমবারই প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে মুগাবেকে।
যে দলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুগাবে, সেই জ্যানু-পিএফ-এর সদস্যরা রবিবার ভোটাভুটিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সোমবার দুপুরের মধ্যে বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট যদি পদত্যাগের কথা ঘোষণা না করেন, তা হলে পার্লামেন্টে তাঁকে ইমপিচ করার পথেই হাঁটবেন তাঁরা।
দলের প্রধানের পদে নিযুক্ত করা হচ্ছে এমারসন মানগাগওয়াকে। যাঁকে এ মাসের গোড়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ছেঁটে ফেলেছিলেন খোদ মুগাবে। ৯৩-এর এই শাসকের স্ত্রী গ্রেসকেও দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে। শনিবার থেকেই মুগাবেকে হঠানোর দাবিতে উত্তাল জিম্বাবোয়ের পথঘাট।
আজ মুগাবেকে পার্টি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন জ্যানু-পিএফ-এর সবাই। হারারেতে দলের সদর দফতরে নেচে-গেয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন তাঁরা। মুগাবেকে বের করে দেওয়ার খবর দেন এক সময়ে মুগাবেরই অন্যতম অনুগত (প্রবীণ শাসকের পুত্র বলে যিনি দাবি করতেন নিজেকে) এবং প্রাক্তন খনিমন্ত্রী ওবার্ট এমপোফু। তিনি বলেন, হৃদয়বিদারক হলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
জিম্বাবোয়ের সংবাদমাধ্যমের দাবি, সেনা অফিসারদের সঙ্গে মুগাবের আজ এক প্রস্ত বৈঠকের কথা রয়েছে। তবে দলের অন্দরেই সমর্থনের ভিত ধসে যাওয়ায় এই বৈঠক থেকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু হওয়ার নেই বলেই কূটনীতিকদের ধারণা। বস্তুত মুগাবের সামনে এখন দু’টো রাস্তা খোলা। এক, নিজেই পদত্যাগ করা। আর দুই, পার্লামেন্ট কখন তাঁকে বহিষ্কার করে, তার জন্য অপেক্ষা করা।
ডিসেম্বরে জ্যানু-পিএফ-এর কংগ্রেস বসছে। সেখানেই আনুষ্ঠানিক ভাবে এমারসন মানগাগওয়াকে দলের প্রধান ঘোষণা করা হতে পারে। তার পরে আগামী বছর নির্বাচনে বেছে নেওয়া হবে ভাবী প্রেসিডেন্টকেও। মুগাবেকে নিয়ে আপত্তি ওঠার পর থেকেই জিম্বাবোয়ের রাজনীতিতে ঘোরাফেরা করছিল মানগাগওয়ার নাম। ৬ নভেম্বর তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরানোর পর মুগাবেকে নিয়ে দলে আপত্তি চরমে ওঠে। বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি মানগাগওয়াকে। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই যে শনিবার মুগাবে-বিরোধী মিছিলে তাঁর ছবি হাতে হাঁটতে দেখা গিয়েছে অনেককেই।
কোনও কোনও সূত্রে দাবি, প্রেসিডেন্ট মুগাবের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় হাত রয়েছে মানগাগওয়ার। যদিও এক সময় মুগাবেরই ডান হাত ছিলেন তিনি। যা থেকে কূটনীতিকদের কারও কারও আশঙ্কা, মুগাবের দমনপীড়নের রাজনীতি হয়তো আবার শুরু হবে মানগাগওয়ার হাত ধরে। কারণ মুগাবের মতো তাঁর বিরুদ্ধেও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে।
আটের দশকে জিম্বাবোয়ে সেনার ‘ফিফ্থ ব্রিগেড’ (উত্তর কোরিয়ার সেনা-প্রশিক্ষণে তৈরি বাহিনী) নৃশংস ভাবে প্রাণ কেড়েছিল ২০ হাজার নাগরিকের। মাটাবেলেল্যান্ড নামে একটি জায়গার দখল নিতে চলেছিল হত্যালীলা। ১৯৮১ সালে তৈরি এই বাহিনী সক্রিয় ছিল ২০০৬ পর্যন্ত। সেই গণহত্যার অভিযোগ মাথায় থাকলেও মানগাগওয়ার পাশে রয়েছে এখনকার সেনা। ফলে মুগাবে সরলেও জিম্বাবোয়েতে কতটা দিন বদল হবে, সে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy