আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি রয়টার্স।
বছর ৬০ আগের এক দিন। ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২। তার মাস কয়েক আগে ইউরি গ্যাগারিনের সৌজন্যে মহাকাশ ‘জয়’ করেছে সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন। মহাকাশে পা ফেলতে অত্যন্ত উদ্গ্রীব আমেরিকাও। সেপ্টেম্বরের সেই দিনে হিউস্টনের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, ‘‘আমরা চাঁদে যেতে চাই। আমরা এই দশকেই চাঁদে যেতে চাই। এই জন্য নয় যে, কাজটা সহজ, তাই। কাজটা করতে চাই, কারণ কাজটা কঠিন। এই চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করলাম এবং জানি, এই চ্যালেঞ্জ আমরা জিতবই।’’ ১৯৬৯-এর ১৬ জুলাই, চাঁদে প্রথম পা রাখে মানুষ।
কেনেডির সেই যুগান্তকারী বক্তৃতার ষাট বছর পূর্তিতে বর্তমান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বস্টনের জন এফ কেনেডি লাইব্রেরিতে গত ১২ই সেপ্টেম্বর একটি বক্তৃতা দিলেন। তাঁর বক্তব্যেরও মূল বিষয় ছিল ‘মুনশট’। কিন্তু এই ‘মুনশট’-এর সঙ্গে মহাকাশ অভিযানের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই ।
একটি কঠিন, প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য যে পরিকল্পনা, সেটা বোঝানোর জন্য ‘মুনশট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। গত শতকের ষাটের দশকে চন্দ্রাভিযান যেমন একটি ‘প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য’ ছিল, এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য চূড়ান্ত গবেষণা, প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয়ের প্রয়োজন ছিল, তেমনই এখন পৃথিবী জুড়ে ‘প্রায় অসম্ভব’ নানা লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চলছে। মানব, তথা প্রাণীবিশ্বের উন্নতিসাধনই সেই সব গবেষণার লক্ষ্য। এ রকমই এক কর্মকাণ্ডের কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেন উল্লেখ করেন সে দিন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘অপারেশন মুনশট’-এর লক্ষ্য ক্যানসার নিরাময়। ২০১৬ সালে, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন, এই ‘অপারেশন’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালে মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর বড় ছেলে। তাই ক্যানসারকে হারানোর জন্য যে কোনও গবেষণাই বাইডেনের কাছে একটা ব্যাক্তিগত লড়াই। এই ‘মুনশট’-এ লক্ষ্য একটাই— হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাকেন্দ্র এবং বায়োটেকনোলোজি সংস্থাগুলি এক যোগে কাজ করে যেন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় এনে দিতে।
১২ই সেপ্টেম্বরের সেই বক্তৃতায় বাইডেন বলেন, ‘‘দেশকে ক্যানসারমুক্ত করা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য— আগামী পঁচিশ বছরের মধ্যে আমেরিকায় ক্যানসারজনিত মৃত্যু যেন অর্ধেক করা যায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্যানসার রাজনৈতিক দল, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ কিছু বোঝে না। কিন্তু প্রতিরোধমূলক ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের পরিষেবা আর প্রথম দিকে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, রোগীর আর্থিক অবস্থা ও অবস্থান নির্ভর। এই মুহূর্তে এই পরিষেবা আমেরিকায় সবাই সমানভাবে পান না। তাই ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে এক মাটিতে পা রেখে দাঁড়াতে হবে। এই লড়াইয়ে একটা সাম্য আনতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, সর্বস্তরের মানুষ যেন এই পরিষেবা পান। উন্নততর প্রযুক্তির ব্যবহার করার ফলে রোগনির্ণয়ের কাজটি যাতে সহজলভ্য হয়, সে দিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।’’ ক্যানসার রোগী ও তাঁর পরিবারের কাছে চিকিৎসার পথ যাতে মসৃণ থাকে, তার উপরে জোর দিয়েছেন বাইডেন। এই সব বিষয়গুলি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে একটি ‘ক্যানসার ক্যাবিনেট’ তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। তা ছাড়া, গবেষণা খাতে ওষুধপ্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিতে প্রচুর লগ্নির জন্য ‘এগ্জ়িকিউটিভ অর্ডার’ও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
আমেরিকা, তথা গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষ, মহাকাশ যাঁদের কাছে অনেক দূরের, অথচ যাঁদের কাছ থেকে ক্যানসারের কাছে হেরে যাওয়া দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যাঁরা সব সময়েই এই রোগের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, তাঁদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ‘মুনশট’ আশার আলো দেখাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy