মারভিয়া মালিক। পাকিস্তানের প্রথম রূপান্তরকামী সংবাদ উপস্থাপক
এত দিন সবাই তাঁর দিকে আড় চোখে তাকাতেন। তাঁর আড়ালে বা সামনে কানাঘুষো কথা বলতেন। চলন-বলন নকল করে হাসিঠাট্টা করতেন। এককথায় তিনি ছিলেন অন্যদের কাছে মজার খোরাক!
আর আজ, তাঁকে দেখার জন্যই টিভির সামনে বসে পড়ছেন ওঁরা। তাঁকে দেখছেন, শুনছেন এবং বিস্মিত হচ্ছেন! তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করার বদলে শুভেচ্ছা বার্তায় ভরিয়ে দিচ্ছেন তাঁর ফোন-কল লিস্ট। রূপান্তরকামী হিসাবে ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন তিনি। পাকিস্তানের প্রথম রূপান্তরকামী সংবাদ উপস্থাপক মারভিয়া মালিক।
পাকিস্তানের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল কোহিনুর নিউজে শনিবার প্রথম তাঁর শো সম্প্রচারিত হয়। আর তার পর থেকেই যেন আচমকা অনেকটাই বদলে গিয়েছে তাঁর চারপাশ। ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাঁর শো।
আরও পড়ুন: ফিরিয়ে দে চোখ, টেনে চড় যুবককে
এত কিছুর মধ্যে ২১ বছরের মারভিয়া কী বলছেন?
তাঁর বার বারই মনে পড়ছে শৈশব-কৈশোরের সেই সব দিনগুলোর কথা। রূপান্তরকামী হওয়ার জন্য প্রথম আঘাত অবশ্য তাঁকে সমাজ দেয়নি। দিয়েছিল তাঁরই নিজের পরিবার। পরিবারে কেউই তাঁকে কোনওদিন মেনে নিতে পারেননি। আর যখন তিনি দশম শ্রেণিতে পড়তেন, বাড়ি থেকেই বার করে দেওয়া হয় তাঁকে। অনেক কাতুতি-মিনতি করার পর একটা ছোট্ট সেলুনে কাজ পান। তা দিয়েই খুব কষ্টে দিন গুজরান করতেন। পরে টাকা জমিয়ে কলেজে ভর্তি হন। নিজের চেষ্টা ও অদম্য মনোবলে হয়তো নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন মারভিয়া। তিনি পাকিস্তান ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল ফ্যাশন শো-এ অংশ নেওয়া প্রথম রূপান্তরকামী মডেলও। কিন্তু তাঁর কাহিনি রাস্তায়, ট্রেনে ভিক্ষা করতে দেখা বৃহন্নলাদের থেকে আলাদা কিছু নয়। আলাদা নয় সেই সমস্ত রূপান্তরকামীদের থেকেও, যাঁদেরকে জোর করে যৌন ব্যবসায় নামানো হয়। চড়া মেকআক নিয়ে রাত গড়ালেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। জানান মারভিয়া।
দেখুন ভিডিও: মারভিয়া মালিক
২০০৯ সালে পাকিস্তানের শীর্ষ আদালত রূপান্তরকামীদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা বলে। ২০১৭ সালে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ ক্যাটেগরিতে প্রথম পাসপোর্ট ইস্যু হয় পাকিস্তানে। গত বছর থেকে আদমসুমারিতেও জায়গা করে নিয়েছেন রূপান্তরকামীরা। এবং চলতি মাসের প্রথমেই রূপান্তরকামীদের সুরক্ষায় বিল এনেছে সেনেট। এই বিল পাশ হলে আর কোনও রূপান্তরকামীকেই নিজেদের লিঙ্গ যাচাই করার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা দিতে হবে না। কোনওরকম হেনস্থা পোহাতে হবে না।
ফ্যাশন শো-এ মারভিয়া
পাক সরকারের এই পদক্ষেপে খুশি মারভিয়ারা। নিউজ উপস্থাপক হয়ে শুভেচ্ছাবার্তা পাওয়ার পর তাঁর মনে হচ্ছে, রূপান্তরকামী মানুষদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার সরকারি চেষ্টা অনেকটাই সফল।
কিন্তু বিল এনে আইন করে পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলে ফেলা সম্ভব? তা কখনই সম্ভব নয়, জানান মারভিয়া। ‘‘ঘর থেকেই শুরু করতে হবে এই বদল। প্রত্যেক বাবা-মাকে বোঝাতে হবে, সন্তান যদি রূপান্তরকামী হয়, তাতে লজ্জার কিছু নেই। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির লোকেরাই তাঁকে পরিত্যাগ করে। আর এর পর আমাদের সামনে ভিক্ষাবৃত্তি, নাচ দেখানো এবং যৌন ব্যবসা, এই উপায়গুলোই পড়ে থাকে মাত্র,’’—বলেন মারভিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy