শুভেচ্ছা: ভোটদানের আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। ছবি: রয়টার্স
লড়াইটা এখন অতি-দক্ষিণপন্থী এক নেত্রী এবং মধ্যপন্থী এক নবাগতের। চূড়ান্ত পরীক্ষা আগামী ৭ মে।
সে দিনই ফরাসি জনতা জানিয়ে দেবেন, এই প্রথম কোনও মহিলা তাঁদের প্রেসিডেন্ট হবেন কি না। নাকি পাশা উল্টে দেবেন এমন এক নেতা, যাঁর দলটারই বয়স বছরখানেক!
প্রথম জন, মেরিন ল্য পেন। দ্বিতীয় জন, ইমানুয়েল মাক্রঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে ছিলেন মোট ৯ জন। আজ প্রথম রাউন্ডের ভোটের পর চূড়ান্ত লড়াইটা দাঁড়াল ল্য পেন বনাম মাক্রঁ। ৭ মে দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত রাউন্ডের ভোট।
৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ নির্ণায়কের ভূমিকায়। যাঁরা ঠিক করবেন, ফ্রান্সও ব্রিটেনের পথে হেঁটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যাবে কি না, অথবা আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নীতি নিয়ে এগোচ্ছেন, ফ্রান্সেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না। তাই এখানকার নির্বাচনের ফল জানতে আগ্রহী ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বই। ৬৬ হাজার বুথের জন্য রবিবার অন্তত ৫০ হাজার পুলিশ নামিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে সক্রিয় ছিল প্রশাসন। কারণ, তিন দিন আগেই বন্দুকবাজের হামলায় এখানকার শঁজে লিজে অ্যাভিনিউয়ে নিহত হন এক পুলিশকর্মী। যে ঘটনার জেরে শেষ দিনের প্রচার বন্ধ রাখেন সকলেই।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে সব চেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন চার জন। ন্যাশনাল ফ্রন্টের অতি-দক্ষিণ নেত্রী ল্য পেন, দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত কনজারভেটিভ প্রার্থী ফ্রাঁসোয়া ফিলঁ, মধ্যপন্থী ইমানুয়েল মাক্রঁ এবং অতি বাম জঁ-লুক-মিলশোঁ। জনমত সমীক্ষায় প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে ছিলেন প্রাক্তন ব্যাঙ্ক-কর্তা, বছর ৩৯-এর মাক্রঁই। সেই জনমতই বলছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে ইমানুয়েল পিছনে ফেলে দিতে পারেন ল্য পেনকে।
এ বার সকলের প্রচারের মোদ্দা বিষয় ছিল— অর্থনীতি, অভিবাসন এবং সন্ত্রাস পরিস্থিতিতে অবশ্যই নিরাপত্তা। কিন্তু রবিবার যে সমীকরণ দাঁড়াল তা দেখে অনেকের মত, এ বার হয়তো ফলে ফ্রান্সের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড়সড় বদল ঘটবে। অতীতে শাসন করে আসা প্রধান কোনও রাজনৈতিক দলকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কনজারভেটিভ ফিলঁ এবং অতি বাম মিলশোঁ— দু’জনেই অবশ্য সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, প্রথম রাউন্ডে কেউই হয়তো একা বাজি মারতে পারবেন না। শেষমেশ তা হয়নি। যুদ্ধ এখন এসপার-ওসপার।
দেশে ধীরে ধীরে আর্থিক সংস্কার করতে চান মাক্রঁ, বিশ্ব বাজারে হয়তো তার সামান্য প্রভাব পড়বে। কিন্তু ল্য পেনের প্রতিশ্রুতি কিছুটা চিন্তায় রেখেছে ইউরোপের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁর মধ্যে অনেকেই ট্রাম্পের ছায়া দেখছেন। বৈদেশিক বাণিজ্যে ল্য পেনের ঘোর আপত্তি, ইউরোর গুরুত্ব কমিয়ে ফ্রাঁ-এর পুনর্জন্ম ঘটাতে ইচ্ছুক তিনি। ব্রিটেনের পথ অনুসরণ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়েও যেতে চান। তার জন্য গণভোট করার কথাও বলেছেন। সন্ত্রাসদীর্ণ দেশে মুসলিম বিদ্বেষের কথা শোনা গিয়েছে ল্য পেনের মুখেও। বিদায়ী ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদও তাঁকে নিয়ে সংশয়ী।
এই অস্থিরতার রেশ ছুঁয়েছে ফরাসি জনতাকেও। পোলিং বুথে পৌঁছেও অনিশ্চয়তা ঘিরে ছিল ৩৩ বছরের হানাঁ ফাঁনিদিকে। পেশায় অর্থনীতি বিষয়ক ম্যানেজার হাঁনা বললেন, ‘‘কাউকে বিশ্বাস হচ্ছে না। কোনও নির্দিষ্ট প্রার্থী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটাও মনে হচ্ছে না। হতাশ লাগছে।’’ তবে রাজনীতি নিয়ে মানুষের এই মোহভঙ্গ সত্ত্বেও ২০১২-র তুলনায় এ বার ফ্রান্সে ভোটদানের হার একটু হলেও বেড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy