সুনক এবং লিজ। ফাইল চিত্র।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনককে হারিয়ে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন লিজ ট্রাস। সোমবার শাসক রক্ষণশীল দলের (কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরি) তরফে ভোটের ফল ঘোষণা করে এ কথা জানানো হয়েছে। ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছেন তিনি। মোট বৈধ ভোটের মধ্যে লিজ পেয়েছেন ৮১ হাজার ৩২৬টি ভোট। সুনক ৬০ হাজার ৩৯৯টি।
এই ভোটে অবশ্য ব্রিটিশ আম নাগরিকেরা অংশ নিতে পারেননি। সে দেশের শাসক দল কনজারভেটিভ পার্টির ১ লক্ষ ৬০ হাজার সদস্য ভোট দিয়ে ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ লিজকে বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উত্তরসূরি হিসেবে। দলের সিদ্ধান্ত মেনে পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বরিসের আনুষ্ঠানিক ইস্তফা ঘোষণার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন লিজ। মার্গারেট থ্যাচার এবং টেরেসা মের পর তৃতীয় মহিলা হিসেবে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা হবেন তিনি।
রবিবার থেকেই অনলাইন আর ব্যালটে দেওয়া ভোটের গণনা শুরু হয়েছিল কনজারভেটিভ ক্যাম্পেন হেডকোয়াটার্স (সিসিএইচকিউ)-এ। ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার স্যর গ্রাহাম ব্র্যাডি। জানানো হয়, মঙ্গলবার ব্রিটেনের তৃতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন লিজ। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরে লিজ টুইটারে লেখেন, ‘কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হতে পেরে আমি সম্মানিত। আমাদের মহান দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমার উপর আপনার আস্থা রাখায় আপনাদের ধন্যবাদ। আমি এই কঠিন সময়ে সকলকে নিয়ে, আমাদের অর্থনীতির বৃদ্ধি এবং দেশের প্রতিষ্ঠা দৃঢ় করতে সাহসী পদক্ষেপ করব।’ অন্য দিকে, ভোটে পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতার বার্তা দেন সুনক।
গত জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শেষ হওয়া প্রাথমিক পর্বের ভোটাভুটিতে শীর্ষস্থানে ছিলেন ঋষি। টোরি এমপিদের মধ্যে ১৩৭ জন ভোট দিয়েছিলেন ঋষিকে। লিজ পেয়েছিলেন ১১৩ ভোট। ১০৫টি ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন আর এক রক্ষণশীল নেত্রী পেনি মডান্ট। প্রসঙ্গত, গত ৭ জুলাই কনজারভেটিভ দলের নেতা তথা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরিস জনসন ইস্তফা দেওয়ার পরেই দলের অন্দরে পরবর্তী নেতার খোঁজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে মনোনয়ন দেন সাত জন। শুরু হয় ছাঁটাই পর্ব। প্রথম রাউন্ড থেকেই এগিয়ে ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ঋষি। প্রত্যেক রাউন্ডেই সব থেকে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীকে সরে যেতে হয়েছিল।
অবশ্য সেপ্টেম্বরে রক্ষণশীল দলের প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার সদস্যকে নিয়ে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ জনমত সমীক্ষার ফলে এগিয়ে ছিলেন লিজ। তবু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশাবাদী ছিলেন ৪২ বছরের সুনক। রবিবার ‘রেডি ফর ঋষি’ নামে তাঁর প্রচার পর্ব শেষ করে সুনক টুইট করেছেন, ‘ভোটাভুটি শেষ। আমার সহকর্মীদের ধন্যবাদ। আমার প্রচারকর্মীরা, যাঁরা আমায় সমর্থন করেছেন, আমার পাশে থেকেছেন তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ। সোমবার দেখা হচ্ছে।... প্রচারের এই ছয় সপ্তাহের প্রতিটা সেকেন্ড চুটিয়ে উপভোগ করেছি।’
ভোটের প্রচারে সুনকের তুরুপের তাস ছিল মূল্যবৃদ্ধির কড়া দাওয়াই, অবৈধ অভিবাসন রুখতে দশ দফা পরিকল্পনা, ব্রিটেনের রাস্তাকে অপরাধমুক্ত করে আরও নিরাপদ করে তোলার মতো শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি। তবে সেই প্রতিশ্রুতির হাত ধরে জয় আসেনি।
চূড়ান্ত রাউন্ডে ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাই ঋষির পরাজয়ের কারণ হিসাবে ‘বর্ণ-পরিচয়ের’ কথা উঠে আসছে। এখনও পর্যন্ত কোনও অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী হননি। যে দেড় লক্ষাধিক কনজারভেটিভ সদস্যের ভোট এ বার দুই প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তাতে অশ্বেতাঙ্গ ভোটার নগণ্য। তিন শতাংশেরও কম। তা ছাড়া একদা জনসন অনুগামী ঋষি যে ভাবে পরবর্তী কালে প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করে ইস্তফা দিয়েছিলেন, ভোটে তারও প্রভাব পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণ টোরি সদস্যদের বড় অংশই জনসন অনুগামী। তাঁদের একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন লিজ।
প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ঋষি ২০১৫ সালে প্রথম ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড থেকে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার) পদে তাঁকে নিযুক্ত করেছিলেন। গত ৫ জুলাই সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তার পরপরই ইস্তফা দেন বরিস।
চূড়ান্ত লড়াইয়ে হেরে গেলেও সুনকের এত দূর উঠে আসা শেতাঙ্গ নিয়ন্ত্রিত রক্ষণশীল ব্রিটিশ রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সত্যিই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি প্রধানমন্ত্রী হলে, তা ইতিহাস তৈরি করত। ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে আমেরিকার বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারিত হত। কিন্তু তা হল না।
নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক কিছু পর্ব রয়েছে। সাধারণত ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাকিংহাম প্রাসাদে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিয়োগ করেন। সেটাই রীতি। এ বার তার ব্যতিক্রম হবে। এই প্রথম ইংল্যান্ডের বাইরে কেউ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হবেন। চলাফেরায় অসুবিধার কারণ রানি এখন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে। নয়া নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়ে রানির হাত থেকে নিয়োগপত্র নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy