ষোলো বছর বয়সে প্রেমিকের কাছে ‘ধর্ষিতা’ হয়েছিল মেয়েটি। কারণ, যৌন সম্পর্ক হয়েছিল তাঁর অনিচ্ছায়। যদিও, প্রেমিক মনে করেছিল তা সহবাসই। এই ঘটনা আজ থেকে ২১ বছর আগের। যখন ধর্ষণ নিয়ে ছিল না এত আলোড়ন, ছিল না প্রকাশ্য প্রতিবাদ, মিডিয়া ইস্যু। কোনটা ধর্ষণ, কোনটা সহবাস তা নিয়ে ধারণা, সত্যির দোলাচল চলতে থাকে ১৬ বছরের মেয়েটার মনে। টিভিতে দেখেছে সে ধর্ষণ মানেই নৃশংস, পাশবিক এক ব্যাপার। অচেনা, নির্জন রাস্তায় অপরিচিত ব্যক্তির লালসার শিকার হওয়া। কিন্তু তার ঘটনা তো এর সঙ্গে মেলে না। কোনও অপরিচিত স্থান নয়, ঘটনা যে ঘটেছে তার নিজের বিছানাতেই। ধর্ষণ যে করেছে সে তার প্রেমিক। তবে কি এটা ধর্ষণ? ১৮ বছরের প্রেমিকও মনে করেছিল এটা সহবাসই। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও মেয়েটি তো তার প্রেমিকাই। তাই কখনও কখনও অগোচরে অপরাধ বোধ তৈরি হলেও বার বার সে নিজেকে বুঝিয়েছে, ‘না, এটা সহবাসই।’ হয়তো সারা জীবনই এই ধারণাই থেকে যেত, যদি না ন’বছর পর এক দিন তাঁর হাতে এসে পৌঁছত সেই প্রেমিকার চিঠি।
‘ছোট থেকেই আমাদের মতো মেয়েদের শেখানো হয় ধর্ষণের পিছনে তোমার দিক থেকেই কোনও কারণ থাকে। হয় তোমার স্কার্ট খুব বেশি ছোট ছিল। বা একটু বেশিই হাসছিলে। বা হয়তো তুমি মদ্যপ ছিলে। সত্যি বলতে কী আমিও এই সব কাজ অপরাধ ভাবতাম। ধর্ষণ আমার নিজেরও লজ্জা। বহু বছর পর বুঝতে পেরেছিলাম সেই রাতে আমার ধর্ষিত হওয়া শুধু একটা জিনিসই রুখতে পারতো। না তা আমার স্কার্ট নয়। আমার হাসি বা সরল মনের বিশ্বাসও নয়। একমাত্র আমার ধর্ষকই এই ঘটনা রুখতে পারতো। যদি সে নিজেকে রুখতে চাইতো।’’ এই উপলব্ধি থেকেই টম স্ট্রেঞ্জারকে চিঠি লিখেছিলেন থরডিস এলভা। ততদিনে ধর্ষণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়েছে তাঁর। তাই ‘ধর্ষক’-এর কাছ থেকে চিঠির উত্তর আশা করেননি এলভা। কিন্তু তাঁকে অবাক করেই চিঠির উত্তর দেন টম। স্বীকার করেন, হ্যাঁ, সেদিন ধর্ষণই করেছিলেন, তিনি অনুতপ্ত।
টক শো-এ দর্শকদের হাততালি
এর পরের ঘটনা হেঁটেছে কিছুটা অন্য পথে। ধর্ষক-ধর্ষিতা সমীকরণের বাইরে। আট বছর ধরে চিঠি চালাচালির পর দু’জনের দেখা হয়। ধর্ষণ ও তার পরবর্তী ট্রমা দিয়ে বই লেখেন তাঁরা। সম্প্রতি একটি টক শো-তে দু’জনে অংশ নেন এবং সেই টক শো-র ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এই ঘটনা হয়তো এক ধর্ষকের উপলব্ধি ও উত্তরণের বিরল নজির হয়ে থাকবে ঠিকই। অন্য দিকে আমরা এমন একটা সময় দাঁড়িয়ে রয়েছি যখন আলোড়ন উঠছে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস ধর্ষণ কিনা, বৈবাহিক ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিনা-র তো প্রশ্নগুলো নিয়ে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস ধর্ষণ। যে ধর্ষক, সে ধর্ষকই। ধর্ষণ অপরাধ। সেই অপরাধে টমও দুষ্ট। কিন্তু শাস্তি নয়, ‘আমি ধর্ষণ করেছি’’ স্বীকার করে তার প্রাপ্য হচ্ছে টক শো-র অসংখ্য মানুষের হাততালি, ফেসবুকে ১০ হাজার মানুষের প্রতিক্রিয়া আর কয়েক হাজার শেয়ার। তাহলে কি শুধু স্বীকারোক্তি আর অনুশোচনা দিয়েই ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকে রেহাই পাওয়া যায়? এই প্রশ্ন উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা প্রবল। এই সমর্থন, বাহবা, দিকে দিকে ঘটে চলা ধর্ষণের ভয়াবহতাকে কোথাও লঘু করে ফেলবে না তো? এ প্রশ্নও উঠছে।
এটা ঘটনা যে, অপরাধীর অনুশোচনা, আরও ঠিক ভাবে বললে প্রকাশ্য আন্তরিক আত্মসমালোচনা, তাকে ভবিষ্যতে একই অপরাধ থেকে আটকায়, বা আটকাবার সম্ভাবনা বাড়ায়। কিন্তু এটাও ঘটনা, টম-এলভার ঘটনাটা বিচ্ছিন্ন। দাম্পত্য সম্পর্কে, প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্কে বলপূর্বক সহবাসের ঘটনা যতটা সামনে আসে তা আসল পরিসংখ্যানের কণামাত্র। এলভা যেমন মেনে নিয়েছিল মেনে নিতে হয় বলে, টম যেমন এটাকেই স্বাভাবিক সহবাস বলে নিজেকে বুঝিয়েছিল, তেমনটাই ঘটে ঘর থেকে ঘরে। টমের স্বীকারোক্তি, এলভার ভাবনার পরিবর্তন যদি তেমন কিছু মানুষকে ভাবাতে পারে, তবেই মঙ্গল।
আরও পড়ুন: ইভাঙ্কার ব্র্যান্ড রিজেক্ট করায় ট্রাম্পের তোপে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy