Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শহর ঘিরেছে আগুন, আশ্রয় সৈকতে

কয়েক মাস ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সব চেয়ে ভয়ঙ্কর ভিক্টোরিয়া আর নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) প্রদেশের।

দাবানলের দাপটে আকাশের রং লাল। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার মাল্লাকুটা সৈকতে। রয়টার্স

দাবানলের দাপটে আকাশের রং লাল। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার মাল্লাকুটা সৈকতে। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
ক্যানবেরা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

মাল্লাকুটা হোক বা বেটসম্যান বে— দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার এই সব সৈকতশহর বছর শেষে পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা থাকে। এ বারেও ভিড়টা নেহাত কম নয়। তবে পর্যটক নয়, এই ভিড় আতঙ্কগ্রস্ত, কোণঠাসা মানুষের। প্রাণ বাঁচাতে যাঁরা এই মুহূর্তে ঘরবাড়ি ছেড়ে আস্তানা গেড়েছেন সমুদ্রের পাড়ে। অনেকে আবার নৌকা ভাড়া করে আশ্রয় নিয়েছেন সমুদ্রেই।

কয়েক মাস ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সব চেয়ে ভয়ঙ্কর ভিক্টোরিয়া আর নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) প্রদেশের। এনএসডব্লিউ-এর বেটসম্যান বে থেকে ভিক্টোরিয়ার বায়ার্নসডেল পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকা পুড়ে খাক। হাজার পাঁচেক মানুষ ঘরছাড়া। সোমবার নিউ সাউথ ওয়েলসের কোরবারগো শহরে আগুনে পুড়ে বাবা ও ছেলের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন দমকলকর্মী। আরও চার জন নিখোঁজ। এনএসডব্লিউ এবং ভিক্টোরিয়ায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সাহায্য করতে সেনাবাহিনীর কপ্টার ও নৌকা ব্যবহার করা হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে প্রশাসন। সেনা নামিয়ে আকাশ ও সমুদ্রপথে উদ্ধারের কথাও ভাবা হচ্ছে।

বেটসম্যান বে এলাকায় গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। যা নজিরবিহীন। তার উপরে শুষ্ক আবহাওয়া, ঘনঘন বজ্রপাত আর ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। যার ফলে আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, হাওয়ার গতিপথ উল্টো হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার সৈকতগুলি তুলনামূলক নিরাপদ। স্থানীয়েরা তাই শহর ছেড়ে সৈকতের দিকে পালাচ্ছিলেন। সোমবার থেকে সে-দিকেও আগুন ছড়ানোয় উপকূলবর্তী এলাকা এখন সত্যিই কতটা নিরাপদ, সেই প্রশ্ন উঠছে। এক দিকে আগুন, আর এক দিকে সমুদ্র। দাবানলের জেরে বেশ কিছু, উপকূলবর্তী এলাকা বিচ্ছিন্ন। কয়েকটি এলাকায় জলপথে রসদ পাঠানোর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ভারত থেকে ফেরা আটকাতে দাওয়াই, বাংলাদেশে সীমান্ত এলাকায় বন্ধ মোবাইল পরিষেবা

ভিক্টোরিয়ার মাল্লাকুটা সৈকতের কাছেই থাকেন ডেভিড জেফ্রি। শহরে ছোটখাটো ব্যবসা রয়েছে তাঁর। জানালেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ বিপদসঙ্কেতের সাইরেনে ঘুম ভেঙেছিল। শুনলাম, এলাকা খালি করতে প্রশাসন নির্দেশিকা জারি করেছে। সরে যেতে বলা হয়েছে পর্যটকদেরও। তাই সপরিবার এখন সৈকতেই ঠাঁই নিয়েছি।’’ এই সব সৈকতশহরে এখন যত দূর চোখ যায় আকাশের রং একটাই— টকটকে লাল। জেফ্রি বললেন, ‘‘অন্য দিন সকাল ৮টায় স্পষ্ট আলো থাকে। মঙ্গলবার ঘুম ভেঙে মনে হল— যেন মাঝরাত! আকাশ ঘন কালো ধোঁয়ায় ঢাকা। কিছু ক্ষণ পরেই আকাশের রং গনগনে লাল হয়ে গেল। ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। ধূসর ছাইয়ের চাদরে ঢেকেছে সব কিছু।’’

দুর্যোগের এই ঘনঘটাতেও অবিচল প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তাঁর বিরুদ্ধে বহু দিনের অভিযোগ, পরিবেশবান্ধব নীতি না নেওয়ার ফলে অস্ট্রেলিয়ায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়েই চলেছে। নববর্ষের প্রাক্কালে দেশবাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় মরিসন বলেন, ‘‘আশা করেছিলাম, ভাল খবর দিয়ে নতুন বছর শুরু করতে পারব। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে তা হচ্ছে না। তবে আমি নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়ার মানুষ যে ভাবে সব অনুকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন, এ বারও তা-ই করবেন।’’ পরিবেশ দফতর জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে টানা বৃষ্টি শুরু না হলে দাবানল কমবে না।

বর্ষবরণের রাতে আতসবাজির অনুষ্ঠানে যে বিপুল অর্থ খরচ হয় তা এ বছর আগুন নেভানোর কাজে লাগাতে সিডনির প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ একটি আবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে সে কথায় কান দেননি সিডনির মেয়র ক্লোভার মুর। বলেছেন, ‘‘এই আতঙ্কের সময়ে মানুষের মনে আশা জাগাবে বর্ষবরণ রাতের উৎসব!’’ সংবাদ সংস্থা

অন্য বিষয়গুলি:

Forest Fire Australia Sea Beach
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy