Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Agitation in Bangladesh

রাতের ঢাকায় আবার গুলি! কোটা সংস্কার বিক্ষোভে হামলার অভিযোগ, জখম অন্তত ছয় আন্দোলনকারী

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল বাংলাদেশের তিন শহর— ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অশান্ত বাংলাদেশ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অশান্ত বাংলাদেশ। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ২২:৫১
Share: Save:

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বুধবার রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল। পুলিশের লাঠি এবং ছররা গুলিতে অন্তত ছ’জন আন্দোলনকারী গুরুতর জখম হয়েছেন বলে সে দেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল বাংলাদেশের তিন শহর— ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে। তার পরেই বুধবার সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ‘অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ’ ঘোষণা করে পড়ুয়াদের ক্যাম্পাস ও হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খালি করতে গিয়ে বুধবার প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ।

শেষ পর্যন্ত পুলিশ জোর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর খালি করলে শনির আখড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেই রাতে বাধে সংঘর্ষ। অদূরের একটি উড়ালপুলের টোল প্লাজ়া এবং পুলিশ কিয়স্কে আগুন ধরানো হয়। চলে নির্বিচার ভাঙচুর, এমনকি পথচলতি যানবাহনেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। সে সময়ই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগের পথে হাঁটে। কাঁদানে গ্যাস, লাঠি, সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি ছররা গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।

স্থানীয় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ আধিকারিক ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্থানীয় বিএনপি এবং জামাত-ই-ইসলামির কর্মীরা হামলায় অংশ নেন। অন্য দিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও উপচার্যকে মুক্ত করতে গিয়েও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন পুলিশকর্মীরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮-তেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮-য় কোটা-বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দিয়েছিলেন। রাখা হয়েছিল, শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। তখনকার মতো আন্দোলনে ইতি টানেন ছাত্ররা।

কিন্তু সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তাঁরা দাবি করেন, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে সব ধরনের কোটা সংস্কার করতে হবে। ইতিমধ্যে হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গত ১০ জুলাই গোটা বিষয়টির উপরে এক মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছে, হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পরে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে শীর্ষ আদালত।

মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৭ অগস্ট। হাই কোর্টের রায়-সহ গোটা বিষয়টিতে শীর্ষ আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ায় অর্থ, ২০১৮-এ সরকারের নির্দেশ বহাল রইল। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন-সহ তিন ধরনের সংরক্ষণ সরকারি চাকরিতে রাইল না। কিন্তু সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এখন জনজাতিদের কোটা সংস্কারের দাবি তুলে নতুন করে আন্দোলন চালাচ্ছে। এর নেপথ্যে কট্টরপন্থী দল জামাত-ই-ইসলামির মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। হাসিনা বুধবার ছ’জনের মৃত্যুর ঘটনায় (যাঁদের মধ্যে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের এক কর্মীও রয়েছেন) বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, এরা যেই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল বাংলাদেশে ‘সংরক্ষণ বিরোধী’ আন্দোলন হচ্ছে। আদতে বাংলাদেশে এই আন্দোলন হচ্ছে কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সেই ভ্রম সংশোধন করেছি। অনিচ্ছাকৃত ওই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy