কুলভূষণ যাদব।—ফাইল চিত্র।
আশা জাগিয়েছিল করতারপুর করিডর।আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন,এ বার ভারত-পাক সম্পর্কে কিছুটা উন্নতি হলেও হতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পুলওয়ামার বিস্ফোরণ সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলেছে। জঙ্গি হামলা নিয়ে ইতিমধ্যেই নতুন করে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। সেই দ্বন্দ্বে এবার নয়া সংযোজন কুলভূষণ মামলা। আগামী সপ্তাহে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার শুনানি। সেই উপলক্ষে শুক্রবার দ্য হেগের উদ্দেশে রওনা দিল পাক আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল।
আগামী সপ্তাহে, ১৮ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আদালতে কুলভূষণ মামলার শুনানি চলবে। সেখানে পাকিস্তানি আইনজীবীদের প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ার মনসুর। পাক বিদেশ দফতরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা মহম্মদ ফয়জল। ভারতের হয়ে সেখানে সওয়াল করবেন হরিশ সালভে। দুপক্ষের সওয়াল জবাব শেষ হলে, সবদিক খতিয়ে দেখে রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক আদালত।
আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারপতি যা রায় দেবেন, তা মেনে নেওয়া হবে বলে সে দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছে পাক সরকার। তবে ভারতের যুক্তি কানে তুলতে নারাজ তারা। সংবাদপত্র‘ডন’-কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ইসলামাবাদের এক আধিকারিক দাবি করেন, ‘‘উপযুক্ত প্রমাণপত্র নিয়ে প্রস্তুত আমরা। যার মধ্যে রয়েছে একটি বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট। কমান্ডার কুলভূষণ যাদবের কাছ থেকে সেটি উদ্ধার হয়েছে। তবে মুসলিম নামে ওই পাসপোর্টটি তৈরি হয়।’’ইরান থেকে কুলভূষণ যাদবকে গ্রেফতার করা হয় বলে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ভারত। তবে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পাক সরকার। তাদের দাবি, ‘‘ইরানের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে ইরানকে টেনে আনছে ভারত। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।’’
আরও পড়ুন: কবে, কোথায়, কী ভাবে প্রত্যাঘাত, সিদ্ধান্ত নিক সেনা, পূর্ণ ছাড়পত্র: ঘোষণা মোদীর
কুলভূষণ যাদবকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ভারতের তরফে কী কী প্রমাণ তুলে ধরা হবে, তা নিয়ে দিল্লির তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি। বিদেশ দফতরের মুখপাত্র রবিশ কুমার বৃহস্পতিবার জানান, ‘‘১৮ ফেব্রুয়ারি সওয়াল-জবাব শুরু হচ্ছে। তার জন্য প্রস্তুত আমরা। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন, তাই এখনই তা নিয়ে কিছু বলা উচিত হবে না। যা বলার আদালতেই বলব আমরা।’’
গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল পাক সামরিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল কুলভূষণকে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, কুলভূষণ আদতে ভারতীয় গুপ্তচর। ইরান থেকে গোপনে পাকিস্তানে ঢুকেছিলেন। তাই ২০১৬-র ৩ মার্চ গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। দিল্লির তরফে অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় নৌবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের ব্যবসার প্রয়োজনে ইরানে গিয়েছিলেন কুলভূষণ। সেই সময় আইএসআই তাঁকে অপহরণ করে বলে পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামার পরেও মাসুদ আজহারকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’ বলতে রাজি হল না চিন
কুলভূষণের শাস্তি মকুব ও তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের তরফে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয় পাকিস্তানকে। কিন্তু সে দেশের সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি কুলভূষণকে। তার পরই ২০১৭ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয় ভারত। যার পর মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে না বলে নির্দেশ দেয় আদালত।
(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy