—ফাইল চিত্র।
গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশের দিকে পাড়ি দিতেই বদলে গিয়েছে কলকাতার আকাশ। হিমেল হাওয়ার স্বস্তি ফিরেছে এ রাজ্যে। কিন্তু ফাঁপরে পড়েছেন চট্টগ্রামের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া পাইলটেরা। গভীর নিম্নচাপের জেরে আচমকা গোলার মতো বজ্রগর্ভ মেঘ চলে আসছে বিমানের সামনে। বাড়ছে বিপদ। আশঙ্কা, সেই বিপদ এড়াতে গিয়ে হয়তো আরও বড় বিপদের মুখে পড়তে পারেন বিমান চালকেরা।
শনিবার গভীর রাতে এমনই এক বিপদের আশঙ্কা টের পেয়েছিলেন কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের অফিসারেরা। তাঁরা তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করাতেই শেষমেশ দুর্ঘটনা এড়িয়েছে মাঝ আকাশে থাকা দু’টি বিমান। আপাতত সেই রুট এড়িয়ে যেতে বলা হচ্ছে বিমানগুলিকে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকেই বাংলাদেশের উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ। তার ফলে ওই এলাকার বাতাস উত্তাল হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশ থেকে যে বিমানগুলি পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ, পূর্ব আমেরিকা উড়ে যায়, তারা মূলত ওই এলাকা দিয়েই উড়ে যায়। এই পথে যেতে গিয়েই শনিবার গভীর রাতে বিপত্তি বাধিয়েছিল কেনিয়ার একটি বিমান।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ভিয়েতনামের হ্যানয় থেকে কেনিয়ার নাইরোবিগামী ওই বিমানটি চট্টগ্রামের আকাশে ৩৬ হাজার ফুট উপরে ছিল। তার সামনে আচমকা চলে আসে বজ্রগর্ভ এক মেঘ। তাকে পাশ কাটাতে, নিজের আসল রুট ছেড়ে বিমানটি বাঁয়ে সমুদ্রের দিকে যেতে শুরু করে।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেনিয়ার বিমান চট্টগ্রামের আকাশ ছেড়ে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে সমুদ্রের কাছে চলে যায়। এই সময়ে বিমানটির থাকার কথা ছিল বাংলাদেশের ঢাকা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অধীনে। কিন্তু, কলকাতায় বসে এক বিস্তীর্ণ এলাকার উপরে নজরদারি চালান এই শহরের এটিসি অফিসারেরা। কেনিয়ার বিমানটি যে এ ভাবে রুট ছেড়ে দক্ষিণে চলে যাচ্ছে, তা প্রথম নজরে আসে কলকাতারই। এ শহরের এটিসি অফিসারেরা দেখেন, ৩৬ হাজার ফুট উপর দিয়ে গিয়ে কেনিয়ার বিমানটির যেখানে পৌঁছনোর কথা ছিল, আকাশের ৩৬ হাজার ফুট উপরে সেখান দিয়েই তখন তাই এয়ারওয়েজের একটি বিমান উড়ে আসছে। এই বিমানটি ব্যাঙ্কক থেকে লন্ডন যাচ্ছিল। বজ্রগর্ভ মেঘ এড়াতে অন্য এক বড় বিপদের দিকে যে তিনি ছুটে চলেছেন, সে হুঁশ ছিল না কেনিয়ার পাইলটের।
বিপদ বুঝে কলকাতা থেকে যোগাযোগ করা হয় কেনিয়ার বিমানটির পাইলটের সঙ্গে। তাঁকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায় নামিয়ে আনা হয়। তত ক্ষণে বজ্রগর্ভ মেঘ এড়িয়ে গিয়েছেন সেই পাইলট। সেখান থেকে মুখ ঘুরিয়ে তাঁকে সরাসরি নাগপুরের রুটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নির্বিঘ্নে নাগপুর পৌঁছে যান তিনি।
কলকাতা বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) বরুণকুমার সরকার এ দিন বলেন, ‘‘বজ্রগর্ভ মেঘ এড়াতে গিয়ে এ ভাবে একটি বিমান অন্য বিমানের ঘাড়ের উপরে চলে এসে যাতে দুর্ঘটনা না-ঘটে তার জন্য আমাদের অফিসারদের প্রচণ্ড সতর্ক থাকতে হয়।’’ অনেক সময়ে বিমানকে নিজের রুট থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সরে যেতে হয় বলেও তিনি জানান।
আবহাওয়া দফতর ও বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গন্তব্যে রওনা হওয়ার আগেই আবহাওয়ার হাল হকিকৎ জেনে নেন পাইলট। সেই মতো রুট পরিবর্তন করেন। উদ্দেশ্য, গোলার মতো বজ্রগর্ভ মেঘগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া। কারণ, সেই মেঘের মধ্যে ঢুকলে বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। তা হলে কেনিয়ার পাইলট এমন বিপদের মুখে পড়লেন কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানিয়েছেন, অনেক সময়ে আকাশে ৩৫ হাজার ফুট উপরেও আগাম খবর না দিয়ে সেই বজ্রগর্ভ মেঘ আচমকা হাজির হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়ে থাকতে পারে। এই ধরনের এক-একটি মেঘ ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে বলেও তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy