সকলেই নয়, কেউ কেউ। বাকিরা বলছেন, মন্দ কী! শুরু তো হোক।
তেহরানের মতো জায়গায় এ মাসের মাঝামাঝি পুরুষদের ভলিবল ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হবে এ দেশের কয়েক জন মহিলাকে। সরকারি ভাবে এখনও ঘোষণা না হলেও ইরান প্রশাসনেরই এক অফিসার সংবাদসংস্থাকে এ খবর জানিয়েছেন। ইরানের উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির মন্ত্রিসভার মহিলা এবং পরিবার বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত শাহিনদোখ্ত মোলাভার্দি বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে কট্টরপন্থীদের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হবে না বলেই আশা সরকারের।’’
সংস্কারপন্থী রাজনীতিক এবং মহিলাদের অধিকার রক্ষায় সরব মোলাভার্দি জানিয়েছেন, আপাতত ভলিবল, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল এবং টেনিসের মতো খেলা দেখার ক্ষেত্রেই শুধু অল্প সংখ্যক মহিলাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফুটবল, সাঁতার বা কুস্তি দেখার সুযোগ এখনও পাবেন না তাঁরা। কোন মহিলারা এই সুযোগ পাচ্ছেন? মোলাভার্দির বক্তব্য, ‘‘জাতীয় স্তরের খেলোয়াড়দের পরিবারের মহিলাদেরই শুধু এখন বেছে নেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাকি মহিলাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’’ এই জিনিসটাই যদি বার বার ঘটতে থাকে, তা হলে মহিলাদের খেলা দেখা নিয়ে যে আপত্তি রয়েছে, সেটা পুরোপুরি উধাও হয়ে যাবে— মনে করছেন মোলাভার্দি। তবে তিনি এটাও মানছেন, মহিলাদের খেলা দেখা নিয়ে যাতে অহেতুক উদ্বেগ না ছড়ায়, সে জন্য সরকারি ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।
ইরানে মহিলাদের স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার উপরে নিষেধাজ্ঞা আজকের নয়। অন্তত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই নিয়ম। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে স্টেডিয়ামে বসে পুরুষদের ম্যাচ দেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত মহিলারা। কট্টর ধর্মগুরুদের আপত্তির মূল কারণ, বেশ কিছু খেলায় পুরুষ খেলোয়াড়দের অনেক খোলামেলা পোশাক পরতে হয়। তা ছাড়া স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালীন অনেক অশালীন শব্দ উড়ে আসে ভিড় থেকে। বিদেশি মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্য এই নিয়ম লাগু হয় না।
গত বছর ইরানি-ব্রিটিশ তরুণী ঘোঞ্চে ঘাভামি দেশের পুরনো নিয়ম অগ্রাহ্য করেই পুরুষদের ভলিবল দেখার জন্য স্টেডিয়ামে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে তৎক্ষণাৎ জেলে পুরে দেওয়া হয়। প্রায় এক বছর জেলে কাটাতে হয় ঘাভামিকে। সেই খবর ছড়াতেই বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছিল তীব্র সমালোচনা। যার জেরে ঘাভামি আপাতত জামিনে মুক্ত। তবে গোটা ঘটনায় আন্তর্জাতিক স্তরে এতটাই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে যে অযৌক্তিক এই নিয়ম পাল্টানোর কথা ভাবতে বাধ্য হয়েছে ইরান সরকার।
যে কারণে এখন মোলাভার্দিরা বলছেন, মহিলারা যত বেশি স্টেডিয়ামে আসবেন, সেখানকার পরিবেশও তত দ্রুত পাল্টাবে। আর পরিবারের মহিলারা বসে খেলা দেখলে খেলোয়াড়দেরও উদ্যম তৈরি হবে। শুধু স্টেডিয়ামে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ঘটিয়েই থেমে যেতে চান না নারী অধিকার রক্ষায় সরব মোলাভার্দি।
দেশের পার্লামেন্টে ২৯০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ন’জন এখন মহিলা। অর্থাৎ তিন শতাংশেরও কম। এই অনুপাতটা বদলানোর স্বপ্ন দেখছেন মোলাভার্দি। আর তাই প্রয়োজনে পার্লামেন্টে মহিলাদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা ভাবা হবে, বলেছেন তিনি। আগামী বছরের গোড়াতেই ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তখনই এই দাবি তোলা হবে, আশ্বাস দিয়েছেন মোলাভার্দি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy