সাদ্দাম হুসেনের জন্মভূমি তিকরিতে জঙ্গিদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালাতে গিয়ে খোঁজ মিলল আটটি গণকবরের। আর সেই কবরগুলির সব ক’টিতেই রয়েছে হাজারেরও বেশি ইরাকি বায়ুসেনা সদস্যের দেহ!
আমেরিকা ও জঙ্গিনিধনে তার সহযোগী দেশগুলির বোমাবর্ষণে ইরাকের মসুল থেকে পিছু হটেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। গোয়েন্দাদের দাবি, মসুলের পরে তিকরিত দখল করেই ইরাক ও সিরিয়ায় নাশকতা ছড়ানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। আমেরিকার নিয়ন্ত্রিত বিমান-হামলা এবং লাগাতার অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি ইরাকি সেনা তিকরিত পুনরুদ্ধার করেছে। তার পরে তিকরিতকে জঙ্গিশূন্য করতে দফায় দফায় অভিযান চলেছে শহরের প্রতিটি অলিগলিতে। তখনই খোঁজ মেলে কবরগুলির।
ইরাকি সেনার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিকরিত শহরের খুব কাছেই স্পেইচার নামে বায়ুসেনার একটি শিবির ছিল। এক সময়ে ওই শিবির মার্কিন সেনা ব্যবহার করলেও পরবর্তী কালে ইরাকি সেনাই ওই শিবির ব্যবহার করত। গত বছর জুনে আইএস জঙ্গিরা উত্তর এবং পশ্চিম ইরাক দখলের লড়াই চালানোর সময়ে স্পেইচার শিবির আক্রমণ করে। মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় ওই শিবিরে কর্মরত সেনাদের। ইরাকি সেনার দাবি, সেই সময় কয়েকটি গ্রাফিক ছবি এবং ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছিল জঙ্গিরা। সেনার পোশাক পরা কয়েক জনকে হত্যার দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ওই ভিডিওতে। দেখা গিয়েছিল, কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা জঙ্গিরা তিকরিতের প্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক সেনার হাত বেঁধে তাদের হত্যা করছে। তার পর দেহ ফেলে দিচ্ছে টাইগ্রিসের জলে। নিহতদের রক্তে নদীর জল যে লাল হয়ে যাচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে ওই ভিডিও এবং ছবিতে। সেই সময়ে মনে করা হয়েছিল, নিহতরা সকলেই সম্ভবত স্পেইচার শিবিরের সেনাসদস্য। তবে নিহতদের পরিচয় তখন জানা সম্ভব হয়নি।
তিকরিত পুনর্দখলের পরের দিনই শহরের আটটি জায়গায় তল্লাশি চালায় ইরাকি সেনা। মনে করা হচ্ছে, ওই এলাকাগুলিতেই এই গণহত্যা হয়েছে। তার পরেই খোঁজ মেলে এই গণকবরের। ইরাকের মানবাধিকার মন্ত্রকের মুখপাত্র কামিল আমিন বলছেন, ‘‘আমরা এখনও তিকরিতে খোঁড়াখুঁড়ি করছি। তবে আরও কত এ রকম কবর রয়েছে তা এখনও অজানা। মৃতদেহের সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা।’’ তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের মধ্যে মাত্র ১২ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। গত বছর স্পাইচার শিবির থেকে নিখোঁজ ১৬৮৬ জন সেনার মৃতদেহ ওই কবরগুলিতেই শায়িত আছে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। সেই মতো, ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। আমিনের দাবি, টাইগ্রিসে তল্লাশি চালালে আরও কয়েকশো দেহ উদ্ধার হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘টাইগ্রিস নদীটাই সব চেয়ে বড় কবর। যে এলাকা আইএস এর দখলে ছিল বা রয়েছে, সেগুলো পুনরুদ্ধার করার পর প্রতিটি শহরেই এমন গণকবর উদ্ধার হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy