Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ইহুদি কন্যার বন্ধু হিটলার, বলছে ছবি

দ্বিতীয় বার দেখলেই চমকে উঠবেন। হাসিমুখের মানুষটি যে অ্যাডল্ফ হিটলার। নিষ্ঠুর, স্বৈরাচারী, নাৎসি বাহিনীর ‘ফ্যুরর’। সেই নির্মম মানুষটা এমন করে হাসতে পারে!

ইতিহাস: রোসার সঙ্গে হিটলারের ১৯৩৩ সালে তোলা এই  ছবিই নিলামে উঠছে। গেটি ইমেজেস

ইতিহাস: রোসার সঙ্গে হিটলারের ১৯৩৩ সালে তোলা এই ছবিই নিলামে উঠছে। গেটি ইমেজেস

সংবাদ সংস্থা
নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

একটা বাচ্চা মেয়ে ও একজন মাঝবয়সি পুরুষের দু’টি ছবি। দু’জনের মুখেই হাসি। দেখে মনে হচ্ছে, খুব আনন্দে রয়েছে তারা।

দ্বিতীয় বার দেখলেই চমকে উঠবেন। হাসিমুখের মানুষটি যে অ্যাডল্ফ হিটলার। নিষ্ঠুর, স্বৈরাচারী, নাৎসি বাহিনীর ‘ফ্যুরর’। সেই নির্মম মানুষটা এমন করে হাসতে পারে!

চমকের এখানেই শেষ নয়। যে মেয়েটির সঙ্গে হাসি মুখে ছবি তুলেছেন হিটলার, সেই রোসা বেরনাইল নিয়েনাউ ছিল ইহুদি। ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল যাঁর নির্দেশে, সেই হিটলারের সঙ্গে এক ইহুদি কন্যার এই বন্ধুত্ব প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। সৌজন্যে, ওই দু’টি ছবি।

১৯৩৩ সাল হাইনরিখ হফমান নামে এক জার্মান চিত্রগ্রাহকের তোলা ছবি দু’টিতে হিটলারের স্বাক্ষরও রয়েছে। আগামী সপ্তাহে একটি মার্কিন সংস্থা নিলামে তুলছে ছবি দু’টিকে। দাম উঠতে পারে দশ হাজার ডলার।

প্রচারের খাতিরে অনেক সময়েই বাচ্চাদের সঙ্গে ছবি তুলতেন হিটলার। কিন্তু এই ছবিটা তো নিছক ছবি নয়। কারণ মেয়েটি ইহুদি জেনেও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন হিটলার। এখানেই ছবি দু’টির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

কী করে এই দু’জন অসম বয়সি, অসম মনোভাবের মানুষের মধ্যে এত গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল, সেই গল্প বলা রয়েছে নিলাম সংস্থার ওয়েবসাইটেই।

ইতিহাস: রোসার সঙ্গে হিটলারের ১৯৩৩ সালে তোলা এই ছবিই নিলামে উঠছে। গেটি ইমেজেস

১৯৩৩ সালের ২০ এপ্রিল। সে দিন অ্যাডল্ফের জন্মদিন। আল্প্স পর্বতমালার কোলে ওবেরসাল্সবের্গে হিটলারের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের মধ্যেই রয়েছে রোসা। সঙ্গে তার মা। ঘুরে ঘুরে অনেকের সঙ্গেই কথা বলছেন হিটলার। রোসার সঙ্গেও। ছোট্ট মেয়েটি হিটলারকে জানাল, আজ তারও জন্মদিন। শুনে নাকি দারুণ মজা পেয়েছিলেন হিটলার। রোসা আর তার মাকে ডেকে নিয়েছিলেন বাড়ির ভেতরে। বাড়ির লাগোয়া লনেই রোসার সঙ্গে এই ছবি দু’টি তোলেন হিটলার। পরে সই করে পাঠিয়ে দেন রোসার মায়ের কাছে। ছবির উপরে অ্যাডল্ফ লিখেছিলেন, ‘আমার প্রিয় রোসা’। নীচে সই করে লিখে দেন, ‘মিউনিখ, ১৬ জুন ১৯৩৩’। সেই ছবি দু’টি পেয়ে রোসা আবার নিজের ‘স্বাক্ষর’ যোগ করে, ছবির চারপাশে এঁকে দেয় সূর্যমুখী ফুল।

রোসার মা ইহুদি। নাৎসিদের চোখে তাই সে-ও ইহুদি। এই খবর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পেয়ে যান হিটলার। তবু বন্ধুত্ব ছিন্ন করেননি। বছর পাঁচেক ধরে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি। তত দিনে নাৎসি বাহিনীর অন্য শীর্ষ কর্তারা বলতে শুরু করেছেন, এক ইহুদি মেয়ের সঙ্গে হিটলারের বন্ধুত্ব চলে না। ১৯৩৮ সালে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেন অ্যাডল্ফ। মেয়েটির মাকেও নাৎসি বাহিনীর তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই তিনি যেন হিটলারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা না করেন।

পরের বছর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ছ’বছর পরে যখন থামে, তখন হিটলার বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ৬০ লক্ষ ইহুদি। তাদের মধ্যে রোসা না থাকলেও বেশি দিন বাঁচেনি মেয়েটি। হিটলারের সঙ্গে দেখা হওয়ার ঠিক এক দশক পরে, মিউনিখের এক হাসপাতালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় হিটলারের ‘সুইটহার্ট’।

অন্য বিষয়গুলি:

Picture Adolf Hitler Jew Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE