নায়িকার অসম্মতিতেই অভিনেতার সঙ্গে ছক কষে ধর্ষণ দৃশ্য শুটিং করিয়েছিলেন বার্নার্দো বার্তোলুচি। আর এই ঘটনাটির পরিকল্পনা ছিল নাকি মার্লন ব্র্যান্ডোর মতো অভিনেতার। এমন বিতর্কেই সরগরম চলচ্চিত্র মহল। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার বার্নার্দো বার্তোলুচি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন এ কথা। সেই সাক্ষাৎকার সম্প্রতি ভেসে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ধর্ষণ দৃশ্যের শুটিং সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
বার্তোলুচি পরিচালিত ১৯৭২ সালের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’। ছবিটিতে বেশ কিছু উগ্র যৌন দৃশ্য রয়েছে বলে সে সময় অভিযোগ উঠেছিল। এমনকী ইতালি ও স্পেনে ছবিটির প্রদর্শনও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সাড়ে চার দশক পর ফের বিতর্কের কেন্দ্রে সেই ছবি। বিতর্কের কারণ বার্তোলুচির একটি মন্তব্য। অভিযোগের তির বার্নার্দো বার্তোলুচি ও মার্লন ব্র্যান্ডোর দিকে। ছবিতে পল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মার্লন ব্র্যান্ডো এবং জেন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মারিয়া স্নেইডার।
‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’ ছবির একটি দৃশ্যে মার্লন ব্র্যান্ডো এবং মারিয়া স্নেইডার।
ছবিটির সবচেয়ে সমালোচিত দৃশ্যটি হল ‘বাটার রেপ সিন’। সে দৃশ্যে জেনকে ধর্ষণ করছেন পল। সেই দৃশ্য নিয়েই ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে হলিউডে। ২০১৩ সালে বার্তোলুচি একটি সাক্ষাৎকার জানান, ধর্ষণ দৃশ্যটির বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতেন না অভিনেত্রী মারিয়া। সম্প্রতি কোনও ভাবে বার্তোলুচির সেই সাক্ষাৎকার নজরে আসে হলিউড তারকা জেসিকা চ্যাস্টেইনের। তিনি বিষয়টি টুইটারে তুলে ধরেন এবং এর নিন্দা করেন। টুইটারে নিন্দায় সরব হন ক্রিস ইভান্সের মতো হলিউড তারকাও। তার পর থেকেই বিতর্কের ঝড় উঠে গিয়েছে। বার্নার্দো বার্তোলুচির তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
জেসিকা চ্যাস্টেইনের টুইট।
চ্যাস্টেইন টুইটারে লিখেছেন, ‘‘৪৮ বছরের এক ব্যক্তি ১৯ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করছেন, এই দৃশ্যটি অনেকেই উপভোগ করেছেন, ছবিটি অনেকেরই পছন্দের ছবির তালিকায় রয়েছে। অথচ এই দৃশ্যটি সম্পর্কে নাকি সেই অভিনেত্রী জানতেনই না। এটা জানার পর থেকে শরীর খারাপ লাগছে।’’ হলিউড অভিনেতা ক্রিস ইভান্স লিখেছেন, ‘‘আমি আর কখনও এই ছবিটি দেখব না। বার্তোলুচি অথবা ব্র্যান্ডোর ভূমিকা মেনে নিতে পারছি না। ঘটনাটা ন্যক্কারজনক। আমি ক্রুদ্ধ।’’
২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ৫৮ বছর বয়সে প্যারিসে মারা যান ওই ছবির অভিনেত্রী মারিয়া। ছবিটির শুটিং শেষ করার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। মারিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন, বেশ কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন বলে জানা যায়। বেশ কিছু দিন মানসিক হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন অভিনেত্রী।
ক্রিস ইভান্সের টুইট।
মারিয়ার মৃত্যুর দু’বছর পর এক সাক্ষাৎকারে বার্তোলুচি বলেন, ‘‘ছবিটির শুটিংয়ের পর মারিয়া আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি। এক দিক থেকে মারিয়ার প্রতি আমি অবিচার করেছি। কারণ শুটিংয়ের আগে আমি তাঁকে কিছুই বলিনি। কারণ আমি তাঁর অভিব্যক্তি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম একজন মেয়ে হিসেবে, অভিনেত্রী হিসেবে নয়। ধর্ষণ দৃশ্যটির বিষয়ে অবশ্য মার্লন আগে থেকেই জানতেন। আমি চেয়েছিলাম মারিয়া যেন নিজেকে যথার্থ অর্থেই ধর্ষিতা মনে করেন। এর জন্য আমি নিজেকে দোষী মনে করি। তবে এর জন্য আমার কোনও অনুশোচনা নেই। কারণ আমি চেয়েছিলাম মারিয়া অভিনয় না করে বাস্তবে ধর্ষিতার কষ্ট অনুভব করুক। হয়তো সে সময় আমি ছবিটি নিয়ে প্রচণ্ড খামখেয়ালিপনা করেছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy