Advertisement
E-Paper

আন্দোলন নিয়ে বক্তৃতায় বিতর্ক বাধালেন ইউনূস

হাসিনাকে উৎখাতের আন্দোলনকে অংশগ্রহণকারী সংগঠকরা কেউ বলছেন ‘গণ-অভ্যুত্থান’, কেউ বা ‘বিপ্লব’। দু’টি ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে স্বতঃস্ফূর্ত এবং গণবিক্ষোভের আচমকা বিস্ফোরণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।

মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৩
Share
Save

নিউ ইয়র্ক সফরে গিয়ে ‘ক্লিন্টন গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’-এর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে উৎখাতের আন্দোলন নিয়ে নানা কথা বলেছেন। এই আন্দোলনের ‘নেপথ্যের মস্তিষ্ক’-কে তিনি মঞ্চে ডেকে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া দুই সাংবাদিককেও মঞ্চে তুলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস, আমেরিকা সফরের ঠিক আগে যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে তাঁর সহকারী প্রেস সচিব হিসাবে। কিন্তু এ সব নিয়ে বিতর্কে এখন সরগরম বাংলাদেশ।

হাসিনাকে উৎখাতের আন্দোলনকে অংশগ্রহণকারী সংগঠকরা কেউ বলছেন ‘গণ-অভ্যুত্থান’, কেউ বা ‘বিপ্লব’। দু’টি ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে স্বতঃস্ফূর্ত এবং গণবিক্ষোভের আচমকা বিস্ফোরণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বিল ক্লিন্টনের সংগঠনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, গোটা আন্দোলনটি আদতে ‘চমৎকার ভাবে পূর্ব পরিকল্পিত’। এতেই আপত্তি সংগঠকদের অনেকের। ইউনূসের কথা অনুসারে, তা হলে বিপুল ধ্বংসকাণ্ড এবং মৃতদেহের পাহাড় তৈরিও প্রাক পরিকল্পনার ফল। জেল ভেঙে জঙ্গি ও অপরাধীদের মুক্ত করাও আগেই ঠিক করা। ভারতীয় দূতাবাসের সংস্কৃতি কেন্দ্রে আগুন দিয়ে লুটপাটও ছক অনুসারে করা। নতুন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে প্রাক্তন সেনাকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেন সরেজমিন তদন্তের পরে বলেছিলেন, নিহতদের অধিকাংশের দেহ থেকে যে বিশেষ ধরনের বুলেট মিলেছে, তা পুলিশ ব্যবহার করে না। এমন বুলেটে নিহতের সংখ্যা পুলিশের বুলেটে নিহতের চেয়ে বেশি। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন নেটোর ব্যবহৃত এই বিপুল পরিমাণ বুলেট কী ভাবে বাংলাদেশে এল, কারা ব্যবহার করে এত খুন করল, তা রহস্যের।

সেই বুলেট রহস্য সমাধানে তদন্তের পথে হাঁটেনি ইউনূস সরকার। গুরুত্বহীন দফতরে সরানো হয়েছে সাখাওয়াতকে। আজ যখন ইউনূস আমেরিকায় দাঁড়িয়ে বন্ধু ক্লিন্টনকে পাশে পেয়ে আবেগে বলে ফেললেন, আন্দোলনের প্রতিটি বাঁক ও পথ পূর্ব পরিকল্পিত, ফের সামনে চলে আসে সেই বুলেট রহস্য— যা নিয়ে রা কাড়েনি কোনও বিপ্লবী।

কোটা-বিরোধী আন্দোলনকে সরকার উচ্ছেদের আন্দোলনে পরিণত করা, মৌলবাদী ও জঙ্গি শক্তির তাতে অংশগ্রহণ থেকে অনেকেই দাবি করেছিলেন, নিষিদ্ধ ইসলামী ছাত্র শিবির এবং হিযবুত তাহরীরের নেতৃত্বে এই আন্দোলন হয়েছে। ‘ক্লিন্টন গ্লোবাল ফাউন্ডেশন’-এর অনুষ্ঠানে ইউনূস ডেকে নেন তাঁর বিশেষ সহকারী হিসাবে নিয়োগ পাওয়া মহফুজ় আলমকে। ক্লিন্টনকে বলেন, “এ-ই মাহফুজ় গোটা আন্দোলনের ‘নেপথ্যের মস্তিষ্ক’, নিজে অবশ্য স্বীকার করে না!” মাহফুজ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুতের নেতা হিসাবে পরিচিত। লেখিকা তসলিমা নাসরিন সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘আমেরিকায় দাঁড়িয়ে ইউনূস হাসিনাকে উৎখাতের আন্দোলনের প্রধান হোতা হিসাবে নিষিদ্ধ ইসলামি জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতা মাহফুজ় আলমের নাম ঘোষণা করেছেন। বিল ক্লিন্টন পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছেন। এই কি সেই আমেরিকা, যারা গণতন্ত্রের কথা বলে? ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে?’

অন্য যে দু’জন তরুণ-তরুণীকে ইউনূস মঞ্চে ডেকে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছেন, তাঁরা হলেন সুচিস্মিতা তিথি ও নাইম আলি। এঁরা দু’জনেই দু’টি কাগজের সাংবাদিক ছিলেন। সম্প্রতি তাঁদের ইউনূসের সহকারী প্রেস সচিব নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনে দু’জন রিপোর্টারের কী ভূমিকা ছিল। অনেকেই বলছেন, সেই সময়ে বেশ কিছু সংবাদপত্রে নানা অসত্য খবর ও গুজব প্রকাশিত হয়েছে, যা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জ্বালামুখীকে উস্কে দিয়েছে। ইউনূসের কথায়, যা ছিল পরিকল্পনার অংশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Muhammad Yunus Bangladesh Sheikh Hasina

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}