Money Pit of Oak Island in Canada is rumoured to be a source of hidden treasure dgtl
canada
জলদস্যুর লুণ্ঠন, রানির অলঙ্কার… আর একটি মৃত্যু হলেই নাকি ধরা দেবে এই দ্বীপের গুপ্তধন
কী ছিল এই গহ্বরে? সেই কল্পনায় রঞ্জিত হয়েছে একাধিক সম্ভাবনা। রাজা সলোমনের মন্দিরের সম্পদ থেকে শুরু করে শেক্সপিয়ারের পাণ্ডুলিপি— জল্পনায় উঠে একাধিক অমূল্য সম্পদের কথা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
‘নোভা স্কোটিয়া’। ফরাসি ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘নতুন স্কটল্যান্ড’। পূর্ব কানাডার এই প্রদেশের কাছেই আছে ‘ওক দ্বীপ’। এখানেই নাকি লুকনো আছে অতুল ঐশ্বর্য। উনিশ শতক থেকে বহু বার চেষ্টা হয়েছে সেই গুপ্তধন উদ্ধারের। ঐশ্বর্যের সন্ধানে মানুষের প্রাণ গিয়েছে। চলে গিয়েছে জীবনের সর্বস্বও।
০২১৮
যাবতীয় রহস্য এই দ্বীপের একটি গহ্বরকে নিয়ে। লোকের মুখে মুখে সেই গহ্বরের নাম হয়ে গিয়েছে ‘মানি পিট’। অর্থাৎ যে গহ্বর ভর্তি সম্পদে। গহ্বরের খোঁজ প্রথম পেয়েছিল স্থানীয় এক কিশোর। তার নাম ড্যানিয়েল ম্যাকগিনিস। ড্যানিয়েলের চোখে পড়েছিল এই দ্বীপে একটি ওক গাছের নীচে রহস্যজনক একটি সুড়ঙ্গের মুখ।
০৩১৮
উৎসাহী ড্যানিয়েল সুড়ঙ্গের সন্ধানে খুঁড়তে শুরু করে। বেরিয়ে আসে বিভিন্ন স্তরের কাঠের তক্তা, পাথরের রহস্যজনক স্ল্যাব এবং আরও কিছু পুরাতাত্ত্বিক জিনিস। তার পর এই রহস্যের কথা ছড়িয়ে পড়তে দেরি হল না।
০৪১৮
অনেকেরই ধারণা, এই গহ্বরের সঙ্গে ইচ্ছে করে খাঁড়ি কেটে সমুদ্রের সংযোগ ঘটানো হয়েছিল। যাতে, সেই খাঁড়ি দিয়ে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে গহ্বরের লুকিয়ে রাখা সম্পদ আড়াল করে দিতে পারে।
০৫১৮
পরবর্তী সময়ে এই গহ্বরে পাওয়া গিয়েছে সিমেন্টের তৈরি ভল্ট, কাঠের বাক্স এবং পার্চমেন্ট কাগজের পুঁথি। রেডিয়োকার্বন পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, জিনিসগুলি ষোড়শ শতকের।
০৬১৮
কী ছিল এই গহ্বরে? সেই কল্পনায় রঞ্জিত হয়েছে একাধিক সম্ভাবনা। রাজা সলোমনের মন্দিরের সম্পদ থেকে শুরু করে শেক্সপিয়ারের পাণ্ডুলিপি— জল্পনায় উঠে একাধিক অমূল্য সম্পদের কথা। দীর্ঘ সন্ধানেও উদ্ধার হয়নি কোনও গুপ্তধন। শুধু পল্লবিত হয়েছে কল্পনা।
০৭১৮
কয়েক যুগ ধরে এই গহ্বরে চলেছে গুপ্তধন অনুসন্ধান। অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় মৃত্যুপথযাত্রী স্কটিশ জলদস্যু ক্যাপ্টেন কিড জানিয়েছিলেন, এই দ্বীপে ২০ লক্ষ ডলারের সম্পদ লুকিয়ে রাখা আছে।
০৮১৮
তার পর গত কয়েক শতকে এই গহ্বরে চলেছে গুপ্তধনের অনুসন্ধান। কখনও ব্যক্তিবিশেষ, আবার কখনও কোনও সংস্থা, গুপ্তধন খুঁজে চলেছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু যত বারই নতুন কোনও আশার আলো দেখা দিয়েছে, সমুদ্রের জল এসে পূর্ণ করেছে গহ্বর।
০৯১৮
গত শতকের শেষ কিছু দশকে ওক দ্বীপের মালিক ছিলেন ড্যান ব্ল্যাঙ্কেনশিপ এবং ডেবিড টোবিয়াস। তাঁরা গুপ্তধনের সন্ধানে কয়েক লক্ষ টাকা বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ক্রমশ অন্ধকারের ছায়ায় মিলিয়ে গিয়েছে গুপ্তধনের আশা।
১০১৮
২০০৫ সালে টোবিয়াসের কাছ থেকে এই দ্বীপের অর্ধেক কিনে নেন ‘মিশিগান’ সংস্থার মালিক দুই ভাই, রিক এবং মার্টিন ল্যাগিনা। কত মূল্যের বিনিময়ে মালিকানাবদল হয়, সে তথ্য অবশ্য প্রকাশিত হয়নি। গুপ্তধনের সন্ধান এখনও চলছে।
১১১৮
অভিযাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে, গহ্বরে যত খনন করা হয়, তত সমুদ্রের জল এসে ভরে যায়। এ রকমও হয়েছে, ৩৩ ফুট পর্যন্ত জল এসে ভরিয়ে দিচ্ছে। তবে গহ্বরে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে নারকেলের তন্তু পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া ৯০ ফুট গভীরতায় একটি পাথরের গায়ে রহস্যজনক চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। পরে এই রহস্যের সমাধান করা হয়। দাবি, ওই পাথর আসলে কোনও বাড়ির চিমনির অংশ ছিল।
১২১৮
এই গহ্বরের সৃষ্টি ও অস্তিত্ব নিয়ে একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। অধিকাংশ ভূবিজ্ঞানীদের ধারণা, এই গহ্বর প্রাকৃতিক সিঙ্ক হোল। সম্পূর্ণ ভৌগোলিক এই ভূমিভাগে কোনও গুপ্তধন নেই বলেই তাঁদের ধারণা। এ রকমই আরও একটি গহ্বর এই দ্বীপে আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। কিছু সময়ের জন্য হলেও তার গায়ে লেগে গিয়েছিল ‘গুপ্তধন গহ্বর’-এর পরিচয়।
১৩১৮
কিন্তু গুপ্তধন সন্ধানীরা অত সহজে হাল ছাড়তে নারাজ। তাঁদের বিশ্বাস, এই গহ্বর ছিল জলদস্যু কিড এবং হেনরির কমিউনিটি ব্যাঙ্ক। সেখানে তাঁরা তাঁদের লুণ্ঠিত সম্পদ লুকিয়ে রাখতেন।
১৪১৮
অতীতে ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের ত্রাস বলে পরিচিত জলদস্যু এডওয়ার্ড টিচ বা ব্ল্যাকবেয়ার্ডও নাকি বলেছিলেন, তিনি তাঁর লুণ্ঠিত সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন এই গহ্বরে। যা নাকি তিনি নিজে এবং স্বয়ং শয়তান ছাড়া আর কেউ খুঁজে পাবে না।
১৫১৮
গুপ্তধনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে অন্যান্য উপনিবেশ শাসকের কথাও। অনেকের ধারণা, সপ্তবর্ষের যুদ্ধে কিউবাকে লুণ্ঠন করে পাওয়া ঐশ্বর্য এখানে লুকিয়ে রেখেছিল ব্রিটিশরা।
১৬১৮
অনেকের ধারণা, এই গহ্বরেই লুকিয়ে আছে শেষ ফরাসি সম্রাজ্ঞী মারি আঁতোয়ানেতের অলঙ্কার, রত্ন এবং প্রাসাদের অন্যান্য শিল্পকর্ম। ফরাসি বিপ্লবের সময় ভার্সেই প্রাসাদ বিপ্লবীদের দখলে চলে যাওয়ার আগে নাকি সম্রাজ্ঞী তাঁর অলঙ্কার এবং প্রাসাদের অন্য শিল্পকর্ম দিয়ে দিয়েছিলেন এক পরিচারিকাকে।
১৭১৮
আঁতোয়ানেতের নির্দেশে সেই পরিচারিকা পালিয়েছিলেন ভার্সেই প্রাসাদ ছেড়ে। তিনি নাকি পরে লন্ডন হয়ে চলে এসেছিলেন এই নোভা স্কোটিয়ায়। জলদস্যুর লুণ্ঠন থেকে শেক্সপিয়রের পাণ্ডুলিপি, অথবা মারি আঁতোয়ানেতের অলঙ্কার— গুঞ্জন রোমাঞ্চকর হলেও শেষ অবধি অভিযাত্রীদের হাতে শুধু পেনসিলই রয়ে গিয়েছে। গুপ্তধন এখনও অধরা।
১৮১৮
প্রচলিত বিশ্বাস, এই গুপ্তধনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভিশাপ। ৭ জনের মৃ্ত্যু হলে তবেই উদ্ধার হবে গুপ্তধন। এখনও অবধি ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তা হলে কি আরও এক প্রাণের বিনিময়ে ধরা দেবে গহ্বরে লুকিয়ে রাখা গুপ্তধন? উত্তর এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে।