Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

তিনি লিখেছেন, সুর দিয়েছেন তিনিই?

কলকাতার মেয়ে লোকেশ্বরী দাশগুপ্ত এখন বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসে নাচের শিক্ষক।

নতুন দেশে: চিত্রাঙ্গদার অনুপ্রেরণায় ‘চিত্রা’।

নতুন দেশে: চিত্রাঙ্গদার অনুপ্রেরণায় ‘চিত্রা’।

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৯ ০৪:১৪
Share: Save:

বাংলায় ষড়ঋতুর ছ’টি নিয়েই গান লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বের সব জায়গায় অবশ্য এই ছ’টি ঋতুর পৃথক অস্তিত্ব অনুভব করা যায় না। যেমন চিন। তাই চিনে রবীন্দ্রজয়ন্তীর উদযাপনে লোকেশ্বরী বেছেছিলেন ছ’টি ঋতুর রবীন্দ্রসঙ্গীতকেই।

কলকাতার মেয়ে লোকেশ্বরী দাশগুপ্ত এখন বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসে নাচের শিক্ষক। বুধবার তাঁর উদ্যোগেই বেজিংয়ের ফা‌ংহাও থিয়েটারে আয়োজিত হল রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নৃত্যের মেলবন্ধনে এক আলেখ্য। ৫০ মিনিটের ওই অনুষ্ঠানে যেমন ছিল ‘চক্ষে আমার তৃষ্ণা’, তেমনই ছিল ‘এসো শ্যামল সুন্দর’। ছিল ‘আমার রাত পোহালো’, ছিল ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’-ও।

রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসার পরে বিশ্বভারতীতে আসা ও পরবর্তীতে বিশ্বভারতীতে চিনা ভবনের প্রতিষ্ঠাতা, থান ইয়ুন শানের সঙ্গে কবিগুরুর সম্পর্ক নিয়েই সেমিনারের আয়োজন করেছিল পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ভাষা বিভাগ। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন, ৭মে মঙ্গলবার ও ৮মে বুধবার— এই দু’দিনই ছিল আলোচনা, অনুষ্ঠান। তান ইউয়ান শানের পুত্র, ভারতে দীর্ঘদিন গবেষণা-অধ্যাপনা করা থান ছুং নিজে উপস্থিত ছিলেন প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে।

লোকেশ্বরী দাশগুপ্ত

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী লোকেশ্বরী বললেন, ‘‘প্রথম দিন আমরা আনন্দধারা বহিছে ভুবনে, তোমার খোলা হাওয়ার মতো কয়েকটা গানের সঙ্গে পারফর্ম করি। আমার সঙ্গে নেচেছেন এখানে পোস্ট-ডক্টরেট করতে আসা এক ছাত্রী রশ্মিতা নাথ। গেয়েছেন দূতাবাসেরই এক কর্মীর স্ত্রী, পায়েল চৌধুরী।’’

দর্শকদের বোঝার জন্য প্রথম দিন মঞ্চে পর্দায় চিনা ভাষায় গানের অনুবাদ ফুটে উঠছিল। বুধবার অবশ্য গানগুলির অনুবাদ আগেই মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল দর্শকদের কাছে। দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় অভিভূত লোকেশ্বরী। তাঁর কথায়, ‘‘গত বারই প্রথমবার পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেটাও দারুণ সফল হয়েছিল। এ বারও পুরনো বেজিংয়ের ওই প্রেক্ষাগৃহ, ফাংহাও থিয়েটার ছিল পুরোপুরি ভরা। অনুষ্ঠান শেষের পর বিস্ময় ও শ্রদ্ধা নিয়ে অনেকে জানতে চেয়েছেন একজন মানুষ কী ভাবে একই সঙ্গে গান লিখেছেন, সুরও দিয়েছেন।’’

কেবল বাঙালিরাই নন, চিনা ছাত্রছাত্রীরাও যুক্ত ছিলেন এই উদ্‌যাপনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহায়তায় তাঁরা গেয়েছেন, আবৃত্তি করেছেন। তা হয়েছে বাংলা ভাষায়, চিনা ভাষাতেও। বুধবার, কবিগুরুর ‘চিত্রাঙ্গদা’কে ভিত্তি করে চিনেরই একটি সাংস্কৃতিক দল অভিনয় করেছেন নৃত্যনাট্য, ‘চিত্রা’। তাতে কবিগুরুর রচিত কাহিনির সঙ্গে যোগ করা হয়েছে সমকালীন উপাদান।

চিনে রবীন্দ্রনাথকে দেখা হয় অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে, অভিজ্ঞতা লোকেশ্বরীর। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সবাই রবীন্দ্রনাথের নাম জানেন। স্কুলপাঠ্য বইতে চিনা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা রয়েছে। এখন আমার ছাত্রছাত্রী ২০০ ছুঁয়েছে। তার মধ্যে ২৭ থেকে ৬৫ বছরের মানুষ রয়েছেন। আমি কত্থক শেখালেও তাঁরা আমার থেকে রবীন্দ্রনৃত্যও শিখতে চান। আমিও তাঁদের তা শেখাই।’’

এর পরেও ভারতীয় দূতাবাসের উদ্যোগে বেজিংয়ে উদযাপন হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী। গত বারের মতো এ বারও তার দায়িত্বে লোকেশ্বরী। তিনি বললেন, ‘‘এ মাসেই ওই অনুষ্ঠান হবে। ওটা একেবারে খোলা আকাশের নীচে করব আমরা। আসলে এই সময়টায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত অনুষ্ঠান হয়, মনে হয় চিনেও আমাদের বাংলার মতো কবিপক্ষ চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore Bejing China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE