Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলে প্রথম রূপান্তরকামী সঞ্চালক

ছোটবেলা থেকেই একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। মার্ভিয়ার পণ ছিল, যা-ই ঘটুক, রাস্তায় নাচগান করে, ভিক্ষে করে বা শরীর বেচে জীবনযাপন করবেন না।

মার্ভিয়া মালিক

মার্ভিয়া মালিক

সংবাদ সংস্থা
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

হয় সাংবাদিক, নয়তো আইনজীবী। মনে ছিল এই দু’টি পেশার কথা। প্রথমটা বেছে নিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন লাহৌরের রূপান্তরকামী মার্ভিয়া মালিক। স্থানীয় এক খবরের চ্যানেলের উপস্থাপিকা হয়ে শিরোনামে এসেছেন তিনি। পাকিস্তানের মতো দেশে এমন ঘটনা এই প্রথম।

মার্ভিয়া স্নাতক। এখন স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করছেন। সাংবাদিকতার পাঠ নিয়েছেন পাশাপাশি। মডেলিংও করছেন সমান তালে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে মডেলিং-এর অনেক সুযোগ এসেছে। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আমার মতো আর পাঁচ জনের জন্য কিছু করতে। যেখানেই যাই, রূপান্তরকামী মানুষদের এখনও সবাই ঘৃণা করে। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা শিক্ষিত। ডিগ্রি নিয়েও কিছু করার মতো পাই না। না আছে সুযোগ, না দেয় কেউ উৎসাহ। এই জায়গাটাই পাল্টাতে চাই আমি।’’

ছোটবেলা থেকেই একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। মার্ভিয়ার পণ ছিল, যা-ই ঘটুক, রাস্তায় নাচগান করে, ভিক্ষে করে বা শরীর বেচে জীবনযাপন করবেন না। তিনি বলছেন, ‘‘রূপান্তরকামী বললে ওই ছবিগুলোই ভাসে। অসম্ভব দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়। পরিবার চায় না, মারধর করে। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এই জায়গায় পৌঁছতে কষ্ট করতে হয়েছে আমায়। পার্লারে কাজ থেকে বহু উল্টোপাল্টা কাজ করেছি। কিন্তু ভিক্ষে বা নাচ নয়। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়তে দিয়েছে পরিবার। কিন্তু নিজের জেদে পড়াশোনা চালিয়েছি।’’

জীবন জুড়ে সয়েছেন নানা অপবাদ, অপমান। দু’বছরের ইন্টারমিডিয়েট কোর্স করেছেন ছেলেদের কলেজ থেকে। যা নয় তাই বলা হয়েছে তাঁকে। কোনও জবাব দেননি মার্ভিয়া। উপেক্ষাই ছিল তাঁর অস্ত্র। এখন তাঁর ক্ষোভ, ‘‘পাকিস্তান বহু দিন স্বাধীন হয়েছে। অথচ বাকি নাগরিকদের মতো আমাদের সমানাধিকার নেই। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে কিছুই হয়নি।’’

তাই লড়াকু মার্ভিয়া চান, ‘‘পারিবারিক সম্পত্তির অংশ পেতে যেন কষ্ট করতে না হয় রূপান্তরকামীদের। সরকার এই আইনের কথা অন্তত ভাবুক। আমার মতো কত বন্ধুই ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও কাজ পায় না। কী করবে ওরা? বাধ্য হয়ে পথে নামতে হয়।’’

নয়া চাকরিতে এসে প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্য দুনিয়া যেন খুলে গিয়েছে মার্ভিয়ার। বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করে ইন্টারভিউ দিয়ে কাজ পাওয়ার পরে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে এক লাফে। বাকি রূপান্তরকামীদের তিনি বলেন, ‘‘ওদেরও এই পরিবর্তন হোক। যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুক।’’ লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে কখনওই মাথা ঘামান না মার্ভিয়া। বলেন, ‘‘ওই পরিচয় তো পোশাকের আড়ালে। মানসিকতা না বদলালে কিছু হবে না।’’

মার্ভিয়াকে চ্যানেলে কাজ দিয়ে সেই পরিবর্তনের ইঙ্গিতই কি দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ? চ্যানেলের তরফে জুনেইদ মামুদ বলছেন, ‘‘এমন কিছু করব ভেবে আমরা ওঁকে নিইনি। যোগ্যতা প্রমাণ করেই ও এসেছে। তবে মার্ভিয়াকে দেখে অন্য কোনও রূপান্তরকামী যদি এই কাজে আসতে চান, ক্ষতি কী?’’ বস্তুত মার্ভিয়ার মতোই বীণা নামে আর এক রূপান্তরকামী ওই চ্যানেলের ডেস্কে কাজ পেয়েছেন। নেট দুনিয়া স্বাগত জানিয়েছে দুই সিদ্ধান্তকেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE