Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
International News

‘আমি বোধহয় স্ত্রীকে খুন করে ফেলেছি!’ মাঝরাতে ফোন পুলিশে

রাতে ভাল ভাবে ঘুমনোর জন্যই ওই সিরাপ খেয়েছিলেন তিনি। ঘুম ভাঙার পর পাশেই স্ত্রী-র রক্তাক্ত দেহ দেখে চমকে ওঠেন ম্যাথিউ। বিছানার উপরেই পড়েছিল একটি ধারালো ছুরিও। ম্যাথিউয়ের সারা শরীরও ভেসে যাচ্ছিল স্ত্রী লরেনের রক্তে।

বিয়ের দিন ম্যাথিউ ও লরেন। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

বিয়ের দিন ম্যাথিউ ও লরেন। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৭:১৫
Share: Save:

—হ্যালো ৯১১?

—হ্যাঁ। বলুন, আমরা কী সাহায্য করতে পারি?

—আমি মনে হয় স্ত্রীকে খুন করে ফেলেছি!

—মানে? কী বলতে চাইছেন, ঠিক করে বলুন?

—আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। ঘুম ভাঙতেই দেখলাম মাটিতে পড়ে রয়েছেন স্ত্রী। আমার সারা গায়ে রক্ত। বিছানার উপর একটি ছুরিও পড়ে রয়েছে। আমি মনে হয় মেরে ফেলেছি ওঁকে।

—কী বলছেন? ভাল করে দেখুন।

—না, ও কিন্তু নড়ছে না! আর আমার হাতের কাছে একটা রক্তাক্ত ছুরি পড়ে রয়েছে!

পুলিশের আপত্কালীন নম্বর ৯১১-য় ফোন করে প্রায় সাড়ে ছ’মিনিট ধরে কথা বলেছিলেন ম্যাথিউ র‌্যাল্ফ। গত শুক্রবার মাঝ রাতের ওই কথোপকথনে রীতিমতো চমকে ওঠে উত্তর ক্যারোলিনা পুলিশ। শহরের বাসিন্দা ২৭ বছরের ম্যাথিউ র‌্যাল্ফ সে দিন রাতে ফোন করে এমনই ভয়াবহ স্বীকারোক্তি করে। বুজে আসা গলায় ওই যুবক দাবি করেন, ঘুমের মধ্যে স্ত্রী লরেনকে কুপিয়ে খুন করে ফেলেছেন তিনি। তাঁদের বেডরুম, বিছানা এবং শরীরে লেগে থাকা স্ত্রীর রক্তই খুনের প্রমাণ। মাটিতে পড়ে রয়েছে স্ত্রীর নিথর দেহ। একই সঙ্গে ম্যাথিউয়ের বক্তব্য, ঘুমনোর আগের ঘটনা কিছুই মনে নেই তাঁর। শুধু মনে পড়ছে, ঘুমনোর আগে একটু বেশি পরিমাণে কাশির ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলেন!

আরও পড়ুন, আমেরিকায় শিখ ছাত্রকে কুপিয়ে খুন

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, ফোনে ম্যাথিউয়ের সঙ্গে কথা বলার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ম্যাথিউ ও লরেনের বেডরুমের মেঝেতে তখন পড়েছিল তাঁর স্ত্রী লরেনের দেহ। পুলিশ লরেনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রাতেই ম্যাথিউকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হয়।

আরও পড়ুন, হার্ভের ধাক্কায় মারা গেলেন শালিনীও

প্রাথমিক জেরায় ম্যাথিউ পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই দিন রাত ১টা নাগাদ ঘুম ভাঙে তাঁর। ঘুমনোর আগে ‘ক্রোসিডিন’ নামে একটি হাই ডোজের কাশির সিরাপ খেয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা এই ওষুধ সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রেসক্রাইব করেন। রাতে ভাল ভাবে ঘুমনোর জন্যই ওই সিরাপ খেয়েছিলেন তিনি। ঘুম ভাঙার পর পাশেই স্ত্রী-র রক্তাক্ত দেহ দেখে চমকে ওঠেন ম্যাথিউ। বিছানার উপরেই পড়েছিল একটি ধারালো ছুরিও। ম্যাথিউয়ের সারা শরীরও ভেসে যাচ্ছিল স্ত্রী লরেনের রক্তে।

ফেসবুকের ডিজিটাল অ্যালবামে ম্যাথিউ ও লরেনের ছবি।

এর পর পুলিশকে ফোন করে এমন নাটকীয় ভাবে স্বীকারোক্তি। উত্তর-পূর্ব র‌্যালে পুলিশের দাবি, এমন অস্বাভাবিক ঘটনা এর আগে কোনওদিন শোনেননি তাঁরা।

আরও পড়ুন, আইফেল টাওয়ারে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ঘিরে আতঙ্ক

স্বপ্নের মধ্যে খুন বা স্বপ্নের ভিতর খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা— রূপোলি পর্দায় এমন গল্প দেখা গেলেও, বাস্তবে এমন নজির বিরল। অনেক সময় অতিরিক্ত নেশা করে আত্মহত্যা বা নেশার ঘোরে মৃত্যুর ঘটনাও শিরোনামে এসেছে। তবে কাশির ওষুধ খেয়ে এ ভাবে নিজের স্ত্রীকে খুন এবং সেই খুনের ঘটনা মনে না থাকার মতো এমন অদ্ভুত ঘটনা সাম্প্রতিক কালে শোনা যায়নি বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

মনোবিদ অনিন্দিতা রায় চৌধুরীর মতে, ‘‘অনেক সময় দেখা গিয়েছে কোনও ব্যক্তির আত্মহত্যার প্রবণতা থাকলে, তাঁর খুন করার মানসিকতাও তৈরি হয়েছে। ম্যাথিউয়ের ক্ষেত্রে এমন কোনও ঘটনা কিনা দেখা দরকার। অভিযুক্তের মানসিক কোনও রোগ ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’

ঘটনার কথা জানাজানির পর লরেন ও ম্যাথিউয়ের পরিচিতরাও স্তম্ভিত। গত নভেম্বরে, বয়সে দু’বছরের বড় লরেনকে প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন ম্যাথিউ। তাঁদের পরিচিতরা ফেসবুকে লরেনের নামে একটি মেমোরিয়াল পেজ তৈরি করেছেন।

লরেনের মৃত্যু কি তবে খুন, স্বীকারোক্তি এর পর গ্রেফতারের মতোই একটি ঘটনা? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE