আশ্রয়: জঙ্গিদের দাপটে পাল্টাতে হয়েছে ঠাঁই। মারাউই শহর থেকে উৎখাত হওয়া পরিবারের ঠিকানা এখন দক্ষিণ ফিলিপিন্সের মিন্দানাও দ্বীপের একটি ত্রাণ শিবির। সোমবার। ছবি: এএফপি।
আকাশে ঘনঘন চক্কর কাটছে হেলিকপ্টার। গোটা শহরটাই সেনার দখলে। রাস্তায় কোথাও আইএসের কায়দায় মাথায় কালো ফেট্টি বাঁধা, রাইফেল হাতে জেহাদি দেখা মাত্রই চলছে গুলি। প্রত্যুত্তরে গুলি চালাচ্ছে জেহাদিরাও। কখনও আবার জঙ্গিদের গোপন ডেরা লক্ষ করে চলছে রকেট হামলা। সেই সঙ্গেই চলছে স্থানীয় বাসিন্দাদের শহর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজও।
ইরাকের মসুল নয়। এ ছবি দক্ষিণ ফিলিপিন্সের মারাউই শহরের। গত এক সপ্তাহ ধরে জঙ্গিদের কবলে থাকা এই শহরকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র।
এগারো মাসের শাসনকালে এর আগে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তেকে। মাদক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে এসেছেন এত দিন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভূরিভূরি অভিযোগ উঠলেও পাত্তা দেননি। সেই রডরিগোর লড়াই এখন ইসলামি জঙ্গিদের সঙ্গে। যাদের একটা বড় অংশের পিছনে আইএসের মদত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ইরাক ও সিরিয়ায় কোণঠাসা হওয়ার পরে এখন ফিলিপিন্সে নিজেদের শক্ত ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে বলে এ দেশের গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
এশিয়ার একমাত্র খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশ ফিলিপিন্সের মারাউই শহরে বরাবারই প্রচুর মুসলিমের বাস। সেই শহরেই শুরু হয়েছে আইএস ধাঁচের জঙ্গিপনা। এর আগে যে ইসলামি জঙ্গিরা এ দেশে মাথাচাড়া দেয়নি, তেমনটা নয়। স্থানীয় কিছু বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী মাঝেমধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়। সত্তরের দশক থেকে ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাসে মৃত্যু হয়েছে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের। এ বারে অশান্তির সূত্রপাত ইসনিলন হাপিলন নামে এক জঙ্গি নেতার গ্রেফতারিতে। যার জেরে গত মঙ্গলবার থেকে শহর জুড়ে তাণ্ডব শুরু করে দেয় তার সমর্থকেরা। এক খ্রিস্টান ধর্মগুরু-সহ ১৪ জনকে পণবন্দি করে তারা। তাঁরা এখন কোথায় বা কেমন আছেন, কেউ জানে না। গত কাল একটি খালের ধার থেকে ৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মিরনা বানদুঙ্গ নামে স্থানীয় এক মহিলা বললেন, ‘‘আমি ইসলামি প্রার্থনার কয়েক লাইন জানতাম। তাই আমাকে ওরা ছেড়ে দিয়েছিল। বাকিরা আমার মতো ভগ্যবান ছিলেন না।’’
আরও পড়ুন: মাওবাদীদের রোষে এ বার অক্ষয়-সাইনা
পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সেনা ডাকতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট রডরিগো। জারি করেছেন সামরিক আইনও। সেনার তরফে আজ জানানো হয়েছে, শহরের অর্ধেকটা জঙ্গিমুক্ত করা গেলেও কাজ এখনও বাকি। পিছনে আইএস থাকলেও স্থানীয় মাউতে জঙ্গি গোষ্ঠীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে রডরিগো প্রশাসন। কারণ সম্প্রতি তারাই আইএসের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে। সেনার হিসেবে আড়াইশোর মতো মাউতে জঙ্গি তাণ্ডব চালাচ্ছিল মারাউইতে। এক সপ্তাহের অভিযানে খতম করা গিয়েছে ৬০ জনকে। মৃত্যু হয়েছে ২০ জন সেনার।
কিন্তু এই সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা গিয়েছেন শিশু ও মহিলা-সহ ১৯ জন সাধারণ মানুষও। এর জেরে সামরিক আইনের বিরুদ্ধে আজ পথে নামেন ফিলিপিন্সের সাধারণ মানুষ। ম্যানিলায় সেনা সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। মারাউই ছেড়ে এখনও যে সব বাসিন্দারা যেতে পারেননি, তাঁরাও চাইছেন না, সেনা আকাশপথে হামলা চালাক। সেনা অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছে যে, জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে, এমন জায়গাই বেছে বেছে নিশানা করছে তারা। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের ভয় মেটানো যাচ্ছে না। এক বাসিন্দা তো বলেই ফেললেন, ‘‘মরতে হলে মরব। কিন্তু মৃত্যুর চেয়ে অনেক ভয়ঙ্কর মরে যাওয়ার এই আতঙ্ক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy